সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধিঃ
টানা বর্ষণে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ৪১৯ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তায় এখন হাঁটুকাদা। ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে কাঁচা রাস্তাগুলো। প্রতিবছর বর্ষা আসলে কাঁচা রাস্তায় ধানের চারা রোপন করে প্রতিবাদ জানান স্থানীয়রা। এবারেও তাঁর ব্যতিক্রম ঘটেনি। কিন্তু দীর্ঘদিনেও কোন লাভ হয়নি। পথচারী ও স্থানীয়রা আবেগের তারনায় নাটকের ভাষায় বলেন ‘কেউ কথা রাখেনি রে মনু, কেউ কথা রাখেনি’। পায়ে হেঁটে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, পথচারী ও হাটুরেগণ।
উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে উপজেলার পরিসর। এখানে ৭৩৯কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। এরমধ্যে ৩২০ কিলোমিটার পাঁকা রাস্তা রয়েছে। বাকী ৪১৯ কিলোমিটার কাচা রাস্তা। অনেক পাকা রাস্তায় মেরামত ও কাজ চলছে। পৌর শহরের রাস্তা সমুহ স্থানীয় সরকার বিভাগের দায়িত্বে।
পৌর শহরের ব্যাটারী চালিত অটো চালক মোনারুল ইসলাম গ্রাম-গঞ্জের রাস্তা পৌর শহরের সড়কের চেয়ে অনেক ভাল রয়েছে। পৌরবাসি একদিন অটো বা রিক্সায় চড়লে পরেদিন আর চড়তে চায় না, বুকে ব্যাঁথা হবে বলে। সামান্য বৃষ্টি নামলেই হাঁটু পানি। খানা-খন্দে ভরা গোটা পৌর শহরের সড়কগুলো।
পৌর মেয়র মো. আব্দুর রশিদ রেজা সরকার ডাবলুর বলেন, পৌর সভার তেমন কোন আয় নাই। যা দিয়ে ছোটখাট রাস্তা সংস্কার করা যাবে। নির্বাচনের পর থেকে আজ পর্যন্ত রাস্তাঘাট মেরামত, সংস্কার ও নির্মাণের জন্য কোন বরাদ্দ বা প্রকল্প পাইনি। তবে মাত্র একটি প্রকল্পের বরাদ্দ পাওয়া গেছে। আশা করা যাচ্ছে অল্পদিনের মধ্যে পৌর শহরের সকল রাস্তা সংস্কার করা সম্ভব হবে।
দহবন্দ ইউনিয়নের রিক্সা চালক রতন চন্দ্র বলেন, কাঁচা রাস্তাগুলোতে বৃষ্টি হলে রিক্সা চালানো যায় না। যদিও কষ্ট করে যাওয়া হয়, তাও আবার ভাড়া নিয়ে যাত্রীর সাথে বিরোধ সৃষ্টি হয়।
জরমনদী স্কুল ছাত্রী নিলুফা আক্তার বলেন, কাঁচা রাস্তা দিয়ে স্কুল ড্রেস পড়ে একদিন স্কুলে গেলে পরদিন আর ওই ড্রেস পড়ে স্কুলে যাওয়া যায় না। এছাড়া প্রতিদিন কমবেশি ৪/৫ জন সহপাঠী কাঁদায় পড়ে দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।
স্কুল শিক্ষক আশেক আলী বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের দিক থেকে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা উত্তলাঞ্চলের মধ্যে অনেকটা পিছে রয়েছে। টানা বর্ষনের কারণে মোটরসাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এক কিলোমিটার রাস্তা যেতে কমপক্ষে আধা ঘন্টা সময় লাগছে। এছাড়া প্রতিদিন জামা কাপড় পরিস্কার করতে হচ্ছে।
দহবন্দ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রেজাউল আলম সরকার রেজা জানান, বৃষ্টি হলে কাঁচা রাস্তাগুলো দিয়ে চলাচল করা দায়। বর্তমানে উপজেলার সবগুলো কাঁচা রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। আজ থেকে ১৫ বছর আগে কাঁচা রাস্তা সংস্কার ও মেরামতের জন্য প্রতিবছর কাবিখা ও কাটিা (কাজের বিনিময় খাদ্য ও কাজের বিনিময় টাকা) প্রকল্পের বরাদ্দ ছিল। এখন তা বন্ধ হয়ে গেছে। কর্মসৃজন প্রকল্পের মাধ্যমে সংস্কারের ব্যবস্থা রয়েছে। কাঁচা রাস্তাগুলো প্রতিবছর মেরামত না করার কারণে বেহালদশায় পরিণত হয়েছে।
নামপ্রকাশ না করা শর্তে উপজেলার একজন রাজনৈতিক নেতা জানান, সরকারের প্রতিকুলের মতের এমপি নির্বাচিত হওয়ায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলা উন্নয়ন হতে বরাবরে বঞ্চিত রয়েছে। এই উপজেলা বরাদ্দের দিক থেকে অনেকটা বৈষ্যমের শিকার।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. আব্দুল মান্নাফ বলেন, পাকা রাস্তার চাহিদা প্রতিবছর পাঠানো হয়। বরাদ্দের বিষয়ে জনপ্রতিনিধিদের অনেকটা গুরুত্ব রয়েছে। যোগাযোগের মাধ্যমে বরাদ্দের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হয়। প্রতিবছর সাধারণভাবে যে বরাদ্দ পাওয়া যায়, তা দিয়ে পাকা রাস্তার পরিমান বাড়ানো সম্ভাব নয়। আর বর্তমানে কাঁচা রাস্তার মেরামতের জন্য পূর্বের ন্যায় প্রকল্প নেই।
স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ নাহিদ নিগার জানান, পাকা রাস্তার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চাহিদা দেয়া হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে আগামীতে বেশি বরাদ্দ পাওয়া যাবে।
Tags: টানা