নিজস্ব প্রতিবেদক:
অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণ অব্যহত থাকলে ভবিষ্যত প্রজন্ম কাঙ্খিত মাত্রায় উৎপাদনশীল ক্ষমতা অর্জনে ব্যর্থ হয়ে আগামীতে জাতি হিসেবে আমরা মারাত্মক সমস্যায় পতিত হবো। ভয়াবহ হুমকিতে পড়বে প্রজন্মের উৎপাদনশীল ক্ষমতাও।
সোমবার (০১ ফেব্রুয়ারী) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস-২০২১ উপলক্ষে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘নিরাপদ খাদ্য ও ভোক্তা অধিকার আন্দোলন বাংলাদেশ’ আয়োজিত এক সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। এর আগে দিবসটি উপলক্ষে সংগঠনের উদ্যেগে একটি বণার্ঢ্য র্যালি বের করা হয়।
সংগঠনের নির্বাহী প্রধান কামরুজ্জামান বাবলু’র সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য্য প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ, বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. শহীদুল ইসলামের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইসমাঈল হোসেন সিরাজী, সরদার মো. আব্দুস সাত্তার, জেসমিন আরা, নোমান মোশারেফ, আব্দুল আজিজ, ইমাম হাসান, মাহমুদুর রহমান খান বাপ্পী, শামসুজ্জামান নাঈম, রিপন মিয়া ও নজির আহমেদ প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন আহম্মদ বলেন, সরকারের নানামুখী কর্মকান্ডে দেশ খাদ্য উৎপাদনে অনেকটা স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও এখনও সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। দেশে খাদ্য ব্যবসায়ে জড়িত কিছু অতি মুনাফাভোগী এবং ভেজালকারীচক্রের দৌরাত্ম্য ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।
তিনি বলেন, অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণের ফলে শুধু ব্যক্তি হিসেবে মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তাই নয়, এতে জাতি হিসেবে আমাদের উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে। এ ধারা অব্যহত থাকলে আগামীতে জাতি হিসেবে আমরা মারাত্মক সমস্যায় পতিত হবো।
ড. কামাল উদ্দিন আহম্মদ বলেন, নিরাপদ খাদ্য পাওয়ার অধিকার আমাদের সংবিধান স্বীকৃত। পৃথিবীর প্রতিটি দেশ নিরাপদ খাদ্যকে ভোক্তার অধিকার হিসেবে নেয় এবং এর ব্যত্যয় সেসব দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ বিবেচিত হয়। কিন্তু আমাদের দেশে আইন থাকলেও এর সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, ১৬ কোটি মানুষের দেশে অল্প কয়েকটি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ভেজাল রোধ করা সম্ভব নয়। ভেজাল রোধে আরও বেশি করে সরকারি নজরদারি বাড়াতে হবে।
নিরাপদ খাদ্যের জন্য মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে জানিয়ে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য বলেন, শুধু শহর কেন্দ্রিক নয় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় গ্রাম পর্যায়েও নিরাপদ খাদ্যের জন্য সচেতনতা বাড়াতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে শুধু আইন প্রণয়নই নয় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার উপরও গুরুত্ব দেন এই শিক্ষাবিদ।
“বিশ্বব্যাপী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার প্রথম দিকের লক্ষ্যমাত্রাগুলোর মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, পুষ্টির বিষয়গুলো আছে। টেকসই উন্নয়ন বলতে যা বোঝায় সেখানে নিরাপদ খাদ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা দু’টিই দরকার। এই বিষয় দু’টি নিশ্চিত করতে না পারলে স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধান করা যাবে না” বলেও মন্তব্য এ শিক্ষাবিদের।
কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভূইয়া বলেন, ভেজাল খাদ্য নিয়ন্ত্রনে সর্বপ্রথম প্রয়োজন নৈতিক শিক্ষা। নৈতিক শিক্ষার অভাবেই মানুষ খাদ্যে ভেজাল মেশানোর মত জঘন্য কাজ করে থাকে।
তিনি আরো বলেন, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে আইন এবং পৃথক সংস্থা থাকলেও রাজনৈতিক দুবৃর্ত্তায়নের কারণে সৎ ও সাহসী সরকারী কর্মকর্তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার অনেক মেগা প্রকল্পে সফল হলেও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে।
আয়োজক সংগঠনের প্রধান নির্বাহী কামরুজ্জামান বাবলু বলেন, সরকার ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্ত মধ্যম আয়ের দেশ হতে হলে স্বাস্থ্যবান ও কর্মক্ষম জনশক্তির বিকল্প নেই। আর কর্মক্ষম জনশক্তির জন্য পুষ্টিসমৃদ্ধ নিরাপদ খাবারের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
তিনি আরো বলেন, স্বল্প পুষ্টি সংবলিত খাদ্য গ্রহণের কারণে বাংলাদেশের মানুষের গড় উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে যেখানে পুষ্টিসমৃদ্ধ এবং গুণগত মানসম্পন্ন খাদ্য গ্রহণের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেখানে আমাদের দেশের মানুষ ক্রমশ নিম্নমানের খাদ্য গ্রহণে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। ফলে তারা কাঙ্খিত মাত্রায় উৎপাদনশীলতা প্রদর্শন করতে পারছে না।
দেশের প্রায় সকল ভোগ্যপণ্যের মধ্যে ভোজাল ঢুকে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অধিক লাভের আশায় অধিকাংশ ব্যবসায়ী ও উৎপাদকরা খাদ্যে ভেজাল মেশাচ্ছে। শক্ত হাতে এগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব না হওয়ায় তা এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বর্তমানে ছোট বড় সকল খাবার দোকানে ভেজাল পাওয়া মিলছে। কিন্তু সে তুলনায় আইনের বাস্তবায়ন খুবই নগন্য।