নিজস্ব প্রতিবেদক:
করোনা পরিস্থিতিতে সৃষ্ট সংকট উত্তরণে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে রাষ্ট্রকে মানবিক ও এবং কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের দিকে দীর্ঘ পথযাত্রায় দেশের প্রবীণ নাগরিকদের জন্য অবসরভাতা ও বেকার যুবকদের জন্য বেকারভাতা চালু করার লক্ষে বিশেষ বরাদ্দ রাখাসহ ১৭ দফা প্রস্তাবনা পেশ করেছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ। রবিবার (৩০ মে) গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে পার্টির চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া এ প্রস্তাবনা পেশ করেন। ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে বাংলাদেশ ন্যাপ’র ১৭ দফা সুপারিশগুলো গুরুত্ব দেবার জন্য সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। সুপারিশগুলো : ১. স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও প্রযুক্তি নির্ভর খাতসমূহকে ভ্যাটের আওতামুক্ত করা, জনগণের সামর্থ্য এবং বাস্তবতার আলোকে কর নির্ধারণ করা। ২. বিদ্যুত-পানি-ভোজ্য তেলের মূল্য কমিয়ে জনগণের ওপর থেকে বাড়তি আর্থিক চাপ কমানোর ব্যবস্থা করা। ৩. দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। বাজেটে স্বাস্থ্যখাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। এ খাতে দুর্নীতি ও লুটপাটের লাগাম টেনে ধরার ব্যবস্থা করতে হবে। সকল ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বীমা চালু করার উদ্যোগ নিতে হবে। জেষ্ঠ্য নাগরিকদের জন্য বিভাগীয় শহরে ৫০০ বেডের হাসপাতাল তৈরীসহ ক্যান্সারের ঔষধসহ ডায়বেটিস, হাইপ্রেসার, হার্ড, কিডনি ও লিভার এই পাঁচটি বড় রোগের ঔষধের মূল্য হ্রাস করতে হবে। ১৮ বছরের ওপর দেশের সব মানুষকে চলতি বছরের মধ্যে করোনা টিকা কার্যক্রমের আওতায় আনতে হবে। ৪. বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি হলো কৃষি। এক্ষেত্রে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বাড়াতে হবে। কৃষিকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে বিবেচনা করা, সরকারের খাদ্য মজুদ করার সামর্থ্য বৃদ্ধি করা, বাজেটে সারের ভর্তুকি কমিয়ে কৃষকদের নগদে ভর্তুকি প্রদান করা, কৃষিপণ্য মূল্য কমিশন গঠন করা, দূর্যোগকালীন সময়ে কৃষি বাজার ও মূল্য ব্যবস্থাপনার জন্য বহু-মন্ত্রণালয়ভিত্তিক সমন্বয় কমিটি গঠন করার উদ্যোগ নিতে হবে। ৫. সামাজিক নিরাপত্তার জন্য করব্যবস্থার সাথে সাথে সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য আজীবন পেনশন বা বিশেষ প্রনোদনা বিষয়টি বিবেচনা করা। যাতে করে সরকারি চাকরির বাইরে যাঁরা অন্য কোনো জীবিকায় নিয়োজিত এবং নিয়মিত আয়কর দিয়ে থাকেন, ৬০-৬৫ বছরের পর জীবনের বাকি দিনগুলোর জন্য রাষ্ট্রের উপর ভরসা করতে পারে। ভারত ও উন্নত দেশগুলোর মতো বাংলাদেশ সরকারকে দেশের ক্রমবর্ধমান প্রবীণ জনগোষ্ঠীর কল্যাণে সিনিয়র সিটিজেনদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের বিষয় বিবেচনা জন্য আসন্ন বাজেটেই কর্মসূচী গ্রহন করা উচিত। ৬. দারিদ্র দূরীকরণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি- দারিদ্র দূরীকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সামাজিক নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তার জন্য বেকার বাতার জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখতে হবে। ৭. প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ সকলের জন্য খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ করে ভর্তুকি মূল্যে দরিদ্র জনগণকে স্বচ্ছতার সঙ্গে তা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা। ৮. ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সূধমুক্ত সহজ ঋণ বরাদ্দ দিতে হবে। ৯. ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা ও পোল্ট্রি, ফিসারিজসহ গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়নে যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা বাড়াতে হবে। ১০. শিক্ষা ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আমরা প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ব থেকে পিছিয়ে পড়ছি। শিক্ষার উন্নয়নে বাজেটে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশের হার বারছে, ফলাফলও হয়তো ভালো হচ্ছে। কিন্তু, কিছুই শিখছে না। শিক্ষকদের মান উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহন করে বাজেটে বরাদ্দ রাখতে হবে। শুধু এমপিও ভুক্তি বাড়ালেই হবে না, শিক্ষার মানের দিকে নজর বাড়াতে হবে। ১১. ব্যবসা ও রফতানি বাণিজ্য করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশের রফতানি খাত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আসন্ন বাজেটে এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। শিল্পকারখানা, ব্যাংকিং সেক্টরের বিনিয়োগকে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং দুর্নীতিমুক্ত করা। এক্ষেত্রে ঋণ-সীমা পুনর্বিবেচনা করা। সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজসমূহ সততা, সচ্ছতা এবং কার্যকরভাবে কাজে লাগানো। ১২. প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও পরিবেশ- দেশ ও দেশের জনগণকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এ পরিবেশের বিপর্যয় থেকে রক্ষার জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। ১৩. প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট বিশেষকরে বেড়িবাঁধ নির্মাণে বাজেটে বরাদ্দ থাকতে হবে। ১৪. সকল প্রকার শ্রমিকদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ ও সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন সেক্টরভিত্তিক বিশেষ প্রণোদনা প্রদান করার আহ্বান জানান। একই সাথে প্রকৃত শ্রমিকদের সেনাবাহিনীর মাধ্যমে যাচাই বাছাই শেষে তাদের ডাটাবেজ তৈরি করে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা, কর্মহীন শ্রমিকদের অর্থনৈতিক সঙ্কট উত্তরণে জামানত ছাড়া আইডি কার্ড ও ব্যক্তিগত গ্যারন্টি নিয়ে ২ বছরের মধ্যে পরিশোধের জন্য সুদবিহীন ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করা। ১৫. করোনাকালে জীবনের ঝুকি নিয়ে দায়িত্বপালনকারী আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, চিকিৎসক ও গুমাধ্যমকর্মীদের উন্নয়নে বিশেষ বরাদ্দ প্রদানের ব্যবস্থা করা উচিত। ১৬. কালো টাকা সাদা করার নীতি বাতিল করে কালো টাকা, অপ্রদর্শিত অর্থ-সম্পদ ও বিদেশে পাচার করা অর্থ উদ্ধারের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে। ১৭. পরিবহনভাড়া, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, বাড়িভাড়া ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের নীতি গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া সকল স্তরে মধ্যস্বত্বভোগী ও বাজার সিন্ডিকেটগুলোর দৌরাত্ম্য বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে।