ঋণ ও উন্নয়ন বিষয়ক এশীয় গণ আন্দোলনের সমন্বয়ক লিডি নেকপিল হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে সংহতি জানিয়ে বলেন, খাদ্য ও জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতের কারণে পুরো বিশ্ব বড় ধরনের খাদ্য সংকট মোকাবেলা করছে। বহুমুখী সংকট রপ্তানিমুখী শিল্প ও কর্পোরেট নিয়ন্ত্রিত কৃষি খাদ্য ব্যবস্থা সৃষ্ট বিশ্বের ক্ষুধা আরো তীব্র ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অভ্যন্তরীণ খাদ্য চাহিদাকে প্রাধান্য এবং সকলের জন্য পর্যাপ্ত ও পুষ্টিকর খাদ্যের নিশ্চয়তা প্রদান করে এমন টেকসই খাদ্য ব্যবস্থা তিনি দাবি করেন।
সমাবেশের সভাপতি কমরেড বদরুল আলম তাঁর বক্তব্যে বলেন, ক্ষুধা মুক্তির যে লক্ষ্য নিয়ে ১৯৮১ সালে বিশ্ব খাদ্য দিবস শুরু হয়েছিল বিশ্ব আজো সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি। বিশ্বে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। বর্তমানে বিশ্বে ১০০ কোটির বেশি মানুষ প্রতিদিন না খেয়ে থাকে। অপুষ্টিতে ভুগছে বিশ্বের অর্ধেকের বেশি মানুুষ। এ অপুষ্টির শিকার মানুষের অধিকাংশের অবস্থান এশিয়া অঞ্চলে। বিশ্ব হতে ক্ষুধা ঝেটিয়ে বিদায় দিতে হলে কর্পোরেট কৃষির উপর নির্ভর না করে কৃষক কেন্দ্রিক পরিবেশ—প্রতিবেশ বান্ধব চাষাবাদ ও খাদ্য সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন ও কোরোনা সংকটকালে বাংলাদেশের কৃষকদের বিপুল পরিমাণ ফসল উৎপাদনের কৃতিত্বকে স্মরণ করে তিনি বলেন, এটা দু:খজনক যে ঐ কৃষকরাই আজ দুবেলা পেট পুরে খেতে পায় না। তিনি ষাটোর্ধ কৃষকের জন্য এককালীন ভাতা, মাসিক পেনশন ও রেশনিং চালু করার জন্য সরকারের কাছে দাবি করেন।
জলবায়ু সংকটের জন্য দেশের দক্ষিণ ও উত্তর অঞ্চলের ফসল উৎপাদন হ্রাস পাওয়াসহ নানারকম দুর্যোগের মুখোমুখি হচ্ছে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশ। সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ফসলি জমিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, ঋতুচক্রের শৃঙ্খলা ভঙ্গ, অতিমাত্রায় শৈত ও অতিমাত্রায় তাপপ্রবাহ, হিমালয়ের জমাট বরফ গলে উজানে হঠাৎ বন্যা এসবই বাংলাদেশের জন্য গভীর শঙ্কার বিষয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে ক্ষতির দায় বিশ্বের ধনী দেশগুলোর যারা তাদের ভোগবিলাসের কারনে অতিরিক্ত কার্বন উদগিরন করে বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়িয়ে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ দূষণের কারণে দুনিয়ায় বিশুদ্ধ পানিরও বিরাট সংকট দেখা দিয়েছে। পানিই প্রাণ, পানিই খাদ্য জানা সত্বেও প্রতিদিন শিল্প বর্জ্য পানিকে দূষিত করে জনজীবন সংকটাপন্ন করে তুলছে। বাংলাদেশ বিশ্বের ভুক্তভোগী সম্মুখ সারির দেশগুলোর অন্যতম প্রধান দেশ হিসেবে তার এ যাবৎকাল যত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার কাফফারা ধনী দেশগুলো দিতে বাধ্য। এটা তাদের ঐতিহাসিক ও প্রতিবেশগত দায় বলে কমরেড আলম অভিমত ব্যক্ত করেন।
মানববন্ধনে অন্যান্য বক্তারা ক্ষুধা মুক্তির লড়াইকে অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, কোটি কোটি মানুষ প্রতিদিন ক্ষুধার্ত থাকবে এটা মানবাধিকারের সাথে যায় না। ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্তির জন্য সহস্রাব্দ ও স্থায়ীত্বশীল উন্নয়ন লক্ষ্যের যে প্রত্যয় তা শুধু প্রত্যয়ই থেকে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে অগ্রগতি মোটেই হিসেবে যোগ্য নয়।
বক্তব্যে আরো বলেন, মৌলিক খাদ্য যেহেতু কৃষকরা উৎপাদন করে তাই কৃষকদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে খাদ্য সংক্রান্ত রাষ্ট্রের সকল পলিসি নির্ধারণ করতে হবে। কৃষকদের সুদবিহীন ঋণ, বীজ, বিদ্যুৎ, সার, সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। নেতৃবৃন্দ সকলের খাদ্যের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করারও আহ্বান জানান।