স্টাফ রিপোর্টার,গাইবান্ধা♦♦
গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে গ্যাসের মূল্য-তালিকা প্রদর্শন না করে,সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্যে এলপিজি সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রির অভিযোগ উঠেছে।
দেশে ভোক্তা পর্যায়ে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম ১২ কেজিতে এবার ৩৫ টাকা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। গত মাসে ১২ কেজিতে বেড়েছিল ৪৪ টাকা।
অক্টোবরের জন্য প্রতি ১২ কেজির সিলিন্ডারের দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৪’শ ৫৬ টাকা। সেপ্টেম্বরে দাম ছিল ১ হাজার ৪’শ ২১ টাকা।এলপিজির ১২ কেজি সিলিন্ডার সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় গৃহস্থালির কাজে।
অক্টোবর মাসের প্রথমেই বিইআরসি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নতুন দর ঘোষণা করেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ। সংস্থাটি প্রতি মাসেই এলপিজির দাম নির্ধারণ করে।
বিইআরসির নতুন দর অনুযায়ী, বেসরকারি এলপিজির মূল্য সংযোজন করসহ (মূসক/ভ্যাটসহ) দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি ১’শ ২১ টাকা ৩২ পয়সা,যা গত মাসে ছিল ১’শ ১৮ টাকা ৪৪ পয়সা। এই হিসাবে বিভিন্ন আকারের এলপিজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারিত হবে।
খুচরা পর্যায়ে এই দামে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও তা মানছে না অসাধু ব্যবসায়ীরা।
প্রকারভেদে প্রতিটি ১২ কেজি ওজনের এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ১’শ ৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
পলাশবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অন্তত ১’শ ৫০ থেকে ২’শ টাকা বেশী দামে বিক্রি হচ্ছে বলে ক্রেতা সাধারণের অভিযোগ।
খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি, পাইকারিতেই তাঁদের সরকারি দরের চেয়ে বেশী দামে কিনতে হয়। এ কারণে খুচরায় বেশী দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
উপজেলার বিভিন্ন বাজারে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পৌর শহর থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যায়ে সব ধরনের দোকানেই বিক্রি হচ্ছে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার। মুদি দোকান,তেলের দোকান,চায়ের দোকান,জুতার দোকান,ওষুধের দোকানের সামনে রাখা হয়েছে এসব সিলিন্ডার। তবে বেশীরভাগ খুচরা ব্যবসায়ীরাও জানে না সরকারি নির্ধারিত দাম কত।
দোকানিরা জানান,ডিলারদের কাছ থেকে তারা যে দামে কিনেন,তার থেকে ৪০/৫০ টাকা বেশি দামে ক্রেতার কাছে বিক্রি করেন। তবে খুচরা পর্যায়ে কোনো ব্যবসায়ী তাদের সিলিন্ডার ক্রয়ের রশিদ দেখাতে পারেননি। শহর থেকে গ্রাম পর্যায়ে এসব সিলিন্ডারের দাম আরও বেশী। খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবী,শহর থেকে ভাড়া দিয়ে গ্রামে আনতে হয়। এ জন্য আরেকটু দাম বেড়ে যায়।
ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলায় প্রতি মাসে ১০ হাজারের বেশি এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হয়। সেই হিসাবে গড়ে প্রতি সিলিন্ডারে ১’শ ৫০ টাকা দাম বেশী নিলে গ্রাহকের পকেট থেকে প্রতি মাসে বাড়তি ১৫ লাখ টাকা গচ্চা যাচ্ছে। মূলতঃ এই ১৫ লাখ টাকা বাড়তি লাভ করে এলপি গ্যাসের ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন খুচরা বিক্রেতা বলেন, ‘আমরা কিনি বেশী দামে। সরকারের নির্ধারিত দামে তো আমাদের কাছে বিক্রি করে না, যেই দামে কিনি এর থেকে কিছু লাভ করেই তো বিক্রি করব। সিন্ডিকেট করে দাম বেশী রাখে কোম্পানিগুলো। সরকার কী দাম ঠিক করে দিলো না দিলো, তা নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তারা নিজেদের মতো করেই দাম নির্ধারণ করে।
বাড়তি দামে গ্যাস বিক্রির বিষয়ে ক্ষুব্ধ ক্রেতাদের দাবী, প্রশাসনের নজরদারির অভাবে এভাবে পকেট থেকে বাড়তি টাকা গচ্চা খেতে হচ্ছে ভোক্তা সাধারণের।
পলাশবাড়ী পৌর শহরের বাসিন্দা শাফিউর রহমান বলেন, কোনো জিনিসই সরকারের বেঁধে দেয়া দামে বিক্রি হচ্ছে না। তার মধ্যে সিলিন্ডার গ্যাস একটি। এখন সরকার বিষয়টিতে নজরদারি করলে হয়তো কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসত। সরাসরি ডিলারের কাছ থেকে কিনলেও দাম বেশী রাখে। বেশি দামের বিষয়টি জানতে চাইলে নানা যুক্তি দেখায় ডিলাররা। দেখেন না,সরকার প্রতিমাসে দাম নির্ধারণ করে দিচ্ছে,
এরপর তা বাস্তবায়ন হলো কি হলো না,তা দেখার দায়িত্ব প্রশাসনের না। কিন্তু মাঝে মাঝে বাজারে আসি অনেকটা দায়সারা কাজ করে চলে যায়। নাসরিন আক্তার নামে একজন বলেন,গ্যাস সিলিন্ডার কেনার পর ব্যবসায়ীদের কাছে ক্যাশ মেমো চাইলে তারা দেয়না। উল্টো নানান কথা বলে। প্রশাসনের উচিত এ বিষয়ে নজরদারী জরুরী।
বাড়তি দাম নেয়ার বিষয়ে উপজেলার বসুন্ধরা ও অরিন গ্যাসের ডিলার আল আমিন বলেন, বর্তমানে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহে সংকট হওয়ায়, এতে করে কোম্পানি হতেই বেশী মূল্যে গ্যাস কিনতে হয়। এছাড়াও গ্যাস সিলিন্ডার আনতে কোম্পানিতে গাড়ি পাঠানো হলে তা কয়েকদিন বসিয়ে রাখা হয়। এতে পরিবহণ খরচও বেড়ে যায়। আর এসব কারণে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করতে হয় বেশী দামে। বর্তমানে ডিলার মূল্য ১ হাজার ৫’শ ৫০ টাকা করে ১২ কেজি গ্যাস সিলিন্ডার কিনতে হচ্ছে আর খুচরা ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছে ১ হাজার ৬’শ হতে ১ হাজার ৬’শ ৫০ টাকা দরে।
বিএম এবং টোটাল গ্যাসের ডিলার রায়হান আলী বলেন, আমরা নতুন দামে পাইকারি ১’হাজার ৪’শ ৬০ বিক্রি করি, ক্যাশ মেমো দিচ্ছি,কোনো ডিলার যদি বেশী দাম রাখে এবং ক্যাশ মেমো না দেয় তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক। আর খুচরা বিক্রেতারা বেশী নিলে আমরা কি করবো। আমার দাবী প্রশাসন ডিলারদেরকে নিয়ে বৈঠক করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিক।
পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুল হাসান বলেন, আমরা নিয়মিত বাজার মনিটর করছি,কোন ভোক্তা এখন পর্যন্ত অভিযোগ দেয়নি, কোনো ভোক্তা অভিযোগ করলে আমরা ভোক্তা আইনে ব্যবস্থা নেবো। তারপরও এবিষয় আমরা খোঁজ খোবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।