নরসিংদী প্রতিনিধি :
নরসিংদী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। জেলার শিক্ষাখাতে অনিয়ম, দুর্নীতি আর ঘুষ বাণিজ্য চরম আকার ধারণ করেছে। জেলা জুড়ে শিক্ষা সেক্টরে পদে পদে ঘুষ বাণিজ্য সব দপ্তরের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে।
নরসিংদীর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসরিন আকতারের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, দুর্ব্যবহার, শিক্ষক হয়রানিসহ বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ গড়ে উঠেছে।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, জেনারেল প্রভিডেন্ট তহবিল থেকে ঋণ নিতে (জিপিএফ লোন) শুরু করে পেনশন পর্যন্ত সকল ধরনের ফাইলে শিক্ষকদের কে নিয়মিত ঘুষ দিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় জেলার প্রত্যেক শিক্ষক, কর্মকর্তাসহ সকলকে নাজেহাল অবস্থায় রেখেছেন ডিপিইও। কথায় কথায় সাসপেন্ডসহ বিভন্ন ধরনের হুমকি প্রদান করে তিনি তার পুরো অফিসটাকে নিজস্ব বলয়ে জিম্মিকরে আর্থিকভাবে সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করছে। তার ভয়ে কেউই কথা বলতে চান না।
এমনকি যে সকল বিদ্যালয় ডিপিইও পরিদর্শন করেন সেখান থেকেও তার জন্য বিশেষ খাম বরাদ্দ রাখতে হয়। তাকে টাকা দিলে সবকিছুই সম্ভব। দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকলেও ক্ষতি নেই। কিন্তু তার খাম চাই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিভিন্ন উপজেলার শিক্ষক বিনা অনুমতিতে প্রবাসে চলে যান। তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে তিনি সবকিছু মিটমাট করে দিয়েছেন। চাকরি ছেড়ে দিতে চাইলে সেক্ষেত্রে তিনি অক্ষমতা জনিত পেনশনের ব্যবস্থাও করে দেন। এ কাজগুলো তিনি নিজেই দায়িত্ব নেন এসব ক্ষেত্রে তিনি মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়ে থাকেন। সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে এবং ম্যানেজিং কমিটির সাথে আলাপ করে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
প্রাথমিক ও গনশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সচিব গোলাম মো: হাসিবুল আলম ২০২১সনের ১৪ সেপ্টেম্বর নরসিংদী সালিধা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক অনুষ্টানের খরচ মিটানোর জন্য ডিপিইও নাসরীন আকতার প্রতিটি উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে ১০ হাজার করে টাকা নেন। যা তিনি নিজের কাছে রাখেন।এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষা কর্মকর্তা জানান আমরা কেউইমূখ খুলে বলতে পারিনা।
মনোহরদী উপজেলার ২নং ধরাবান্দা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফেরদাওস বেগম এর অবসর জনিত ছুটি (পি.আর.এল).ও এককালীন নগদায়ন( লামগ্রান্ট) মঞ্জুরির আবেদন দাখিল করার পর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের সাথে সমঝোতায় না আসায় তার ১৯৮৯ সালে সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন( সি.ইন.এড) প্রাপ্ত স্কেল মঞ্জুরির বিভাগীয় অনুমতির অজুহাতে অবসর জনিত ছুটির নেয়ার ক্ষেত্রে (সি.ইন.এড) প্রশিক্ষণের সুবিধাপ্রাপ্ত স্কেল বাদ দিয়ে পি.আর.এল মঞ্জুরির আবেদন জেলা অফিসে প্রেরণের জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসার মনোহরদীকে গত ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ সালে পত্রের মাধ্যমে নির্দেশ দেন। দীর্ঘ ৩২ বছর পর্যন্ত সি.ইন.এড এর প্রশিক্ষণ সুবিধা প্রাপ্ত হয়ে বেতন গ্রহণ করলেও শুধুমাত্র ডিপিইও’র সাথে চুক্তি না করায় তার পিআরএল নেয়ার ক্ষেত্রে সি.ইন.এড এর সুবিধা বাতিল কিংবা ননট্রেইন্ড শিক্ষক হিসেবে গণ্য করার পায়তারা করছেন জেলা প্রথামিক শিক্ষা কর্মকর্তা।
