নিজস্ব প্রতিবেদক:
১৯৫২’র ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের স্বাধীনতার সোপান রচিত হয়েছে। অথচ দু:খজনক হলেও সত্য এত বছরও পরও সেই ভাষা আন্দোলনের শহীদ ও সৈনিকদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা রাষ্ট্র আজও প্রনয়ন করতে পারে নাই বলে মন্তব্য করে বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, মহান ভাষা আন্দোলনের এত সময় পরও শহীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা না হওয়া রাষ্ট্রের ব্যর্থতা, গত ৫০বছরের শাসকদের ব্যর্থতা। কেই এই ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারে না।
শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে “ভাষা সৈনিকদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রনয়ন ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদানের দাবীতে” বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ এক মানববন্ধন কর্মসূচীতে প্রধান বক্তার বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, মহান ভাষা আন্দোলনের এত সময় পরও শহীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা হয়নি। প্রকাশিত তথ্য অনুসারে ১৯৫২ সালের ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সরকারি বাহিনীর নির্বিচার গুলিতে বহু লোক নিহত হলেও তারা সবাই স্বীকৃতিও পাননি। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে ভাষা শহীদ আসলে কতো জন এই তথ্য চিরকাল অজানা থেকে যাবে যদি সরকার সংরক্ষিত তথ্যাদি প্রকাশ না করে।
তিনি আরো বলেন, সবাইকে মনে রাখতে হবে ভাষা আন্দোলন থেকেই আমাদের জাতীয়তাবোধের জন্ম, স্বাধীনতার বীজ অন্তরে গেথেছে। ভাষা আন্দোলনের এই জাতীয় বীরদের রাষ্ট্রীয় সম্মান, সম্মানী ও সম্মাননা দেওয়া আমাদের পরম দায়িত্ব ও কর্তব্য।
তিনি বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশের এত সময় পরও ভাষা শহীদ ও ভাষা সৈনিকদের তালিতা প্রনয়ন না হওয়া এবং তাদেরকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহনের সময় ক্ষেপন দু:খজনক ও হতাশা ব্যঞ্জক। সকলের মনে রাখা প্রয়োজন আমরা জাতীয় বীরদের যথাযথ সম্মান জানাতে ব্যর্থ হলে ইতিহাস আমাদের কাউকে ক্ষমা করবে না। এই ব্যার্থতার কারণে শাসকদের ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাড়াতে হবে একদিন।
বাংলাদেশ ন্যাপ ভাইস চেয়ারম্যান স্বপন কুমার সাহা’র সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জাসদ উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য এনামুজ্জামান চৌধুরী, গণ রাজনৈতিক জোট-গর্জো সভাপ্রধান সৈয়দ মইনুজ্জামান লিটু, জাগপা সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, এনডিপি মহাসচিব মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা, গণতান্ত্রিক ঐক্য আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম, সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সাধারণ সম্পাদক সামছুল আলম, ন্যাপ সাংগঠনিক সম্পাদক মো. কামাল ভুইয়া, আইন সম্পাদক এডভোকেট আবদুস সাত্তার প্রমুখ।
জাসদ উপেদষ্টা এনামুজ্জামান চৌধুরী বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের মত ‘ভাষা সৈনিক’দের ভাষা বীর হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও মর্যাদা দেয়া এখন সময়ের দাবী। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনই স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রথম সোপান। একই সঙ্গে সারা বছর শহীদ মিনারের পবিত্রতা রক্ষাসহ ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক স্থানগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণের জন্যও সরকারের ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিত।
গর্জো সভাপ্রধান সৈয়দ মইনুজ্জামান লিটু বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের মত ‘ভাষা সৈনিক’দের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও মর্যাদা প্রদান করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির পাশাপাশি এই ভাষা সৈনিকদের রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ভাতা চালু করা সময়ের দাবি।
এনডিপি মহাসচিব মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা বলেন, ৫২’র একুশের ফেব্রæয়ারি ভাষা আন্দোলন ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূচনা। একুশ আমাদের অহংকার, আমাদের প্রেরনা। এই অহঙ্কারকে বিতর্কিত করার সকল ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে।
সভাপতির বক্তব্যে স্বপন কুমার সাহা সারা বছর শহীদ মিনারের পবিত্রতা রক্ষাসহ ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক স্থানগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণের জন্যও সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস এবং ভাষা শহীদদের অবদানকে তুলে ধরতেই স্বীকৃতি প্রয়োজন।