||ছফর আহমেদ, স্পোর্টস ফিজিও খাগড়াছড়ি থেকে||
আমরা প্রায়ই দেখি আমাদের প্রিয় অনেক খেলোয়াড় হাঁটুর ইনজুরি নিয়ে মাঠের বাহিরে।খেলতে পারেন না অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ। হাঁটুর ইনজুরি মধ্যে অন্যতম হলো এসিএল ইনজুরি।আজ জানবো এসিএল ইনজুরি নিয়ে,যার কারণে মাঠের বাহিরে থাকতে হয় খেলোয়াড়দের। তবে এসিএল ইনজুরি যে শুধু খেলোয়াড়দের হয় তা কিন্তু নয়,হতে পারে কমবেশি সবার।
এসিএল ইনজুরি কি?
হাঁটুর অস্থিসন্ধিতে আছে মাংস পেশি, লিগামেন্ট, কার্টিলেজ, ক্যাপসুল, সাইনোভিয়াল মেমব্রেন, ফ্লুইড, শিরা ধমনী-সহ অনেক কিছুই। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে লিগামেন্ট যা একটি হাড়কে অন্য হাড়ের সাথে শক্ত টিস্যুবন্ধনি দ্বারা সংযোগস্থাপন করে। হাঁটুর যে লিগামেন্ট পায়ের ওপরের ও নীচে হাড়কে যুক্ত করে তাকে অ্যান্টেরিওর ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট(এসিএল) বলে। অ্যান্টেরিওর ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট(এসিএল) হচ্ছে হাঁটুর গুরুত্বপূর্ণ একটি লিগামেন্টে যা হাঁটুর মাঝখানে ক্রস করে এবং ঊরুর হাড়কে (ফিমার) হাটুর নিচের হাড়(টিবিয়া) সাথে যুক্ত করে হাঁটুকে স্থায়িত্ব দেয়।
হাইপার-এক্সটেনশান পদ্ধতিতে লিগামেন্টের বায়ো-মেকানিক্যাল সীমা,(জয়েন্টের স্বাভাবিক পরিসীমা) মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে সবচেয়ে বেশি অ্যান্টেরিওর ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট ইনজুরি হয় এবং এই ধরণের আঘাত ক্রিকেট বা ফুটবল খেলায় বেশি হতে পারে।
ইনজুরির কারণ:
চলমান অবস্থায় হঠাৎ এবং খুব দ্রুত দিক পরিবর্তন, অকস্মাৎ দাঁড়িয়ে পড়া বা খেলা শুরু করা, শূন্যে লাফ দেয়া, নিজ অক্ষের উপর ঘুরে যাওয়া, শূন্যে লাফ দিয়ে ঠিকমতো ল্যাণ্ড করতে না পারা, পায়ের সাথে হাঁটুর ভারসাম্য ঠিক না থাকা, ক্রমাগত ট্যাকলের শিকার হওয়া,ওয়ারমাপ না করেই খেলা শুরু করা ইত্যাদি।
লক্ষণ:
আঘাত লাগার সময়ে হাঁটুতে “পপ” বা “ফট” শব্দ বা অনুভূতি হওয়া। হাঁটুর চারপাশ ও পেছনদিকে ব্যথা। আচমকা হাঁটু ফুলে যাওয়া(গুরুতর আঘাতের লক্ষণ) বা হাঁটু ফুলে যাওয়া। হাঁটুতে আচমকা স্থায়িত্বের অভাব। হাঁটুর নড়াচড়া কমে যাওয়া। ইত্যাদি।
প্রতিরোধ:
সঠিক নিয়মে ওয়ারমাপ করা। হাঁটুর সংশ্লিষ্ট পেশী(প্রধানত কোয়াড্রিসেপ ও হ্যামস্ট্রিং গ্রুপ) প্রসারিত ও মজবুত-শক্তিশালী করাই হল অ্যান্টেরিওর ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট (এসিএল) ইনজুরি প্রতিরোধের সেরা পদ্ধতি।
রিহ্যাবিলিটেশান দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হাঁটু শক্তিশালী বানান। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ কাজের ক্ষেত্রে হাঁটুতে ব্রেস পড়া। যথাযথ প্রশিক্ষণ এবং অনুশীলন(ফিজিওথেরাপিষ্টের নির্দেশনা মেনে) করলে এসিএল ইনজুরির ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়তা করে।ইত্যাদি।
চিকিৎসা:
প্রাথমিক চিকিৎসা ১) রেস্ট দিয়ে নি জয়েন্ট স্টেবল করা ২) বরফ ব্যবহার করা(নির্ধারিত নিয়মে) ৩) কম্প্রেশন ৪) এলেভেশন ৫) গুরুতর আঘাতের লক্ষণে দ্রুত হাসপাতালে(অর্থোপেডিক ডাক্তার) নিতে হবে।
ডায়াগনিসিস:
ডাক্তার শারীরিক পরীক্ষার, প্রয়োজনে এমআরআই করে নির্ধারণ করবেন ক্ষতির পরিমাণ।প্রয়োজনীয় মেডিসিন এবং ফিজিওথেরাপি বা সার্জারির পরামর্শ দিবেন।লিগামেন্ট ছিড়ে গেলে তখন সার্জারির বিকল্পও নেই। ফিজিওথেরাপি ও তার উদ্দেশ্যে: আঘাত পাবার আগে হাঁটু যতটা কার্যকারি ছিল, সেই জায়গাটা ফিরিয়ে দিয়ে হাঁটুর স্বাভাবিক বা প্রায় স্বাভাবিক স্থায়িত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা। হাঁটুর কার্যকারিতার ক্ষতি কমানো। হাঁটুর অন্যান্য গঠনের ওপর আরও ক্ষতি কিংবা আঘাত আটকানো। ইত্যাদির জন্য ফিজিও’র তত্ত্বাবধানে কয়েক সপ্তাহ/মাস যাবত রিহ্যাবিলিটেটিভ থেরাপি নিতে হবে।
সার্জারি:
ইনজুরির মাত্রা পরিক্ষা করে ঠিক করা হবে সার্জারি লাগবে কিনা। এসিএল পুনর্গঠন সার্জারির পর পোস্ট-সার্জিক্যাল রিহ্যাব এবং ফিজিওথেরাপি নিতে হবে।
সার্জারির পরের ধাপগুলোর গুরুত্ব আরও বেশি। কেননা ঠিকমতো হিলিং না হলে পায়ের ফাংশন চলে যেতে পারে চিরতরে যা একজন মেধাবী খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে পারে।
[ছফর আহমেদ, স্পোর্টস ফিজিও খাগড়াছড়ি ক্রিকেট একাডেমী]