নিজস্ব প্রতিবেদক:
বেগম রোকেয়া নারীর প্রতি সমাজের নিষ্ঠুর আচরণ, কুসংস্কারে জর্জরিত অশিক্ষায় আবদ্ধ নারীদের জীবনকে অন্ধকার থেকে আলোতে ফিরিয়ে আনতে সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য বেগম রোকেয়ার স্বপ্নের সমাজ এখনও নির্মান হয় নাই বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া।
বৃহস্পতিবার (৯ডিসেম্বর) নয়াপল্টনের জেডএম মিলনায়তনে বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে জাতীয় নারী আন্দোলন আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বেগম রোকেয়া নারী শিক্ষা, নারীর অধিকার আদায়, নারীর ভোটাধিকারের জন্য লড়াই করেছেন আমৃত্যু এবং একসময় তিনি সফল হয়েছেন। তিনি কখনও নারীবাদী সমাজ গঠনের কথা বলেননি। বরং তিনি বলেছেন নারী-পুরুষের সমান মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার কথা।
তিনি আরো বলেন, দেশের এখনও নারী নির্যাতন বন্ধ হয় নাই। এখনও আইন-শৃংখলা রক্ষাকারীর বাহিনীর বিপদগামী সদস্যরা নারীদের ধর্ষণ করছে। সমাজে এখনও নারীকে ভোগ্য পণ্য হিসাবে ভাবা হচ্ছে। এভাবে চলতে পারে না। বেগম রোকেয়া স্বপ্ন পূরনে আমাদের অব্যাহত সংগ্রাম চালাতে হবে।
তিনি বলেন, বেগম রোকেয়া শুধুমাত্র নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করেননি, একাধারে তিনি ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারকও। তিনি মেহনতি মানুষের কথা বলতেন, বৈষম্যের শিকার মানুষের কথা বলতেন। তিনি শুধু নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথাই বলেননি, বাস্তবেও তার প্রয়োগ ঘটিয়েছেন।
বাংলাদেশ ন্যাপ সমাজ কল্যাণ সম্পাদক ও জাতীয় নারী আন্দোলনের সমন্বয়কারী মিতা রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখেন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এনডিপি মহাসচিব মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা, আলোচনায় অংশগ্রহন করে নারী নেত্রী কবি রোকসানা আমিন সুরমা, জাগো নারী ফাউন্ডেশনের সভাপতি রেহানা আক্তার রানু, ন্যাপ ভাইস চেয়ারম্যান স্বপন কুমার সাহা, সংগঠনের যুগ্ম সমন্বয়কারী শাহনাজ আক্তার, শিউলী সুলতানা, ফাতেমা আক্তার মনি, রিভা আক্তার, প্রমুখ।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে এনডিপি মহাসচিব মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা বলেন, বেগম রোকেয়া তার লিখনীর মাধ্যমেও নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন বারংবার। বেগম রোকেয়া বিশ্বাস করতেন একমাত্র শিক্ষার আলোই পারে নারীদের এই অন্ধকার থেকে আলোতে টেনে আনতে, নারীদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে।
নারী নেত্রী রোকসানা আমিন সুরমা বলেন, বেগম রোকেয়া তার লেখালেখির মাধ্যমে তিনি নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও নারী সমতার কথা তুলে ধরার চেষ্টা করতেন। তার লেখনী যেন ধারালো অস্ত্র। একেকটা লেখায় প্রকাশ পেত অবরোধবাসিনীদের আর্তচিৎকার। তিনি শুধু সমাজ পরিবর্তন করেই ক্ষান্ত হননি, এর বাস্তবায়নও করেছেন।
সভাপতির বক্তব্যে মিতা রহমান বলেন, বেগম রোকেয়ার ছোটবেলা পর্দার আড়ালে কাটলেও তিনি নারী মুক্তি নিয়ে ভেবেছেন সবসময়, একই সঙ্গে তিনি ছিলেন নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। বাঙালি জাতি আজীবন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে বাঙালি মুসলিম নারী জাগরণের কারিগর বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনকে। নারীকে নারী হিসেবে নয়, বিবেচনা করতে হবে মানুষ হিসেবে। মেহনতি মানুষদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় তিনি ছিলেন সর্বদা সোচ্চার, তবেই বাস্তবায়ন হবে নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার স্বপ্নের দেশ।