শুক্রবার ১৯ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০ টায় ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ঋণ ও উন্নয়ন বিষয়ক এশীয় গণআন্দোলন (এপিএমডিডি), বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন, কোস্ট ফাউন্ডেশন, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ ও সিপিআরডি’র যৌথ উদ্যোগে বিশ্বব্যাংক—আইএমএফের ওয়াশিংটন ডিসিতে বসন্তকালীন বৈঠকের প্রাক্কালে জনস্বার্থ বিরোধী সকল বৈদেশিক ঋণ বাতিলের দাবীতে এক বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য; বসন্তকালীন বৈঠকে আলোচ্য বিষয় হিসেবে বৈশ্বিক অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, টেকসই উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন ও আর্থিক স্থিতিশীলতা ইত্যাদি অন্তর্ভূক্ত। বৈঠকটি গুরুতর অর্থ সংকট সম্বোধন ও সমাধানের পথ খুঁজতে নীতিনির্ধারক, অর্থনীতিবিদ ও অর্থ বিশেষজ্ঞদের একটি মঞ্চ। বৈঠকটি গত ১৫ এপ্রিল শুরু হয়েছে, আগামী ২০ এপ্রিল শেষ হবে।
বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জায়েদ ইকবাল খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি কমরেড বদরুল আলম, কোস্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক মোস্তফা কামাল আকন্দ, সিপিআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুদ্দোহা, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সদস্য মামুন কবির, সিপিআরডি’র সিনিয়র অফিসার আল ইমরান, বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এএএম ফয়েজ হোসেন, জয় বাংলা জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক লাভলী ইয়াসমীন, ও বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সহ—সভাপতি রেহানা বেগম,ছাত্র নেতা আঃ মোতালেব,যুব নেতা শাহজালাল প্রমূখ।
এক ইমেইল বার্তায় এপিএমডিডি’র কেন্দীয় সমন্বয়ক লিডি ন্যাকপিল বলেন, যে মুহূর্তে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের এ বৈঠক চলছে ঠিক সে মুহূর্তে গুরুতর ঋণ সংকটে উন্নয়নশীল দেশগুলো বিপর্যস্ত। এ শোচনীয় পরিস্থিতির দৃষ্টান্ত মিলে জি-২০ এর ত্রুটিপূর্ণ ও অকার্যকর ঋণ উপশম নামের প্রকল্প পর্যবেক্ষণে । এ প্রকল্পকে বিশ্বব্যাংক—আইএমএফ ব্যগ্রভাবে সমর্থন ও প্রচার করে।
লিডি ন্যাকপিল আরো বলেন, ঋণ সমস্যা তারল্য সম্পর্কিত নয়, বরং পদ্ধতিগত সমস্যা যা পরিবর্তন হওয়া দরকার। গত ৮ দশক ধরে বিশ্বব্যাংক—আইএমএফ আন্তর্জাতিক অর্থ ব্যবস্থাকে এক বিশেষ রূপ দিতে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে আসছে। তাদের এ ব্যবস্থা বিশ্বের দক্ষিণের দেশগুলোর সম্পদ পদ্ধতিগতভাবে কুক্ষিগত করছে ও একই সাথে ঋণগ্রস্ততা ও পরিবেশগত বিপর্যয়কে স্থায়িত্ব করছে। জলবায়ু ও ঋণ সংকট উভয়কে অধিকতর খারাপের দিকে নিয়ে যেতে তারা প্রায়শই কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে। এমনকি তারা জীবাশ্ম জ্বালানীতে ঋণ ও জলবায়ু কার্যক্রমে অধিক ঋণ দিতে সব সময় নাছোরবান্দা।
দেশের সর্ববৃহৎ কৃষক সংগঠন বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি কমরেড বদরুল আলম এক বার্তায় বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমান প্রায় ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। কঠিন শর্তে স্থিতিকরণ প্যাকেজ হিসেবে আইএমএফের কাছ হতে নেয়া আরো ৪.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এর সাথে যুক্ত হয়েছে। শর্তসমূহ হচ্ছে মূল্য সংযোজন কর(মূসক) বৃদ্ধিকরণ, বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি বন্ধ, জ্বালানী ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি ইত্যাদি। এ শর্তসমূহের প্রত্যেকটি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জনগণের জীবন ও জীবীকার উপর মারাত্মক আঘাত। কমরেড আলম আরো বলেন, আজকে মাথা পিছু ঋণের পরিমাণ প্রায় ১,লক্ষ /— টাকা। অথচ দেশের একজন নাগরিকের রাষ্ট্রের কাছ হতে প্রাপ্তি নগণ্য। জনগণের স্বার্থ বিরোধী সকল ঋণ ঘৃণ্য ঋণের পর্যায় পড়ে উল্লেখ করে তিনি সকল বৈদেশিক ঋণ বাতিল ঘোষণা করায় আন্তর্জাতিক দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।
কোস্টের সহ—পরিচালক মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, বাংলাদেশ কর্তৃক গৃহীত বৈদেশিক ঋণের অধিকাংশের দায়ভার জনগণের উপরই বর্তায়। জনগণের উন্নয়নের নামেই ঋণ করা হয়েছে। অথচ এ প্রশ্নে জনগণের কাছ হতে সম্মতি নেয়ার কোন পদ্ধতিগত ব্যবস্থা নেই। এটা গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থার সাথে সাংঘর্ষিক। তিনি ঋণ গ্রহণ প্রক্রিয়াকে গণতান্ত্রিক নিয়মের অধীনে নিয়ে আসার আহ্বান জানান।
সিপিআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামমসুদ্দোহা তাঁর বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ তলানিতে নেমেছে। সরকার বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে প্রচুর ঋণ নিয়েছে। ব্যাংক ব্যবস্থায় চলছে চরম লুটতরাজ। হাজার হাজার কোটি টাকা ও সম্পদ বিদেশে পাচার হচ্ছে। সুস্থ অর্থনৈতিক বিকাশের জন্য এ সবই অন্তরায়। এরকম পরিস্থিতিতে তিনি জনগণের উপর চাপিয়ে দেয়া রাষ্ট্র কর্তৃক গৃহীত বৈদেশিক ঋণ বাতিলের আহ্বান জানান।
অপরাপর বক্তারা দেশের দারিদ্র্য, বেকারত্ব, ব্যাংক খাতে নৈরাজ্য, জনগণের সম্পদ লুটপাট, বিদেশে সম্পদ পাচারের মাধ্যমে বিলাসবহুল গাড়ি-বাড়ির মালিক হওয়া, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর কর ফাঁকি ও অবকাশের সুযোগ প্রভৃতির কথা উল্লেখ করে জনস্বার্থ বিরোধী সকল বৈদেশিক ঋণ বাতিল, জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে ১০০% ভাগ উত্তরণের জন্য আহ্বান জানান।