সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি:
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) কামরুল ফারুককে অবশেষে বদলি করা হয়েছে। নতুন ওসি হিসেবে ডিএমপির খিলগাঁও থানার ওসি মোঃ মশিউর রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গত শুক্রবার (২০ নভেম্বর) বদলির তথ্য নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের (ক-সার্কেল) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেহেদী ইমরান সিদ্দিকী। এর আগে নানা অভিযোগে তার বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র সচিব, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি, জেলা পুলিশ সুপারসহ নানা দপ্তরে একাধিক অভিযোগ জমা পড়ে। ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজির নির্দেশে একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে এসব অভিযোগের অনুসন্ধান শেষে তার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়। কামরুলের বিরুদ্ধে জমি ও মার্কেট দখলে সহায়তা, ব্যবসায়ীকে নাজেহাল এবং চাঁদাবাজ-মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সখ্যের অভিযোগ ছিল। তাকে ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।
কামরুল ফারুকের বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগ গুলো হলো। ২৪ সেপ্টেম্বর নরায়ণগঞ্জের এসপির কাছে ওসি কামরুল ফারুকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন সিদ্ধিরগঞ্জের কদমতলী এলাকার বাসিন্দা মোসা. রেজিয়া বেগম। এতে তিনি উল্লেখ করেন, ২০ সেপ্টেম্বর স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির নেতৃত্বে শতাধিক সশস্ত্র ক্যাডার হামলা চালিয়ে আমার ভূ-সম্পত্তি দখল করে নেয়। কিন্তু পুলিশ ওই জনপ্রতিনিধির পক্ষ নেয়ায় ৪ দিন থানায় ঘুরেও জমি দখলের ঘটনায় মামলা করতে পারিনি।
এছাড়া ১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন সিদ্ধিরগঞ্জের মিতালী মার্কেট দোকানদার সমিতির সদস্য দুলাল শেখ। লিখিত অভিযোগে দুলাল শেখ উল্লেখ করেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি কামরুল ফারুকের মদদে প্রকাশ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এসআই কাজল মজুমদারের উপস্থিতিতে ৮ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টার দিকে প্রতিপক্ষ বহিরাগত সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে মিতালী মার্কেটে হামলা চালায়। হামলাকারীরা দোকানদার সমিতির ট্রেড ইউনিয়নের অফিসে ভাংচুরসহ নগদ অর্থ ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজ দলিলপত্র লুট করে নিয়ে যায়। মার্কেটের সভাপতি ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াছিন মিয়া এ বিষয়ে ওসি কামরুল ফারুকের সহযোগিতা চান। ওসি ‘দেখছি, দেখব’ বলে কোনো প্রকার সহযোগিতা করেননি। উল্টো অবৈধভাবে প্রতিপক্ষকে সহায়তা করেন। বর্তমান কমিটি থানায় হাজির হয়ে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দিলেও তা আমলে নিতে গড়িমসি করতে থাকেন ওসি। এক পর্যায়ে ওসি কামরুল ফারুক হামলাকারীদের পক্ষ নিয়ে তাদের সঙ্গে মীমাংসার প্রস্তাব দেন। মীমাংসায় রাজি না হওয়ায় ওসি হামলাকারীদের পক্ষে একটি মামলা নেন। এ মামলায় আমাদের কয়েকজন কর্মকর্তা ও সদস্যদের আসামি করা হয়।
৬ জুলাই দুরন্ত সত্যের সন্ধানে (দুসস) নামে একটি মানবাধিকার সংগঠনের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আহসান হাবিব ওসি কামরুল ফারুকের বিরুদ্ধে আইজিপির বরাবরে লিখিত অভিযোগ দেন। এতে তিনি বলেন, চোরাই তেল কারবারি, চাঁদাবাজ ও মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ওসির সখ্য রয়েছে। আহসান হাবিব যুগান্তরকে জানান, আইজিপির কাছে তার অভিযোগ দেয়ার খবর পাওয়ার পর সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি কামরুল ফারুক তার সংগঠনের কার্যালয়ে পুলিশ পাঠিয়ে হয়রানির চেষ্টা করেন। পরে সংগঠনের কর্মকর্তা জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে মোবাইল যোগাযোগ করলে পুলিশ ফিরে আসে।
রনি লাইন্স নামে স্থানীয় চুন কারখানার মালিক চাঁন মিয়া বলেন, কামরুল ফারুক গত বছরের আগস্টে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় যোগদানের পর আমাকে থানায় ডেকে নেন। বলেন, সব ব্যবসায়ীরা থানায় টাকা দেন। আপনাকেও টাকা দিতে হবে। আমি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানাই। এতে ওসি আমার ওপর রুষ্ট হন। ১২ মার্চ আমি আমার বাড়ির সামনে রাস্তার কাজ (ঢালাই) করছিলাম। এ সময় একজন এএসআই এসে বলেন, আপনাকে ওসি স্যার এবং পরিদর্শক অপারেশন স্যার যেতে বলেছেন। আমি তাৎক্ষণিক থানায় গিয়ে প্রথমে পরিদর্শকের (অপারেশন) রুমে গেলে তিনি খুব খারাপ ব্যবহার করেন। পরে ওসির রুমে গেলে তিনি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। হুমকি দিয়ে বলেন, তোর নামে ১২-১৪টি মামলা আছে। আরও ১২-১৪টি মামলা দিয়ে তোকে জেলখানায় ঢুকিয়ে দেয়া হবে। বিষয়টি নিয়ে আমি এসপির কাছে লিখিত অভিযোগ করি। কোনো প্রতিকার না পেয়ে তিনি ১১ মে ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি বরাবর অভিযোগ করি। ১৩ মে স্বরাষ্ট্র সচিব এবং ১১ জুন আইজিপির কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। এরপরও কিছু না হওয়ায় নারায়ণগঞ্জে প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করি।