নিজস্ব প্রতিবেদক:
অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের এক উজ্জল উদাহরন বাংলাদেশ। হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারের রোর মডেল। কেননা, দীর্ঘ সংগ্রাম আর লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পৃথিবীর মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ সকল ধর্মের মানুষের রক্তের স্রোতধারায় অর্জিত। বিশ্বের প্রায় ধর্মের অনুসারী মানুষই বাংলাদেশে পাশাপাশি বস-বাস করছে সুদীর্ঘ সময় ধরে। আমাদের সংবিধানও সকল ধর্মের মানুষের নিজ নিজ ধর্মপালনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। কিন্তু, দু:খ জনক হলেও সত্য, এ মধ্যেও এক শ্রেণীর মানুষ নানা সময় ধর্মের ব্যানার ব্যাবহার করে আমাদের জাতীয় অস্তিত্বে আঘাত হানার চেষ্টা করেছে, সৃষ্টি করেছে বিভক্তি। এর নিজেরদের ধার্মিক বলে পরিচয় দেবার চেষ্টা করলেও প্রকৃত অর্থে এর দেশ-জাতি-মানুষ ও ধর্মের শত্রু। মনে রাখতে হবে, ধর্মভিরুতা আর ধর্মবাজ এক নয়। আমরা ধর্ম-বর্ণ-গোত্র সকলের সহঅবস্থানও সম্প্রীতির মাধ্যমে একটি মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই। যা চেয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শেরে বাংলা, সোহরাওয়ার্দী ও মওলানা ভাসানী।
মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে “যে শিক্ষা ও রাজনীতি বাঙ্গালি জাতিসত্তা, সার্বভৌমত্ব এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে আঘাত করে সে শিক্ষা ও রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবীতে” বাংলাদেশ সোস্যাল অ্যাকটিভিস্ট ফোরাম (বিএসএএফ) আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচীতে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।
বক্তারা বলেন, আমরা যখন স্বাধীনতার সূবর্ণ ঝয়ন্তি পালন করতে যাচ্ছি তখনও স্বাধীনতার স্বপ্ন সার্বজনিন শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করতে পারি নাই। শিক্ষা যেখানে দেশের নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সেখানে সংবিধান প্রদত্ত এই অধিকার এখনও পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্র। একদিকে ধর্মীয় শিক্ষার্থীরা যেমন দেশের হাজার বছরের সাহিত্য-সংস্কৃতির বিষয়ে অজ্ঞ অন্যদিকে এক শ্রেনীর ইংরেজী মাধ্যম শিক্ষার্থীরাও এ বিষয়ে অজ্ঞ। যার ফলশ্রুতিতে দেশে সার্বজনিন নীতিমালা গড়ে উঠছে না। সরকারকে এখনই এসকল বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে হবে। যে যে শিক্ষাই গ্রহন করুক না কেন দেশের সাহিত্য-সংস্কৃতি-ইতহাস-মুক্তিযুদ্ধ-ভাষা সংগ্রাম তাদের কারিকুলামে বাধ্য করতে হবে।
বক্তারা বলেন, স্বাধীনতার এই সূবর্ণ জয়ন্তির বছরে সরকারের প্রতি আহ্বান যে শিক্ষা ও রাজনীতি বাঙ্গালি জাতিসত্তা, সার্বভৌমত্ব এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে আঘাত করে সে শিক্ষা ও রাজনীতি নিষিদ্ধ করুন এবং একটি সার্বজনিন শিক্ষানীতি প্রণয়ন। একই সাথে সকলকে মনে রাখতে হবে, আজকের শিক্ষা ব্যবস্থা শিক্ষিত করার নামে প্রতিনিয়ত লক্ষ-লক্ষ বেকার সৃষ্টি করছে। এর থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপশি কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরী করতে হবে। তাহলেই জাতি বেকারত্তের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে।
বক্তারা আরো বলেন, দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, স্থিতিশীলতা রক্ষা ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে দেশ ও স্বাধীনতা বিরোধী উগ্র অপশক্তি এব্ং অতি প্রগতিশীলতার নামে ধর্ম বিদ্বেষী অপশক্তির অপতৎপরতা বন্ধে জাতীয় ঐক্য গঠনের এখনই সময়। আমরা বিশ্বাস করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বেই এই জাতিয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে।
সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক মুফতী মাসুম বিল্লাহ নাফিয়ী’র সভাপতিত্বে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগের সভাপতি এম এ জলিল, বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুন সরকার রানা, ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান মুসতাক ভাসানী, গনতন্ত্রী পার্টির ঢাকা মহানগর সাধারন সম্পাদক মিনহাজ সেলিম, বঙ্গবন্ধু শিশু কল্যাণ কেন্দ্র সভাপতি মুশফিকুর রহমান মিন্টু, বিএসএফ’র সমন্বয়ক শেখ জনি ইসলাম, জাতীয় স্বাধীনতা পার্টি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজু, যুবলীগ নেতা আনিছুর রহমান খোকন, ওলামা লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মুফতী আবদুল আলিম বিজয়নগরী, কনজারভেটিভ পার্টির চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান দেশ, পিডিপির সমাজ কল্যাণ সম্পাদক মাকছুদ আলম চৌধুরী, ন্যাশনাল ফ্রন্ডশিপ সোসাইটির সভাপতি রাহাত হুসাইন, বাংলাদেশ জাসদ নেতা হুমায়ুন কবির, নারীনেত্রী শাহানা আক্তার শিলা মাওলানা ইলিয়াস চৌধুরী, রঞ্জন রায়, মুফতী হাফিজুর রহমান, নাফি উদ্দিন উদয়, শাফি উদ্দিন বিনয় ও নয়ন ভান্ডারী প্রমুখ।