আব্দুল হালিম নিশাণ♦♦
রাজধানীর প্রধান কার্যালয়ের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) এস এম এ আজিম মানিলন্ডারিং অপরাধ সহ অবৈধভাবে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের কয়েক কোটি টাকার দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রকৌশলী আজিমের স্ত্রী নবতারা নুপুর নামে ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৩৯ হাজার ৭৪৩ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ ও ৭৫ লাখ ৭৪ হাজার ১০৮ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদসহ মোট ৪ কোটি ৭৫ লাখ ১৩ হাজার ৮৫১ টাকা মূল্যের সম্পদ এর সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায়। অথচ তিনি একজন গৃহিনী। তিনি স্বামীর টাকায় সম্পদ অর্জন করেছেন, যা অবৈধ হিসেবে দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে।
প্রকৌশলী আজিম মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে দেশীয় মুদ্রা ৩ কোটি ৮৪ লাখ ৪৭ হাজার ৬’শ ৭ টাকা পাচারের দায়ে। গত ১৩/০৬/২০২১ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন,২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪(২) ধারা অনুযায়ী একটি মামলা করেন দুদক। ঢাকা-১ এর মামলা নং ১২। এ মামলায় আজিমকে সহযোগী আসামি করা হয়।
এ ছাড়া আরও চার কোটি টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) তৎকালীন চট্টগ্রামের সাবেক এই প্রধান প্রকৌশলী এস এম এ আজিম ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো: হাফিজুল ইসলাম এ মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজহারে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, দখল ও গোপন করার অপরাধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
অভিযুক্ত এসএম এ আজিম( ৫৬) পিতা মৃত্যু কালা মিঞা বর্তমানে রাজধানীতে পিডিবি প্রধান কার্যালয়ের পূর্তকর্ম বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত)। মামলার অপর আসামি তাঁর স্ত্রী নবতারা নুপুর(৪৭)। তাদের ক্রয়কৃত জমির নির্মিত ৬ তলা বাড়ি চট্টগ্রাম বন্দর থানার উত্তর মধ্য হালিশহর ৩৭ ওয়ার্ডের মুনির নগরে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, মামলার প্রধান আসামি এস এম এ আজিম চট্টগ্রামে পিডিবিতে চাকরির সময়ে দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ অর্জন করে। বিষয়টি আড়াল করার জন্য স্ত্রীর নামে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ ক্রয় করেন। এর বিপরীতে বৈধ কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি অভিযুক্ত এস এম আজিম
আজিম-নুপুর দম্পতির বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগটি তদন্ত করেন- নূরজাহান পারভীন, সহকারী পরিচালক, মো: হাফিজুর রহমান, উপ-পরিচালক ও মো: রফিকুজ্জামান, উপ-পরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রধান কার্যালয়,ঢাকা।
দৈনিক সকালের কাগজে তথ্য সূত্রে, নবতারা নুপুর উত্তর-মধ্য হালিশহরে ক্রয়কৃত জমির ওপর নির্মিত ছয় তলা ভবন সংক্রান্তে ৬৫ লাখ ৬৬ হাজার ৭৪৩ মূল্যের স্থাবর সম্পদ গোপন করার এবং আসবাবপত্র বাবদ ৫০ হাজার ১৫০ টাকা, ইলেকট্রনিক্স বাবদ ১২ লাখ ৩১ হাজার ৬২৭ টাকা, ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেড হালিশহর শাখার হিসাব নম্বর ১৬৫.১৫১.৫৭৬৮৩ সংক্রান্তে ১৫ লাখ ৭৯ হাজার ৩০৭ টাকা এবং আইএফআইসি ব্যাংক লিমিটেডের হিসাব নম্বর ২০৩০৫০৫৩৮৮০৩৫ সংক্রান্তে ২৮ লাখ ৬১ হাজার ৪২৯ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদ গোপন করার তথ্য পাওয়া যায়।’
আরও জানা গেছে, সব মিলিয়ে নবতারা নুপুরের নামে মোট ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৩৯ হাজার ৭৪৩ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ ও ৭৫ লাখ ৭৪ হাজার ১০৮ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদসহ মোট ৪ কোটি ৭৫ লাখ ১৩ হাজার ৮৫১ টাকা মূল্যের সম্পদ এর সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায়। অথচ তিনি একজন গৃহিনী। তিনি স্বামীর টাকায় সম্পদ অর্জন করেছেন, যা সম্পূর্ণ অবৈধ।
এছাড়া দুদকের অনুসন্ধানকালে তার বিরুদ্ধে একটি জাল ট্রেড লাইসেন্স দাখিল করারও অভিযোগ উঠে আসে।
এবিষয়ে এস এম এ আজিম তাঁর অফিস কক্ষে একাধিকবার দেখা করার পর তিনি গণমাধ্যমে কথা বলতে ইচ্ছুক নয় বলে চাপ জানিয়ে দেন। তাঁর ওই সকল দুর্নীতির বিষয়ে কথা বলতে গেলে তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে, অফিস কক্ষ থেকে বেড়িয়ে অন্যদিকে সরে যান।
এবিষয় দুর্নীতির স্পষ্ট অভিযোগ থাকার পরও এস এম এ আজিম কিভাবে পদোন্নতি পেয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে প্রধান প্রকৌশলি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন এবং দুদক তাঁর বিরুদ্ধে পরবর্তী কি পদক্ষেপ নিচ্ছে সেটি জানতে ‘দৈনিক সকালের কাগজ’ এ চোঁখ রাখুন,পরবর্তী পর্বে।