ফতুল্লা প্রতিনিধিঃ
ফতুল্লার বক্তাবলী আকবরনগর এলাকায় নারী সাংবাদিক মনি ইসলামের ওপর সন্ত্রাসী হামলার দায়ে চিহ্নিত ওসমান গণিকে গ্রেফতার করা হয়। অনেকে হয়ত না জেনেই তাকে নিরীহ ও ভদ্র হিসাবে আখ্যা দিয়ে যাাচ্ছে। কিন্তু সে কতটা দুর্ধর্ষ তার অতীত ইতিহাস ও থানায় করা মামলার রেকর্ড ঘেটে বের হয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, ফতুল্লা বক্তাবলী আকবরনগর গ্রামের সামদ আলী ছেলের ওসমান গণির বিরুদ্ধে ৭টি শুধু হত্যা মামলা রয়েছে । এছাড়া ঢাকার কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা ও মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান এই তিন থানায় অন্তত তার নামে রয়েছে আরো ২২ টি মামলা।
প্রকাশ্যে দিবালোকে আকবরনগর এলাকায় মাটি ব্যবসায়ি জয়নাল আবেদীনকে মুখে টেটাবিদ্ধ নির্মমভাবে হত্যা করে এই দূর্ধর্ষ সন্ত্রাসী । সেই ওসমান গণিকে নিরীহ সাজিয়ে প্রকাশ করতে মাঠে নেমেছে একটি চক্র। মামলা তালিকায় আরো রয়েছে ধর্ষন , ডাকাতি, ছিনতাই, লুটপাট, মারামারি ও চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মের ফর্দা। এমন কোন মামলা বাদ নেই তার নামে। বর্তমানে সেই দূর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ওসমান গণি রয়েছে জেলে।
গত (২৩ অক্টোবর) স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল আনন্দ টিভির নারী সাংবাদিক মনি ইসলামকে আকবর নগর এলাকায় পেটে লাথি মেরে মারধর করে গুরুতর আহত করে। নারী সাংবাদিক বলে তাকে নানা টিটকারী করে। এ ঘটনায় প্রতিবাদ করায় ওসমান গণিও তার দলবল মনিকে পেটে লাথি মারতে থাকে ওই ওসমান গণি। তার অপরাধ সে একজন নারী সাংবাদিক। ওই সময় মনি ইসলামকে রক্ষায় তার সাথে থাকা এশিয়ান টিভির ক্যামেরাপার্সন আবু বক্কর এগিয়ে এলে তাকেও মারধর করে ওসমান গণিসহ আরো-৪-৫ জন। এ ঘটনায় মনি ইসলাম বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা দায়ের করে। পরবর্তীতে র্যাব-১১ টীম গত ২৭ শে অক্টোবর ভোর ৪ টায় রাতে লাল মিয়ার চর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওসমান গণিকে আটক করে। আটকের পর সাংবাদিক মনির সাথে সমঝোতা করতে নানা হুমকি ধমকীসহ তদবীর চালাতে থাকে। এতে মনি রাজী না হওয়ায় আদালতে জামিন নিতে পারেনি ওসমান গণি। অনেক টাকা ঢেলেও জামিন করতে না পেরে এখন দূর্ধর্ষ সন্ত্রাসীর পক্ষে কিছু দূর্বত্ত নানা অপপ্রচার ছড়াচ্ছে। থানা আদালত সূত্রে প্রাপ্ত ওসমান গণি ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা থানার এফআর নং- ১৫ তারিখ ৪ মার্চ ২০১৯ হত্যা মামলা, ফতুল্লা থানা মামলা নং- ৪৯ তারিখ ১০ আগস্ট হত্যা মামলা, ফতুল্লা থানা মামলা নং- ১১(১) ২০০৯ হত্যা মামলা, ফতুল্লা থানা মামলা নং-২৩ (১২) ২০১১ হত্যা মামলা, মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরজাদিখান থানা মামলা নং- ৫(৪) ২০১৬ ইং হত্যা মামলা, মুন্সীগঞ্জ সিরাজদিখান থানা ৩(৭) ২০১৩ ইং হত্যা মামলা, ,মুন্সীগঞ্জ সিরাজদিখান থানা মামলা নং ২৩(৭) ২০১৩ ইং হত্যা মামলা, মুন্সীগঞ্জ সিরজাদিখান মামলা নং৭(৪)২১৬৫ ধর্ষন মামলা, ফতুল্লা মডেল থানা মামলা নং-৬(১১)২০০৯ ছিনতাই মামলাসহ কেরানীগঞ্জ থানায়সহ মোট ২০-২২ টি মামলা রয়েছে এই ওসমান গণির নামে। আগের ইতিহাসে জানা যায়, ২০১৮ সালে ৯ আগস্ট ফতুল্লার বক্তাবলীর আকবর নগরের