নরসিংদী প্রতিনিধি:
মাধবদীর বহুল আলোচিত আমিরজান হত্যা মামলায় সঠিক তদন্তসাপেক্ষে দ্রুত বিচার চান নিহতের বৃদ্ধ স্বামী হোসেন আলী (৬৫)। চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারী জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে সৎ ছেলে, বউ ও নাতির নির্মম প্রহারে মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের শিকার হন আমিরজান (৫০)। ঘটনার দীর্ঘ ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও আসামীদের কাঙ্খিত বিচার না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন হোসেন আলী। তবু বিচারের আশায় কখনো কোর্টের সামনে পোস্টার নিয়ে একা দাঁড়িয়ে, কখনো বা স্বজনদের নিয়ে আসামিদের ছবি হাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করে চলেছেন পঁয়ষট্টি বছর বয়সের এই বৃদ্ধ। ঘটনাসূত্রে জানা যায়, মাধবদী থানার কাঁঠালিয়া ইউনিয়নের মৈষাদী গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধ হোসেন আলীর দুই সংসারের মধ্যে প্রথম সংসারের ছেলে রফিকুল ইসলাম ও তার পরিবারের সাথে দ্বিতীয় সংসারের স্ত্রী-পুত্রের জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছিলো। এর প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারী সম্পত্তি কে কেন্দ্র করে হোসেন আলীর দ্বিতীয় স্ত্রী আমিরজানের সাথে প্রথম সংসারের ছেলে রফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রীর কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে রফিকুলের ছেলে মোশাররফ হোসেন অনিক (২২) উত্তেজিত হয়ে ধারালো অস্ত্রদিয়ে কুপিয়ে তার দাদী আমিরজান ও দাদা হোসেন আলীকে গুরুতর আহত করে। ঘটনার পরপর স্থানীয়রা আহত দু’জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আমিরজানের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় সুস্থ হওয়ার পর হোসেন আলী বাদী হয়ে তার নাতী মোশাররফ হোসেন অনিক (২২)সহ চারজনকে আসামী করে মাধবদী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে এ ঘটনায় মাধবদী থানা পুলিশ ঘাতক অনিকের মা হাফেজা (৪০) এবং অনিকের চাচা মোস্তফা (৩৫)সহ অনিককে গ্রেফতার করে নরসিংদীর আদালতের প্রেরণ করে। পরে বিজ্ঞ আদালত থেকে অনিক ব্যতীত বাকি তিনজন জামিনে মুক্ত হয়ে যায়। নিহত আমিরজানের স্বামী হোসেন আলী জানান, তার দ্বিতীয় সংসারের একমাত্র ছেলে কাঁঠালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক রনি ও কষ্ট প্রকাশ করেন তার মার এই মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের বিষয়ে । এমতাবস্থায় তার স্ত্রী হত্যায় অভিযুক্ত নাতি কারাগারে থাকলেও বাকি আসামিরা বাইরে থাকায় তিনি চরম নিরাপত্তহীনতায় ভুগছেন। তিনি আরো বলেন, স্থানীয় সন্ত্রাসীদের গড-ফাদার মোহাম্মদ আলী মেম্বারের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী রহমত আলী, মোশারফ হোসেন অনিক, মোস্তফা ও হাফেজা বেগম সহ কয়েকজন মিলে সম্পত্তির লোভে নৃশংসভাবে তার স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা করে। তিনি এই ঘৃণ্য হত্যাকান্ডের সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত বিচারের দাবি জানান। এদিকে, মামলার বাদী পক্ষের নিযুক্ত আইনজীবী ফয়সাল সরকার জানান, নরসিংদীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এর আদালতে আমিরজান হত্যার বিচারটি প্রক্রিয়াধীন। তিনি আরো জানান, পুলিশের প্রতিবেদনের প্রতি বাদি পক্ষের অনাস্থার কারণে ইতোমধ্যেই মামলাটি তদন্তের ভার পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া আগামি ২২ ডিসেম্বর মামলাটির পরবর্তী শুনানী অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।