নিজস্ব প্রতিবেদক:
পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলায় ‘‘১৬৫নং সরকারী দক্ষিণ পূর্ব পশারীবুনিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়” কাগজে-কলমে চলমান রয়েছে কিন্তু সরেজমিনে স্কুল নেই অভিযোগ সূত্রে সিআইডি তদন্ত করেন। গত সোমাবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১ ঘটিকার সময় স্কুল সরেজমিনে উপস্থিত হয়ে, দায়িত্বরত জেলা সিআইডির এসআই সোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে স্থানীয় জনতাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তাঁরা। এ সময়ে সরেজমিনে স্কুলের সন্ধান না পেঁয়ে, এলাকা ঘুরে সিআইডি কর্মকর্তারা স্থানীয় জনগণের কাছে সর্বসত্য বিষয়টি জানার চেষ্টা করেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন কালে এলাকার উপস্থিত- গরিব দু:খি মানুষের বন্ধু ও সমাজসেবক আব্দুস্ সালাম, ৯নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার বাদল মিয়া, সাংবাদিক আরিফ বিল্লাহ্ ডালিম, রাজায়ালি জোমাদ্দারসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিতকালে তাঁদের সাথেও কথা বলে বিভিন্ন ভাবে জানার চেষ্টা করেন জেলা সিআইডির গুরুত্বপূর্ণ একটি টিম।
এ সময়ে এলাকার উপস্থিত গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ আব্দুস্ সালাম মিয়া বলেন, স্কুল জালিয়াতি চক্রের মূলহোতা সুভাষ চন্দ্র হালদার নামের এক ব্যক্তি। তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য, পিরোজপুর বিজ্ঞ আদালতে একটি জালিয়াতি মামলা প্রদান করেন বাদী শাহ আলম। এবিষয়ে আমিও তৎপর রয়েছি জালিয়াতি চক্রকে আইনের আওতায় আনার জন্য। তিনি বলেন, যারা সরকারী কাজে দুর্নীতি প্রতারণা করেন। তাঁরা এদেশের সঠিক নাগরিক না। তাঁরা মূলত সরকার বিরোধী। একসময়ে এ প্রতিষ্ঠানটি আমার নিজ হাতে গড়া ছিলো। সে প্রতিষ্ঠানটি প্রতারক সুভাষ চন্দ্র হালদার জালিয়াতির কারণে তাঁর মূখশ উম্মচন করতে সক্ষম হয়েছি। এবং উক্ত বিষয়টি সংবাদ সম্মেলন করে একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছি। তিনি আরও বলেন, গত সপ্তাহ দুই এক আগে প্রতিষ্ঠানের জায়াগা খুঁজে পায়না, তাই এলাকার গরিব নীরহ বৃদ্ধ হনুফা বেগমের জমি দখল করে, গাছপালা বিক্রি করে। স্কুল নির্মাণের জন্য বেপরোয়া হয়ে পড়েন। তাই এদের সহযোগীতায় স্থানীয় এলাকার জামাত-শিবির পন্থি সন্ত্রাসী চক্র হালিম গংরা সঙ্গবদ্ধ হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। কাজেই এধরনের চিহ্নিত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা দরকার বলে মনে করেন তিনি।
অভিযোগ দাতা ও মামলার বাদী শাহ্ আলম মিয়া বলেন, প্রথমে আমি আমার নিজেস্ব ভুমিতে ওই স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করি। এরিমধ্যে সুভাষ নামের একটি চক্র স্কুলের মূল কাগজ পত্রাদি জালিয়াতি করে। আমাদের প্রতিষ্ঠানটি তাঁদের নামে নেওয়ার জন্য অনেক প্রক্রিয়া অবলম্বন করছেন। এবং তিনি কাগজে-কলমে স্কুল করে গোপনে অবৈধ ভাবে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে। লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন প্রতারক সুভাষ। তিনি আরও বলেন, ওই স্কুলের প্রথম থেকে আমি প্রধান শিক্ষক হিসেবে ছিলাম। যা আমার সম্পূর্ণ কাগজ পত্রাদি এখনও সরকারী দপ্তরে বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু কিভাবে সম্ভব এই জালিয়াতি। তা তিনি এখনো বুঝে উঠতে পারছেননা বলে জানান। শাহ্ আলম আরও বলেন, ওই স্কুল ফান্ডের নামে আসা যাবতীয় সরকারী তহবীল লক্ষ লক্ষ টাকা লুটপাট করেন সুভাষ। যার প্রেক্ষিতে আমি সঠিক আইনি ব্যবস্থা পাওয়ার জন্য, জেলা বিজ্ঞ আদালতে একটি জালিয়াতি মামলা প্রদান করে থাকি। যার পরিপ্রেক্ষিতে এধরনের তাঁদের বিরুদ্ধে প্রতারণা মূলক মামলা দায়ের করলে, আমাকে তাঁদের অনেক সন্ত্রাসীরা মুঠফোনে প্রাণনাশেরও হুমকি প্রদান করেন বলে জানান তিনি।
