এই মহান অলির সান্নিধ্যে শতশত মানুষ খুঁজে পেয়েছেন সিরাতুল মুস্তাকিমের পথ। লাখো লাখো মানুষের মুর্দা দিল জিন্দা হয়ে আল্লাহ আল্লাহ জিকির জারি হয়েছে। পথভোলা মানুষ পেয়েছে সঠিক পথের সন্ধ্যান। শত শত আল্লঅহর অলির জন্ম হয়েছে খাজা বাবা এনায়েরপুরী (রহ.)এর নেজবতে।
অধ্যাত্মিক ও বিশ্ব শান্তির প্রাণকেন্দ্র সিরাজগঞ্জ জেলার এনায়েতপুর গ্রামে চিরনিদ্রায় শায়িত এই মহান অলির এনায়েতপুর পাক দরবার শরীফ আদর্শিক ও কামেল মানুষ বানানোর অপ্রাতিষ্ঠানিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো লক্ষ লক্ষ পথহারা মানুষের আগমন ঘটে আল্লাহ প্রাপ্তির বাসনা নিয়ে। দয়াল নবী রাসুল (সা.) ও তাঁর আহলে বায়াতের প্রেমের এক মহাসমুদ্র খাজা বাবা এনায়েতপুরী (রহ.)। এখান থেকেই হাজার হাজার মানুষ সিনা-ব-সিনা জ্ঞান শিক্ষা নিয়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। তাঁর হাত ধরে শত-শত পীর-আউলিয়া ও কামেল-মোকাম্মেলের জন্ম হয়েছে। অনুসারীদের সিংহভাগ বাংলা-ভারতের হলেও বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন কয়েক কোটি ভক্ত-আশেক।
খাজা মুহম্মদ ইউনুস আলীর জন্ম ১১ জ্বিলহজ্জ ১৩০৩ হিজরিতে (১০ সেপ্টেম্বর ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দ)। তাঁর পূর্বপুরুষগণ এসেছেন ইয়েমেন থেকে। তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলাম প্রচারের জন্যই তাদের আগমন ঘটে। খাজা এনায়েতপুরীর বাবা শাহ আব্দুল করিম ও মা তহমিনা বেগমের ২ ছেলে এবং ১ মেয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন জেষ্ঠ্য। তার ছোট ভাই খাজা মুহম্মদ ইদ্রিসও ছিলেন একজন উচ্চ দরজার অলি। তিনি পিতার দিক দিয়ে ফাতেমী বংশের এবং মায়ের দিক দিয়ে হজরত আবু বকর ছিদ্দিক (রা.)’র বংশের।
খুবই অল্প বয়েসে মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই পিতৃবিয়োগ হওয়ায় বিদূষী মাতার তত্ত্বাবধানে অপ্রাতিষ্ঠাতিকভাবে পৈতৃক পাঠাগারে সংরক্ষিত কুরআন-হাদিস-ফেকাহ ও অন্যান্য কিতাবাদি অধ্যয়নসহ আরবী ও ফারসি ভাষার বিশেষ জ্ঞান লাভ করেন তিনি। অল্প বয়সেই ছোটখাটো কাজ করে সংসার পরিচালনা করতে মাকে সাহায্য করতেন। মা টুপি সেলাই, সবজি বাগান ও এলাকার শিক্ষার্থীদের নিজগৃহে পাঠদান করে সংসার চালাতেন। রাসুল ৯সা.) এর সুন্নতের তাবেদার মাত্র ১১ বছর বয়সে রংপুর, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, নদীয় ও মালদাহসহ নানান জায়গায় ব্যবসায়িক সফরে বেরিয়ে পড়েন। এক পবিত্র রজনিতে মা স্বপ্নে দেখতে পেলেন, ‘দক্ষিণ আকশে এক উজ্জ্বল আলো উদিত হচ্ছে’। এ স্বপ্নের কিছুদিন পর বুযুর্গ মা সকালে শুনতে পেলেন, ভারতের প্রখ্যাত পীর, আওলাদে রাসুল (সা.) রাসূলনোমা হযরত মাওলানা শাহসূফী সৈয়দ ফতেহ আলী ওয়াসী (রহ.) অন্যতম বিশিষ্ট খলিফা আওলাদে রাসুল (সা.), কুতুবুল এরশাদ হযরত মাওলানা শাহসূফী সৈয়দ ওয়াজেদ আলী মেহেদিবাগী (রহ.) শাহজাদপুরের চিনা ধুকুরিয়ায় ইসলাম ও রাসুল (সা.) এর সত্য তরিকার প্রচারে আগমন করেছেন। সংবাদটি শোনা মাত্রই পুত্র ইউনুছ আলীকে এলাকার মুরব্বিদের সাথে সৈয়দ ওয়াজেদ আলীর সান্নিধ্যে পাঠিয়ে দেন। তখন তিনি ১৭/১৮ বছরের যুবক। মায়ের আদেশ অনুযায়ী ওয়াজেদ আলীর স্বাক্ষাৎ নিয়ে বায়াত গ্রহন করেন এবং তথায় আ্পন মুরশিদের সাথে সাতদিন অবস্থান করেন। সাতদিন পরে আপন মুরশিদের হুকুমে নিজগৃহে ফিরে যান। এরপর থেকেই তাঁর অন্তরে মুর্শিদের মুহাব্বতের ফয়েজ অতিমাত্রায় জারি হতে থাকে। তাসাউফের ভাষায় এ মুহাব্বতকে ‘ফানাফিশ শায়খ’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ স্তরে তরীক্বতপন্থীগণ আপন পীরের এসকে মহব্বতে বেকারার হয়ে মুরশিদের খাছলত আয়ত্ত করতে শুরু করেন। এ প্রসঙ্গে খাজা বাবা এনায়েতপুরী (রহ.) নিজেই বলেছিলেন, ‘‘পীরের খাছলত ধরো; তবেই ত্রাণ ও মুক্তি।’’ একদা তিনি মুর্শিদের স্বাক্ষাৎ লাভের জন্য মায়ের অনুমতিক্রমে কলকতায় সফর করেন। অল্পদিনের মধ্যেই সৈয়দ ওয়াজেদ আলীর তত্ত্বাবধানে ক্বলবে ফয়েজ জারি হয়ে লতিফাসমূহে সুলতানুল আজকার জারি হয়ে যায়। এভাবে দায়রা-ই এমকানের স্তর আলমে নাছুত (বস্তুজগৎ) ও আলমে আরোয়ার (রুহের জগৎ) যাবতীয় মাকাম অতিক্রম করে ফানাফিশ শায়খের মাকামে উপনীত হন। এ দায়রা থেকে রূহানি জগতের রহস্যময় ও মহাবিস্ময়কর জ্ঞানের পথচলা শুরু হয়। এরপর তিনি দায়রায়ে জেলালের মঞ্জিল সম্পন্ন করেন। দায়রায়ে জেলালের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর সমস্ত গুপ্তরহস্য ও সিফাতের জ্ঞান অর্জন করে থাকেন। এ দায়রাতে রয়েছে- বেলায়াতে ছোগরা, বেলায়াতে কোবরা, বেলায়াতে আউলিয়া, দায়রায়ে মহব্বত, দায়রায়ে মাইয়াত, আল্লাহর কুওত (আল্লাহর শক্তি), আল্লাহর ছামাদিয়াত (ছামাদ অর্থ- আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, অবিনশ্বর, চিরন্তন, স্বয়ংসম্পূর্ণ (সূত্র- সূরা আর রাহমান ২৯, সূরা আল-ইখলাস ১-২)। এভাবে তিনি মাকামে মুসাবী, মাকামে ইব্রাহীম, মাকামে ঈসাবী, দায়রায়ে বেলায়তে মুহাম্মদী, দায়রায়ে হাকিকতে কুরআন, দায়রায়ে হাকিকতে সালাত, দায়রায়ে হাকিকতে সাওমসহ প্রভৃতি মাকামসমূহ হাসিল করেন। এভাবে তিনি সুদীর্ঘ এগার বছর সৈয়দ ওয়াজেদ আলী মেহেদীবাগী (রহ.)’র দয়ার পরবশে নিসবতে নক্সবন্দীয়া-মোজাদ্দেদীয়ার চব্বিশ দায়রা, নিসবতে চিশতিয়া, নিসবতে মাদারিয়া, নিসবতে সোহরাওয়ার্দীয়া, নিসবতে কাবরূইয়া, নিসবতে মোসাফিয়া, নিসবতে রাসূল করিম (দ.)’র আল আজহাব ও আজওয়াজে মোতাহেরাত রপ্ত করে হজরত মুহাম্মদ (দ.)’