নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি:
রবিবার (৪ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শীতলক্ষ্যা নদীর চর সৈয়দপুর এলাকার ব্রিজ সংলগ্ন স্থানে এ ঘটনা ঘটে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে প্রথমে একজন নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে আরো এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপর রাত ১১টার দিকে আরো একজন নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। সর্বশেষ রাত সাড়ে ১১টার দিকে আরো দুজনের লাশ উদ্ধার হয়। তবে তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের নাম পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।
এছাড়া রাত ১০টা পর্যন্ত আরো ১৫-১৬ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। খবর পেয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক ও নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহসহ উর্ধ্বতনরা উদ্ধার কাজ পর্যবেক্ষণে আসছে বলে জানা গেছে। এছাড়া বিআইডব্লিউটিএ’র উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়ও ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে।
সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদা বারিক জানান, ডুবে যাওয়া লঞ্চটির অবস্থান শনাক্ত করা হয়েছে। উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়ও ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করেছে। খুব শিগগিরই লঞ্চটি ওপরে তোলা হবে। ইতিমধ্যে ৫ জন নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের নারায়ণগঞ্জের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফীন জানান, রাত সাড়ে ৮টার দিকে একজন নারী, সাড়ে ১০টার দিকে আরো এক নারীর লাশ এবং ১১টার দিকে আরো এক নারীর লাশ আমরা উদ্ধার করতে পেরেছি। সাড়ে ১১টার দিকে আরো দুজন নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রচণ্ড ঝড় বৃষ্টির কারণে আমাদের উদ্ধার কাজ ব্যহত হচ্ছে। আমাদের কার্যক্রম চলছে।
জানা গেছে, সন্ধ্যা ৬টার কিছু সময় পরে লঞ্চটি নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সীগঞ্জের দিকে রওনা দেয়। একটি ট্যাংকারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে এটি ডুবে যায় বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের সহকারী পরিচালক (নৌ নিট্রা) বাবু লাল বৈদ্য জানান, বিকেল ৫টা ৫৬ মিনিটের দিকে প্রায় অর্ধশত যাত্রী নিয়ে মুন্সীগঞ্জের উদ্দেশ্যে নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল ছেড়ে যায় সাবিত আল হাসান নামের লঞ্চটি। সৈয়দপুর এলাকায় শীতলক্ষ্যা ব্রিজের কাছে একটি কোস্টার ট্যাংকারের ধাক্কায় লঞ্চটি ডুবে যায়। বৈরী আবহাওয়ার কারণে উদ্ধার তৎপরতা ব্যহত হচ্ছে।
ডুবে যাওয়া লঞ্চটি থেকে সাঁতরে তীরে ওঠা মুন্সীগঞ্জের বাসিন্দা শ্রমিক আলম মিয়া জানান, আমি লঞ্চের পেছনের ছাদে ছিলাম। হঠাৎ দেখি একটি কার্গো জাহাজ পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে আমাদের লঞ্চটিকে ভাসিয়ে ব্রিজের নিচে নিয়ে আসে। পরে লঞ্চটি ডুবে যায়। আমি ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হই। কিন্তু লঞ্চে প্রায় ৫০-৬০ জন যাত্রী ছিল। তাদের মধ্যে ১৫-২০ জন হয়ত সাঁতরে তীরে উঠতে পেরেছে।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, নৌ পুলিশের টিম ও ফায়ার সার্ভিসের টিম নদীর তীরে দাঁড়িয়ে আছে। বিশেষ করে বৃষ্টির কারণে তারা উদ্ধার কাজে নামতে পারছে না। অন্যদিকে সন্ধ্যার পর থেকেই নদীর তীরে নিখোঁজ ও নিহতদের স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠে আশপাশের পরিবেশ।
ঘটনাস্থল থেকে বন্দর থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা জানান, আপাতত একজন নারীর লাশ উদ্ধারের পর হাসাপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেছে বলে জানতে পেরেছি। রাত ১০টা পর্যন্ত ১৫-১৬ জনকে নদীর পূর্ব তীর থেকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। যার মধ্যে কয়েকজন পানি খেয়েছিল। এদের মধ্যে ৮ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকী তিনজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। পশ্চিম তীরেও কয়েকজনকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে শুনেছি। ঘটনাস্থলে উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় পৌঁছানোর জন্য রওনা দিয়েছে। বৃষ্টি কমলেই উদ্ধার কাজে তৎপর হবে সংশ্লিষ্টরা।
সদর মডেল থানার ওসি শাহজামান জানান, রাত সোয়া ১০টা পর্যন্ত ১ জন নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে শীতলক্ষ্যার পশ্চিম তীরে কাউকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে কিনা সেটা তাদের জানা নেই। বৈরী আবহাওয়ার কারণে উদ্ধার তৎপরতা ব্যহত হয়েছে।
লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি বদিউজ্জামান বাদল জানান, লঞ্চটি সন্ধ্যা ৬টার কিছু সময় পর নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে যায়। পথিমধ্যে ঝড়ের কবলে পড়লে এটি দুর্ঘটনার শিকায় হয় এবং অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে যায়।
নারায়ণগঞ্জ নৌ পুলিশের পুলিশ সুপার মীনা মাহমুদা জানান, একটি লঞ্চ ডুবেছে। ঘটনাস্থলে নৌ পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা উদ্ধার কাজ চালাচ্ছেন। এটি সৈয়দপুরে শীতলক্ষ্যা নদীর ব্রিজ সংলগ্ন স্থানে ঘটেছে।