আমিরুল ইসলাম কবিরঃ
স্থানীয় সরকারের অধীনে ইউনিয়ন পরিষদের সেবা দিতে বিধি অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদের প্রধান নির্বাচিত হন চেয়ারম্যান। ৯টি ওয়ার্ড থেকে ৩টি করে ওয়ার্ড মিলে ৩ জন সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য আর প্রতিটি ওয়ার্ডে থাকে একজন করে নির্বাচিত সদস্য। যাদের মাধ্যমে সরকারের সব রকম সেবা পৌঁছে দেয়া হয়।
কিন্তু গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার পবনাপুর ইউনিয়ন পরিষদের জনসাধারণ বিগত ৬ মাস ধরে নানাভাবে সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন বলে বিস্তর অভিযোগ। কতিপয় ওয়ার্ড মেম্বার ও চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিভিন্ন ভাতা ও প্রজেক্টের লেনদেন নিয়ে দ্বন্দের জেরে এ সংকট তৈরী হয়েছে বলে দাবী স্থানীয়দের।
সরেজমিন তথ্যানুসন্ধানে প্রকাশ,পবনাপুর ইউপিতে আভ্যন্তরীন দীর্ঘদিন ধরে চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মাঝে কোন্দল সৃষ্টি হয়।
চেয়ারম্যান মাহাবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ তুলে ধরেন কয়েকজন ইউপি সদস্য। তারা দাবী করেন, চেয়ারম্যান ইউনিয়ন পরিষদে একচ্ছত্র আধিপত্য চালিয়ে আসছেন। নির্বাচিত মেম্বারদের কোন প্রকার মুল্যায়ন করছেন না। বিভিন্ন সরকারি বরাদ্দ, পরিষদের উন্নয়ন বরাদ্দের অর্থ কোনো ইউপি সদস্যকে অবহিত না করে এককভাবে ভূয়া ভাউচার দিয়ে নিজ ইচ্ছে মতো সিদ্ধান্ত নেন। পরিষদের সদস্যদের না জানিয়ে প্রকল্প সভাপতি করে অধিকাংশ কাজ অসম্পন্ন রেখে ভূয়া স্বাক্ষর দিয়ে নিজেই টাকা উত্তোলন করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্তা প্রস্তাব এনে বিভিন্ন সরকারী দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন কয়েকজন মেম্বার।
মেম্বাররা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহলে লিখিত অভিযোগ করেই খ্যান্ত হননি। বন্ধ রেখেছেন পরিষদের কাজকর্ম। অপরদিকে ৪০ দিনের কর্ম সৃজন প্রকল্পের কাজ উদ্বোধনের দুদিন পর বন্ধ করে দিলেন ইউপি সদস্য ও তাদের লোকজন। ফলে গত দু’দিন সংরক্ষিত ৩নং ওয়ার্ড সদস্য শাহিনুর বেগমের বাড়িতে কাজের দাবীতে অবস্থান করেন ৪০ দিনের কর্ম সৃজন প্রকল্পের শ্রমিকেরা। অবস্থা বেগতিক দেখে সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য বাড়ি থেকে গা ঢাকা দেন। কি হবে ১৮৪ জন খেঁটে খাওয়া শ্রমিকদের..?
এভাবে পক্ষে বিপক্ষে মেম্বার ও চেয়ারম্যানের মাঝে বিরোধের সৃষ্টি হওয়ায় পরিষদের কাজ কর্ম ব্যাহত হচ্ছে। ফলে জনসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জনসাধারন।
এব্যাপারে পবনাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান বলেন,আমার বিরুদ্ধে কতিপয় মেম্বার নানা অভিযোগ করে আমাকে বেকায়দায় ফেলতে চাচ্ছে। তারা আমাকে হেয় করতে ওঠে পড়ে লেগেছে। জনগণ অত্যন্ত সচেতন। কোন ষড়যন্ত্র তারা গ্রহণ করবে না।শক্ত হাতেই সব রকম কুট কৌশল মোকাবেলা করবে। এবং তাদের কারণে এলাকার উন্নয়ন কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউনিয়নের কয়েকজন বাসিন্দারা বলেন,মেম্বারদের কাছে গেলে সাধারন মানুষ সেবা পায় না। তাদের সঙ্গে চেয়ারম্যানের দ্বন্দ্ব থাকায় সাধারন লোকজনকে হয়রানি করেন। তাদের বাড়িতে কেউ গেলে বলেন,পরিষদের কোন কাগজ তাদের হাতে নেই। সব চেয়ারম্যানের হাতে। এভাবে মেম্বার আর চেয়ারম্যানের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে ঘুরে হয়রানী হয় স্থানীয় বাসিন্দারা।
এ বিষয়ে পলাশবাড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম মোকছেদ চৌধুরী বলেন, চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মাঝে দ্বন্দ্বটি বেশীদিন হয়নি। আমার কাছে এ বিষয়ে একটি দরখাস্ত করা হয়েছে। জনগন যাতে হয়রানির শিকার না হয় তার জন্য প্রশাসন যে ব্যবস্থা গ্রহন করবে আমি তার পক্ষে থাকবো।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ কামরুজ্জামান নয়ন বলেন,জনসেবা ব্যাহত হোক এটা নিশ্চয় কাম্য নয়। মেম্বারদের অভিযোগ পেয়েছি। ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
চেয়ারম্যান মেম্বারদের এ দ্বন্দ্ব সমাধানে জরুরী ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন ইউনিয়নবাসী।