র আখাছুল খাছ মাকামের উরূজ, ফানা, বাকা ও নিসবতে জামেয়ার সমস্ত ছুলুক হাসিল করেন এবং ছায়েরে ইলাল্লাহ (তওবা, মোহাছেবা, মোয়াতেবা, মোয়ামেলাত, ইস্তেকামাত), ছায়েরে মা’আল্লাহ (ময়েল, উলফৎ, উন্স, মহব্বত, ইশক), ছায়েরে ফিল্লাহ (আলমে নাছূত, আলমে মালাকুত, আলমে জবরুত, আলমে লাহুত, আলমে ছেউদ/হাহুদ) এবং আবেদিয়াতের মাকামসমূহ হাসিল করে মাত্র ২৭ বছর বয়সে ১৯১৩ সালে সৈয়দ ওয়াজেদ আলী মেহেদীবাগী রহ. কর্তৃক তরীক্বতের খেলাফত লাভ করেন। তিনি নক্সবন্দীয়া-মোজাদ্দেদীয়া তরিকার চর্চা করতেন বেশী। এরপর নিজ ভূমিতে ফিরে এসে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে খানকা স্থাপন করে শুরু করেন ইসলাম প্রচার এবং আদর্শের সুফী বাদের বিস্তার কাজ শুরু করেন। সেখানেই তিনি বিয়ে করে সংসার জীবন শুরু করেন। জনক হন ৮ কন্যা এবং ৫ পুত্র সন্তানের। পরবর্তীতে সমগ্র বাংলার পাশাপাশি ভারতের আসামে সফর করে তিনি ইসলাম ও সুফীবাদ প্রচার কাজ তরান্বিত করেন। তিনি ইসলামের মর্মবাণী-তরিকত দর্শন প্রচারের পাশাপাশি সমাজসেবা মুলক কাজেও অবদান রেখেছিলেন।
খাজা ইউনুছ আলী এনায়েতপুরী (রহ.)’র মাকাম সর্ম্পকে তাঁর আপন মুরশিদ সৈয়দ ওয়াজেদ আলী মেহেদীবাগী (রহ.) বলেছিলেন, (১) আল্লাহ তা’লা তাঁকে ইমামতির সনদ দিয়ে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন (২) ইউনুছ তরিকতের গউস (৩) ইউনুছের দ্বারা হেদায়াতের নূর এতোদূর প্রসারিত হবে যে, সারাবিশ্বে লক্ষ লক্ষ লোক হেদায়াতের নূর লাভ পূর্বক মুক্তি লাভ করবে’’।
আল্লাহর এ মহান অলি নানান প্রতিকূলতা ও নানান ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যদিয়ে আল্লাহর দ্বীন ও রাসুলুল্লাহ দ.’র সত্য তরিকা প্রচার করে মানুষের অন্তরে হেদায়াতের নূরের আলোক রশ্মি জ্বালিয়ে দিয়েছেন। খাজা ইউনূস আলী (রহ.) ১৯১৪-১৯৩৯ সাল পর্যন্ত বাংলা ও আসামের বিভিন্ন অঞ্চলে নকশেবন্দীয়া-মুজাদ্দেদীয়া তরিকা প্রচারে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। পূর্ববঙ্গে যে কয়েকজন ইসলাম প্রচার ও প্রসারে অবদান রেখেছেন তন্মধ্যে খাজাবাবা এনায়েতপুরী রহ. অন্যতম। খাজা বাবার আধ্যাত্মিক কার্যকলাপের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দিনদিন লোকজনের যাতায়াত বাড়তে থাকলে এলাকার কিছু ঈর্ষান্বিত অসাধু কুচক্রী মহল তাঁকে প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টা করলেও আল্লাহ তা’আলা তাঁকে সবসময় সুরক্ষিত রেখেছেন। যাঁতে তিনি দ্বীনের কাজ সুষ্ঠ ও সুচারুরূপে সমাধা করতে পারেন। আল্লাহ তা’লা পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেছেন, ‘‘আল্লাহ সর্বোত্তম হেফাজতকারী ও সাহায্যকারী’’। বর্তমান সময়ে ভন্ড নামধারী পীররা তাদের নিরাপত্তার জন্য সিকিউরিটি ফোর্স তথা রক্ষীবাহিনী সাথে রাখেন। যা কুরআন-হাদিসের সাথে সর্ম্পূণ সাংঘর্ষিক। এনায়েতপুর পাক দরবার শরীফে আসা-যাওয়ার পথে আল্লাহর দুশমনরা তাঁর মুরিদানদের নানানভাবে অপদস্থ করতো। এমনকি তাঁদের সাথে থাকা টাকা-পয়সা এবং মূল্যবান জিনিসিপত্র কেড়ে