মেথিকান্দা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহ-শিক্ষিকা পারভীন আক্তার প্রকতপক্ষে অক্ষমতা হলে ও আবেদনের দীর্ঘ ৪ মাস পর তার অক্ষমতার সনদ পান। মেথিকান্দা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মর্জিনা বেগম বলেন পারভীন আক্তার চোখে দেখেনা এবং শারিরীক ভাবে খুবই অসুস্থ।
এছাড়া রায়পুরা উপজেলার জিরাহী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক শিরিন আক্তার পূর্ব অনুমতি ছাড়া সু-দীর্ঘ ১৬ মাস যুক্তরাষ্ট্রে কাটিয়ে এসে একটি আবেদন করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে খুশি করে কাজে যোগদানের ও অনুমতি পায় ।তিনি গত ১৭/০৩/২০২০আমেরিকা চলে যান কোন রকম ছুটি না নিয়ে। আবেদনে তিনি ১৬ মাস চিকিৎসা করাতে আমেরিকায় ছিলেন বলে উল্লেখ ও করেন । সরকারী বিধান অনুযায়ী একজন কর্মকর্তা বা কর্মচারী অধিদপ্তরের পূর্ব অনুমতি ছাড়া বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার কোনো বিধান নেই। শিরিন আক্তার দেশে এসে শারীরিক অবস্থার কথা জানিয়ে আবেদন করেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট। তিনি বড় অংকের উৎকোচ গ্রহণ করে সরকারী চাকুরী বিধিমালা ২০১৮এর ৪ এর (২) উপবিধি ১(ক) মোতবেক লগুদন্ড দিয়ে গত ১৫/১২/২০২১ তারিখে তাকে চাকুরীতে যোগদানের আদেশ দেন। একজন সরকারি কর্মচারি পলাতক হিসেবে বিভাগীয় মামলায় অভিযুক্ত হলে তিরস্কার দন্ড দেয়ার কোন অবকাশ নাই কিন্তু অর্থের বিনিময়ে নীতিমাল লঙ্গন করে লগুদন্ড প্রদান করেন। উক্ত শিক্ষিকার বিভাগীয় মামলার জবাব যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়নি।
রায়পুরা উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জিরাহী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক শিরিন আক্তার ও ইনভ্যালিড পেনশন নিয়ে আবারো যুক্তরাষ্ট্রে তার স্বামী ও ৩ সন্তানের কাছে যাওয়ার জন্য ডিপিইও-এর সঙ্গে সমঝোতায় এসেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা ও শিক্ষক জানান টাকা না পেলে কর্মকর্তাদের বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর)আটকে রাখা, বদলীর ফাইল অগ্রায়ন না করা, নানা অজুহাতে অর্থ দাবী করেন। হুমকি ধামকি ও নানা হয়রানিতে তার জুড়ি নেই। নরসিংদীর প্রাথমিক শিক্ষায় তার দুর্নীতির রাজত্ব অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রথামিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসরীন আকতার এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন তিনি কোন দূর্নীতি করেন না। রায়পুরা উপজেলার জিরাহী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক শিরিন আক্তার পূর্ব অনুমতি ছাড়া সু-দীর্ঘ ১৬ মাস যুক্তরাষ্ট্রে কাটিয়ে এসে যোগদানের বিষয়ে তিনি বলেন তাকে লগুদন্ড দেয়া হযেছে।
আরো জানা যায় যে, যে সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়নের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তক অর্থ ১-৩ লক্ষ টাকা মঞ্জুরী প্রদান করেছেন সেসব বিদ্যালয় অধীক পরিদর্শন করে থাকেন উক্ত শিক্ষা অফিসার। কারণ প্রতি বিদ্যালয় হতে ৩-৫ হাজার টাকা শিক্ষা অফিসারকে দিতে হয় না দিলেই কারণ দর্শানো পত্র ঝুটে উক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নামে। টাকা দেয়ার পর কারণ দর্শানো নোটিশ আর থাকে না। এসব ক্ষেত্রে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কালেক্টর হিসেবে কতিপয় সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার জড়িত।