এস.এম জহিরুল ইসলাম∫∫
বরিশাল জেলার মুলাদী উপজেলার বিশিষ্ট সমাজসেবক শিক্ষানুরাগী প্রয়াত লুৎফর রহমান বাঘা ছিলেন সমাজের একজন আদর্শ মানুষ। একজন সামাজিক আদর্শ শিক্ষক। তিনি যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন নানাভাবে সু-শিক্ষা দিয়েছেন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে। তিনি যতদিন রাজনীতি করেছেন ততদিনই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতার সাথে রাজনীতি করেছেন। যুক্ত ছিলেন খন্ডকালীন শিক্ষকতার সাথে। তিনি চরকালেখান নেছারিয়া সিনিয়র মাদ্রাসায় বাংলা বিভাগের প্রভাষকের দায়িত্ব পালন করেছেন। যতদিন তিনি শিক্ষকতার সাথেও জড়িত ছিলেন, ততদিনই শিক্ষার্থীদেরকে শিখিয়েছেন আদর্শ মানুষ হওয়ার গল্প। তিনি সব সময় বলতেন, একজন ভাল মানুষ হতে হলে শুধু একাডেমি শিক্ষা নয় থাকতে হবে মানবিক গুণাবলী, সামাজিক ও নৈতিক শিক্ষা। এই মহান মানুষটি আমাদের ছেড়ে চলে যান গত ২৩ এপ্রিল ২০২৪ সালের দুপুর ৩.৪৫ টায়। তাকে হারিয়ে মুলাদীবাসী হারিয়েছেন একজন যোগ্য মানবিক ও সামাজিক অভিভাবককে। মৃত্যুকালে তিনি তার সুযোগ্য স্ত্রী ও ১ ছেলে রেখে গেছেন। তার সুযাগ্য সন্তান তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী রাসেল বর্তমানে ঢাকা ওয়াসায় উপ-প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। লুৎফর রহমান বাঘার সহধর্মীনী সালমা বেগম মুলাদী পৌরসভার নারী কাউন্সিলর ও বিআরডিবির মহিলা চেয়ারম্যান হিসেবে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রয়াত লুৎফর রহমান বাঘা কর্মজীবনে দীর্ঘদিন কাব্য-প্রবাসে কর্মরত ছিলেন। দেশে অবস্থানকালে তিনি মুলাদী বন্দরে ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন ক্রীড়ানুরাগী। এলাকার ক্রীড়াঙ্গনে তার নামটি সব সময় উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। লুৎফর রহমান বাঘা ২০১৪ সালে হজ্বব্রত পালন করে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ধর্মীয় অনুশাসনে জীবন যাপন করেছেন। অন্যকেই ধর্মীয় বিধানমত চলার অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়েও মুলাদীকে রাজাকারমুক্ত করতে তার সাহসীকতা ছিল প্রশংসনীয়। জীবন বাজী রেখে দেশ মাতৃকার টানে তিনি যুদ্ধ করেছেন একটি নাল সবুজের পতাকা আর একটি স্বাধীন মানচিত্রের জন্য। বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব লুৎফর রহমান বাঘা ছিলেন একজন রাজনৈতিকক সচেতন মানুষ। তিনি রাজনৈতিক জীবনে ১৯৯১ সালে মুলাদী উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। ঐ আহ্বায়ক কমিটির মোট সদস্য সংখ্যা ছিল ৯ জন। এডভোকেট আব্দুল বারী ও আব্দুল মালেক রাড়ীর নেতৃত্বাধীন মুলাদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন তিনি। বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব লুৎফর রহমান বাঘা ২০১০ সাল থেকে রাজনীতি থেকে দুরে ছিলেন। পারিবারিক ও সামাজিক জীবন ও ধর্ম কর্ম নিয়ে সময় কাটাতেন। নতুন প্রজন্মকে সৎ ও ভাল মানুষ হওয়ার পরামর্শ দিতেন। তিনি দীর্ঘ ১২ বছর মুলাদী বিআরডিবির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে দরিদ্র বিমোচন ও কর্ম সংস্থানে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছেন। আলহাজ্ব লুৎফর রহমান বাঘা ছিলেন একজন নির্লোভ সাদামনের মানুষ। কারো সাথে কখনও কোন বিষয়ে বিরোধে জড়াতেন না। হাটার সময়ে রাস্তার এক পাশ দিয়ে মাথা নীচু করে হাটতেন। খেলাধুলা ছিল তার নেশা। যেখানে খেলা, সেখানেই ছিল লুৎফুর রহমান বাঘার উপস্থিতি। তাকে দেখেছি সব সময় রেফারীর ভূমিকা পালন করতে। কল্যাণমুখী কাজ ছিল তার জীবনের ব্রত। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি জনকল্যাণমুখী কাজ করে গেছেন।
Tags: বীর