নিয়ে ঠাট্ট-বিদ্রুপসহ নানানভাবে অপমানিত করতো। খাজা বাবা ইউনুছ আলী (র.) কে মুসলিম লীগে যোগদানের জন্য প্রেসার ক্রিয়েট করা হলে তিনি তাদের প্রস্তাব নাকচ করে দিলে; তাঁর উপর নেমে আসে জালিমদের অমানবিক নির্যাতন। এক পর্যায় এ সংবাদটি বাংলার অবিসংবাদিত রাজনীতিক মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী জানতে পারেন। মওলানা ভাসানী সাহেব এ নির্যাতন বন্ধের ব্যবস্থা গ্রহণ পূর্বক বলেছিলেন, “রাজনীতি শিখতে হলে আমার কাছে এসো; ধর্ম শিখতে হলে এনায়েতপুরে যাও”।
বর্তমান আসামের (মওগাঁও, দরং, কামরূপ, গোয়ালপাড়া), অরুণাচল ও মেঘালয় প্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গের (মালদাহ, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ), ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশ ও পশ্চিম পাঞ্জাব এবং বাংলাদেশের ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, জামালপুর, সিলেট, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, রাজশাহী, কুমিল্লা, বরিশাল, যশোর, খুলনাসহ ৬৪ জেলায় ও বিশ্বের রন্দ্রে রন্দ্রে এই সিলসিলা জারি আছে। এই সিলসিলা সম্পূর্ণ শরীয়তের পাবন্দির মাধ্যমে আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় হাবীবের খুশি-রেজামন্দি হাসিলের লক্ষে তরিকতের অজিফা মতে কঠিন-কঠোর রিয়াজত সাধানার উপর প্রতিষ্ঠিত। তরিকতের নামে ভন্ডামীকে তিনি কখনও আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন না। এ সিলসিলার কেউ শরীয়তকে অমান্য বা অবমূল্যায়ন করলে বুঝতে হবে সে খাজাবাবা এনায়েতপুরীর অনুসারী নয় বরঞ্চ সে ভন্ড, মিথ্যুক, ধোঁকাবাজ ও ধর্ম-ব্যবসায়ী। খাজা বাবা এনায়েতপুরী (রহ,) তদ্বীয় বাণীতে ফরমান- ‘যে শরীয়তের বিরুদ্ধ চলে, সে আমার মুরিদ না’।
মুসলিম উম্মাহর ঈমানী চেতনাকে উজ্জীবিত রাখাতে খাজা বাবা ইউনুস আলী ১৯১৫ সালে রাসূলে করিম (দ.)’র নির্দেশে ওরস মাহফিল চালু করলেও; আজ অবধি তথা- ১১০ বছর ধরে ভাবগার্ম্ভীযের সাথে পালিত হয়ে আসছে। এতে সারা দেশ থেকেই তার ভক্ত মুরিদরা এখানে সমবেত হতে থাকেন যা ধীরে-ধীরে অগণিত ভক্তদের আগমনে মহাসমাবেশে রুপ নেয়। এরই একপর্যায়ে তার সংস্পর্শে এসে আদর্শিক আলোর পথ প্রচারে ১২শ থেকে সাড়ে ১২শ পীর আওলিয়া নিয়োজিত হন। এর মধ্যে ফরিদপুরের সদরপুরের প্রখ্যাত আটরশি পীর, চন্দ্রপাড়া পীর, ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ পীর, টাঙ্গাইল প্যারাডাইস পাড়া, কুমিল্লার ইসলামাবাদ, জামালপুরের সাধুরপাড়া মোসলেম নগর, যশোরের ঘুনী দরবার শরীফ, ভারতের আসামের গণি খলিফার দরবার শরীফ অন্যতম। তারা একইভাবে খাজা ইউনুছ আলী এনায়েতপুরী সুফীবাদের আদর্শ ও ইসলাম প্রচার করেন। এ ওরসে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইলমে মারিফতের সুধা পানকারী লক্ষ লক্ষ মানুষের গণ জামায়েত হয়। এ অনুষ্ঠানে সমস্ত নবী-রাসূল (আ.), আহলে বায়তে রাসূল (দ.), নবী করিম (দ.)’র বিবিগণ, সাহাবায়ে ক্বেরাম, আলেম-ওলামা, পীর-দরবেশ এবং সমস্ত মুসলমান নর-নারীর জন্য বিশেষ দোয়া মুনাজাত করা হয়।