এলাকার নীরহ বৃদ্ধ হনুফা বেগম সাংবাদিকদের জানান, আমার নিজের বাগান-বাড়ির গাছ-পালা কেটে বিক্রি করেন সন্ত্রাস আব্দুল হালিম ও আবুল হোসেন। তাঁরা চাচ্ছেন আমার বাগান-বাড়ির মধ্যে জোরপূর্বক স্কুল ঘর নির্মাণ করতে। কিন্তু আমি এলাকার একজন নীরহ গরিব মানুষ। আমি স্কুলের নামে জমি দিবো না, এজন্য তাঁরা আমাকে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে থাকেন। তিনি আরও বলেন, এদের সাথে গোপনে একটি সঙ্গবদ্ধ চক্র কাজ করে যাচ্ছেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে , পিরোজপুর জেলার পুলিশ সুপার কার্যলয়ে হাজির হয়ে, আইনের আশ্রায় চেয়ে ছিলাম। যাহার কারণে উর্ধ্বতন স্যারের নেতৃত্বে; স্থানীয় ভান্ডারিয়া থানার মারফতে পুলিশের আইনের আস্থা পেয়ে থাকি। হনুফা বলেন, আমার নিজের জমি অন্যদেরকে জীবন থাকতে দিবো না। এবিষয়ে আপনাদের একটুমাত্র সহযোগীতা চাচ্ছি। এবং আপনারা আমার অনেক অংশে উপকার করেছেন, যা আমি কখনোই ভুলতে পারবোনা বলে জানান তিনি।
এবিষয়ে পিরোজপুর জেলা সিআইডির এসআই মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমি ‘‘১৬৫নং সরকারী দক্ষিণ পূর্ব পশারীবুনিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়” এর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ হাতে পেঁয়ে, প্রাথমিক ভাবে সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করে থাকি। তবে শুনেছি এ স্কুলের নামে কোন জমি নেই। এবিষয় পিরোজপুর জেলা আদালতে একটি মামলা চলমান রয়েছে। আদালত যে নির্দেশনা দিবে, এসকল তদন্তের উপরে ভিত্তি করে, আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, প্রধান শিক্ষক সীমা গোলদার(৪০) স্বামী সুভাষ চন্দ্র হালদার, সহকারী শিক্ষক রীনা রানী (২৯) পিতা নির্মল চন্দ্র হালদার, উভয় সাং পশারী বুনিয়া, সহকারী শিল্পী আক্তার(৩৬) স্বামী তপু পঞ্চায়েত, সাং আতরখালী ও শাহনাজ বেগম(৩৮) পিতা অজ্ঞাত, সাং রাজপাশা এবং প্রতারক জালিয়াতি চক্রের মূলহোতা সুভাষ চন্দ্র হালদার( ৫০) পিতা মৃত ললিত হালদার ও উপজেলার শিক্ষা অফিসার জালাল উদ্দিন খান, থানা ভান্ডারিয়া, জেলা পিরোজপুর। এদের বিরুদ্ধে সু² জালিয়াতি মামলা চলমান রয়েছে জেলা আদালতে। ওই স্কুলের ভুয়া শিক্ষকরা, ভুয়া নিয়োগ হয়ে, এক কালিন মোট ৫২ লক্ষ টাকা সরকারী টাকা উত্তালন করেন । সুতরাং কাগজে-কলমে স্কুল! স্কুলের নেই কোন নিজেস্ব জমি। স্কুলের নেই কোন স্থানে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ব্যবস্থা। সরকারের চোঁখে ফাঁকি দিয়ে এভাবেই পার করছেন ভুয়ারূপে প্রতিষ্ঠানটি। এবং এদের বিরুদ্ধে জেলার বিজ্ঞ আদালতে জালিয়াতি মামলা প্রদান করাতেও, তাঁরা কোন অংশে থেমে নেই । কাজেই তাঁরা সে ক্ষেত্রে এখনও মাসিক বেতন উত্তালন করে যাচ্ছেন। এবিষয়ে জেলার প্রতিটি দপ্তরে দুর্নীতির অভিযোগ প্রদান করলেও । সরকারী কর্মচারীরা কোন প্রকার আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না। জানাগেছে, মামলার এজাহারে উপজেলার শিক্ষা অফিসার আসামীসহ অনেকে এধরনের দুর্নীতির সাথে যুক্ত রয়েছেন। উপরোক্ত দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরো জোড়ালো ভুমিকায় সরকারের বিভিন্ন প্রকার দপ্তরে লিখিত চিঠি প্রদান করা হয়।