এইচ.এম শহিদুল ইসলাম,গাজীপুর।।
সাবেক মন্ত্রী, স্বাধীনতা ফুটবল দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও ভাষা সৈনিক সামছুল হকের ২৪তম মৃত্যু বার্ষিকী আজ । ১৯৯৮ সালের ১৬ জুন আজকের এই দিনে ঢাকার পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন।
এ উপলক্ষে তার পরিবারের উদ্যোগে গ্রামের বাড়ী গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার ঠেঙ্গারবান্দে কোরআন খতম ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মন্ত্রীসভার সদস্য সামসুল হক ১৯২৭ সালের ১লা মার্চ তৎকালীন ঢাকা জেলার (বর্তমানে গাজীপুর) কালিয়াকৈর থানাধিন ঠেঙ্গারবান্ধ গ্রামের ঐতিহ্যবাহী মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আলহাজ্ব মরহুম ওসমান গনী (প্রেসিডেন্ট) ও মাতা মরহুম হায়তন নেছা। তিনি বর্তমান সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এ্যাড. আ.ক.ম মোজাম্মেল হকের মামাতো ভাই। তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৫২-৫৩ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্র সংসদের ভিপি পদে নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে। তিনি ৫২‘র ঐতিহাসিক রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে জড়িত হওয়ার কারণে গ্রেপ্তার হন এবং কারাবরণ করেন। তিনি ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সহ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ছাত্রজীবন সমাপ্ত হলে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ১৯৫৪ সালে কালিয়াকৈর জয়দেবপুর থেকে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে তিনি প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৫৬ সালে ঢাকা সদর উত্তর মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ১৯৫৮ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। একই সময়ে তিনি নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলীম লীগের যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, ১৯৬২ সালে কুখ্যাত হামিদুর রহমান কমিশনের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন।
১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় গ্রেফতার হন এবং ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত কারাগারে বন্দী থাকেন। ১৯৬৯ সালের গণ আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে শ্রীপুর, জয়দেবপুর, কালিয়াকৈর আসন থেকে বিপুল ভোটে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালের ১৯শে মার্চের জয়দেবপুর সংগ্রাম পরিষদের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ৭১ সালের ৩রা মে তারা কলকাতায় গমন করেন এবং অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে সাক্ষাৎ করেন।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে তিনি বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭৩ সালে পুনরায় জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সফল স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন সমবায় এবং পাট মন্ত্রী হিসেবে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ সালের ৫ ও ৬ সেপ্টেম্বর আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর সাথে জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে যোগদান করেন । পরে তিনি সোভিয়েত রাশিয়ায় বাংলাদেশের সফল রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এ সংগঠক ১৯৯৮ সালে ১৬ জুন ঢাকা পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। ২৪তম মৃত্যু বার্ষিকীতে মরহুমের পরিবারের সদস্যগণ দেশবাসির নিকট দোয়া চেয়েছেন।