নিজস্ব প্রতিবেদক◊◊
নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার ওসি মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম ও এসআই টিপুর যোগশাজসে যৌথভাবে জুটি বেঁধে ব্যাপক ঘুষ বাণিজ্যেয় লিপ্ত থাকায় তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। গত ৫ আগস্ট দেশের পরিস্থিতির কারণে ছাত্র জনতার গণঅভ্যূত্থানে দেশের পুলিশ বাহিনীর মধ্যে বড় ধরনের একটা হুমকি চলে আসে। কারণ ছিল বেশিরভাগ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অবৈধ অর্থের জন্য দেশের স্বৈরাচার সরকার শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে ছিল পুলিশ বাহিনী। এতে করে পুলিশের অস্ত্রের গুলিতে দেশের ছাত্র-জনতা শত শত প্রাণহাণির ঘটনা ঘটেছে এবং ছাত্র-জনতা জীবনে বেঁচে থাকার মাঝেও পঙ্গুত্ব অবস্থায় আবার বসবাস করছেন অনেকে। এরি পরিপ্রেক্ষিতে দেশের পুলিশ বাহিনীর মধ্যে এখন পর্যন্ত কোন সংস্কার না হওয়া, কিছুদিন পরপরই ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা সাধারন পুলিশ সদস্যদেরকে পালাক্রমে বদলীর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ইতিপূর্বে নারায়ণগঞ্জ থেকে বদলী হওয়া পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল নামে তিনি ছিলেন কূখ্যাত সন্ত্রাসী স্টাইলের একজন পুলিশ সুপার। দেশের স্বৈরাচার সরকার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন না হওয়ার পিছনে, নারায়ণগঞ্জবাসীর সাধারন মানুষকে হামলা-মামলা দিয়ে জিম্মি করে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। নারায়ণগঞ্জে ছাত্র-জনতার মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাসেল একাধিক মামলায় আসামি হয়ে, বর্তমানে পালাতক অবস্থায় রয়েছেন তিনি। এবার নারায়ণগঞ্জে নবনিযুক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন ভারতের এজেন্ডা আওয়ামী পন্থী প্রত্যূষ কুমার মজুমদার। তিনি পুলিশ ডিপার্টমেন্টর ভিতরে কোন প্রকার টাকা ছাড়া কাজ করেন না। জেলার প্রতিটি কর্মস্থলে সাধারন পুলিশ সদস্যরা ভালো একটি অবস্থানে চাকরি করতে গেলে, তাঁকে গুনতে হয় মোটা অংকের টাকা। অন্যথায় একতরফা ভাবে বদলীর আদেশ প্রদান করা হয়।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, বন্দর থানার ওসি মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম গত ৬ মাসের যোগদান করার ব্যবধানে কোটি টাকার বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। ইতিপূর্বে বন্দর থানা সংলগ্নে মাহমুদনগরে কর্ণফুলী নামের ডকইয়ার্ডে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃদুল নামের একজন শ্রমিক মঙ্গলবার (১ অক্টোবর ২০২৪) সকালের দিকে দুর্ঘটনার কবলে পরে মৃত্যুবরণ করেন।তাঁকে পোস্টমর্টেম বাঁ ময়নাতদন্ত করা ছাড়াই ওসি এক লাখ টাকা এবং তাঁর নেতৃত্বে একজন এসআই এক লাখ টাকা সহ মোট দুই লাখ টাকার বিনিময়ে। ওই শ্রমিককে সরিয়ে দ্রুত দাফনের ব্যবস্থা করা হয়। অবশেষে মৃত্যু ব্যক্তির কাছ থেকেও মাফ হলোনা এমন ঘুষ বাণিজ্যের চিত্র।
অনুসন্ধান আরও বলছে, গত ৭.২.২০২৫ দিবাগত রাত আড়াইটার সময় এক ব্যক্তির অভিযোগের প্রেক্ষিতে অবৈধভাবে ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাওয়ার সূত্রমতে দুটি মাটি কাটা ড্রাম ট্রাক মদনপুর সাইরা গার্ডেন সংলগ্নে ওসির নেতৃত্বে এসআই টিপু গাড়ি ধরে নিয়ে যান। যাহার সিরিয়াল নাম্বার ফরিদপুর-ড ১১-০১২৫ ও ঢাকা মেট্রো – ঢ ১১-৭৯৮৪। এ গাড়ি দুটি অভিযোগদাতার অগচড়ে ছেড়ে দেওয়ার লক্ষে দাম কষাকষির কারণে প্রথমে ধামগড় ফাঁড়ি ইস্ট টাউনে নিয়ে নেওয়া হয়। এমতাবস্থায় দাম কষাকষিতে অল্প টাকা হওয়াতে, (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২ ঘটিকায় বন্দর থানায় গাড়ি দুটি নিয়ে যায় এসআই টিপু। এবার থানায় নিয়ে গাড়ি ছেড়ে দেওয়ার লক্ষে ওসির দাম কষাকষি অনবরত চলছে। এক পর্যায় গত (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাত আনুমানিক সাড়ে ১০ টায় ৫০ হাজার টাকা লেনদেন করা হয় গাড়ির মালিকের শ্যালক টিপু নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে। অবশেষে অবৈধ টাকা লেনদেনের কারণে অভিযোগদাতা অর্থাৎ প্রকৃত ভূক্তভোগী আইনী ব্যবস্থা পেলনা থানার ওসি তরিকুল ইসলামের কাছ থেকে।
জানাগেছে, এখনো বিভিন্ন স্পট থেকে বন্দর থানার ওসির টেবিলে মাশোহারা আসে প্রায় অর্ধকোটি টাকার মতো। এবং থানার পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়াসহ সবমিলিয়ে প্রায় কোটি টাকার বাণিজ্যে রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
সাধারন জনগণের মতে, দেশের পুলিশের এমন দূরবস্থার কারণে এতো একটা থানার তাঁদের সাধারন ইনকাম। সুতরাং দেশের পরিস্থিতি যেমনই হউক, এমন কিছু সংখ্যাক দুর্নীতিবাজ পুলিশের জন্য। পুলিশের সুনাম নষ্ট হতে চলেছে, যার কারণে আমরা পুলিশকে মন থেকে ভালোবাসি না বলে সাধারন জনগণের মতামত।
এবিষয়ে গাড়ির মালিকের শ্যালক টিপু নামের এক ব্যক্তি সকালের কাগজ’কে জানান, ভাই যা হইছে হইছে এখন এটা বাদ দেন। এটা নিয়ে প্রতিবেদন করা দরকার নেই ! কি করবো আমি নিজে থানায় গিয়ে এসআই টিপু এবং ওসি স্যারের সাথে কথা বলে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে একটা সমাধান করে ফেলছি। তিনি বলেন, ভাই আপনার অফিস কোথায় আমি একটু আপনার সাথে দেখা করবো, এক পর্যায় তিনি দ্রুত অফিস কক্ষে দেখা করে। ওসি এবং এসআই তাঁদের বিরুদ্ধে নিউজ বন্দ রাখার জন্য জোর সুপারিশ করে যান টিপু নামের ব্যক্তি।
এসআই টিপু মুঠোফোনে বলেন, ভূক্তভোগী টিপু নামের ব্যক্তির কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা লেনদেনের বিষয়টি সত্য না বলে অস্বীকার করেন। এবং পরবর্তীতে এসআই টিপু সংবাদ কর্মীর নিউজ বন্ধ রাখার জন্য, বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে মুঠোফোন দিয়ে যোগাযোগের মধ্য দিয়ে নিউজ বন্ধের সুপারিশ করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বন্দর থানার ওসি তরিকুল ইসলাম বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসকল ঘটনা আপনি বলছেন, এর কোন প্রকার সত্যতা নেই। সম্পূর্ণ এগুলো মিথ্যা কথা বলে অস্বীকার প্রদান করেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জ-খ সার্কেল আসিফ ইমাম সকালের কাগজ’কে বলেন, যদি কোন দুর্নীতির সাথে তারা জড়িত থাকে, তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।