দূর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সামেদ আলী ও তার ছেলে ওসমান গণি বাহিনীর জয়নাল আবেদীন মন্ডলকে মাথায় টেটাবিদ্ধ করে ওসামন গণি। বাবা সামেদ আলী ও ছেলে ওসমান গণি ও তার লোকজন জয়নাল আবেদীনের কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে আসছিল। চাঁদা দিতে বরাবরের মতোই অসম্মতি জানায় জয়নাল। এতে ক্ষিপ্ত ছিল সামেদ আলী তার ছেলেরা। ১০লাখ টাকার চাঁদা না পেয়ে সামেদ আলী হাজীর নির্দেশে জয়নালের উপর হামলা চালায় মুখের মধ্যে টেটাবিদ্ধ করে জয়নালকে। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীণ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। জয়নাল আবেদীনের মৃত্যুর ঘটনায় তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম বাদী হয়ে বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় সামেদ আলী(৬০), রাজিব (২৬), আরিফ (৩০), দূর্ধর্ষ ওসমান গনি (৩৬), সজিব (২২), হৃদয় (১৮), আবুল হোসেন (৩৬), আলমগীর (৪২), আতিক (১৮), দিলু (৪৫), আলী হোসেন (৫৫), সুজন (২৫), সালাম (৫০), জুয়েল (২৬)সহ অজ্ঞাতনামা ২০/২৫ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। বক্তাবলী ইটভাটার মালিকরা জানায়, ফতুল্লার পশ্চিম, কেরানীগঞ্জের দক্ষিন ও মুন্সিগঞ্জের উত্তর দিক অবস্থিত বক্তাবলীর আকবর নগর এলাকা। এই এলাকাটিতে কখনো কেরানীগঞ্জ, কখনো মুন্সিগঞ্জ আবার কখনো নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক আকবর নগর ও এর আশপাশের এলাকায় রয়েছে প্রায় অর্ধশত ইটভাটা। এই সমস্ত ইটভাটাকে কেন্দ্র করে প্রভাবশালী মহল আধিপত্য বিস্তারে একে অপরের উপর হামলা করে ধারালো অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে। সেখানে সামেদ আলী চাঁদাবাজি করতে বিশাল নিজেই একটি বাহিনী গড়ে তোলে। সামেদ আলী শুরু করেছিল বিভিন্ন বালু ও মাটি বাহী ট্রলার থেকে চাঁদাবাজী। সামান্য সব্জি বিক্রেতা থেকে ইটভাটার মাটি মহালে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে,সামেদ আলী ও ছেলে ওসমান গণি এখন টাকার কুমিরে পরিনত হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা, কেরানীগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জের সিরাজদীখান এলাকার রাজনৈতিক নেতাদের শেল্টারেই দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সামেদ আলী ও ওসমান গলি ও বাহিনীর সদস্যরা। এমন অভিযোগ আকবর নগরবাসীর। আকবর নগর বক্তাবলী চরাঞ্চল আকবর নগরের মূর্তিমান আতংকের নাম সামেদ আলী হাজী ওসমান গণি ও তার বাহিনী। ক্ষমতাসীন দলের লোক পরিচয়ে সামেদ আলী আকবরনগর এলাকায় নানা অপকর্ম করে যাচ্ছে দিনের পর দিন। সামেদ আলীর ছেলেদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারণে পুরো এলাকার জনগন এক প্রকার জিম্মি হয়ে পড়েছে। এলাকার রহিম হাজী। ফতুল্লার বক্তাবলী খুন হওয়া জয়নালের স্ত্রী ফাতেমা জানান, আমার স্বামীকে প্রকাশ্যে দিবালোকে এই ওসমান গণি মুখের মধ্যে টেটাবিদ্ধ করে হত্যা করে। আাজ তিনটি বছর যাবত আদালতে দৌড়াচ্ছি। আমি পরিষ্কার বলতে চাই এই ওসমান গণির নামে ৭ থেকে ৮ টি মার্ডার মামলা আছে। আমি মামলা চালাচ্ছি বলে প্রতিনিয়ত হুমকি ধমকী পাচ্ছি। শুনলাম এমন একজন দূর্ধষ সন্ত্রাসী আটকে এলাকায় শান্তি বিরাজ করছে। আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই।ও যেন জেল থেকে ছাড়া না পায়।