হযরত খাজা ইউনুস আলী এনায়েতপুরী (রহঃ) শিক্ষার উপর দৃষ্টি ছিলো অনেক বেশি। তিনি মনে করতেন শিক্ষা হলো জীবনের ঐশ্বরিক, আলোকসজ্জা এবং তার শত শত, হাজার হাজার অনুগামীদের তিনি এই উপদেশই দিত। হযরত খাজা ইউনুস আলী এনায়েতপুরী (রহঃ) শিক্ষার প্রতি ছিল উন্নত একটি ত্রিপক্ষীয় শিক্ষণ পদ্ধতি “লেখা” “বক্তৃতা” এবং তার তরিকা দ্বারা প্রভাবিত করত। তিনি তার মুরিদ দের চার সুফী আদেশ দিতেন কাদেরিয়া তরিকা, চিশতিয়া তরিকা, নক্সবন্দিয়া তরিকা এবং মোজ্জাদ্দেদিয়া। বিশেষ করে তিনি প্রভাবিত করতেন নক্সবন্দিয়া তরিকা এবং মোজ্জাদ্দেদিয়া তরিকার উপর। তিনি শরিয়তের আলো The Light of Shariya এবং Ganje Asrar নামে দুটি বই লিখেছেন।
খাজা বাবা (র.) সরাসরি রাজনীতির সাথে সম্পৃত্ত না থাকলেও তিনি ছিলেন বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ। সমসাময়িক বিশ্ব পরিস্থিতি, বৈশ্বিক রাজনীতি, সমাজনীতি ও অর্থনীতির সবসময় খবরাখবর রাখতেন। রাষ্ট্রের কঠিন পরিস্থিতি সমাধানের জন্য এবং মুসলিম জাতির বিজয়ের জন্য সবসময় আল্লাহর দরবারে দোয়া করতেন। রাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিশেষ পরিবর্তনে আল্লাহর কুওতের ফয়েজ জারি করে সমস্যা নিরসন করতেন। আধ্যাত্ম জগতের এ মহান সূর্যপ্রভা ২রা মার্চ ১৯৫২ সালের রবিবার বেলা ১২টা ১৫ মিনিটে ৬৪ বছর বয়সে বেছালে হ্ক্ব লাভ করেন।
মহান এই মুর্শিদ হযরত খাজা এনায়েতপুরী (রহঃ) বাংলা ১৩৫৮ সনের ১৮ ফাল্গুন রোববার, ইংরেজি ১৯৫২ সালের ২ মার্চ ইন্তেকাল করলে তার প্রতিষ্ঠিত এনায়েতপুর পাক দরবার শরীফের গদ্দিনশীন পীর হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন জেষ্ঠ্য সাহেবজাদা আলহাজ্ব হযরত খাজা হাশেম উদ্দিন এনায়েতপুরী (রহঃ)। তিনার ইন্তেকালের পর চতুর্থ সাবেজাদা হযরত খাজা মোজাম্মেল হক শ্যামলীবাগী-এনায়েতপুরী (রহঃ)’র উপর ন্যাস্ত করা হয়। পরে তিনি অসুস্থ্য হয়ে দায়িত্ব থেকে অবসর নিলে তৃতীয় সাহেবজাদা হযরত খাজা কামাল উদ্দিন নুহু মিয়া এনায়েতপুরী (মা. জি.আ.) বর্তমান গদ্দিনশীন হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করে ইসলামের শান্তির মর্মবাণী প্রচারে বাবার মতই কাজ করছেন। খাজা হুজুরের দ্বীতিয় সাহেবজাদা হযরত খাজা সাইফুদ্দিন শুম্ভগঞ্জী-এনায়েতপুরী (রহ.) ময়মনসিংহ জেলায় লালকুঠি দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে খাজা হুজুরের অধ্যাত্মিক বাণী ও পথ প্রচার করে গেছেন। ছোট সাহেবজাদা হযরত খাজা আবদুল কুদ্দুস এনায়তপুরী (রহ.) চলতিবছর ১৮ অক্টোবর ইন্তেকাল করেন।
[ লেখক : রাজনীতিক ও কলাম লেখক ]