ছাত্র কল্যাণ পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক সুরাইয়া ইয়াসমিন এর সঞ্চালনায় এবং মুজাম্মেল মিয়াজী সভাপতিত্বে উক্ত সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়
প্রধান বক্তা হিসাবে ছিলেন, বিশিষ্ট আইনজীবী সিনিয়র এ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ।
তিনি বলেন, আমি মনে করি আবেদনের ও অবসরে বয়সসীমাই থাকা উচিত নয় । যে যার যোগ্যতানুযায়ী চাকরি নিবে এবং ফিটনেস অনুযায়ী অবসরে যাবে । তাই তিনি বলেন এই যৌক্তিক দাবিটি নিয়ে কোন প্রকার কালক্ষেপন করা উচিত নয় ।
বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক ।
তিনি বলেন, যোগ্যতা থাকলে আবার বয়সসীমা কেন ? মেধাকে মূল্যায়ন করতে চাকরিতে কোন বয়সসীমা থাকা উচিত নয় । তাই বলব ছাত্র যুব সমাজের এই যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়া হোক৷।
বক্তব্য রাখেন, বিশিষ্ট রাজনীতিবীদ ও উপাধ্যক্ষ নুরুজ্জামান হিরা। তিনি বলেন, ২৮ বছর পড়ালেখা করার পর কিভাবে ১/২ বছরের মধ্যে চাকরিতে আবেদনের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়৷ এটা একটি অমানবিক ও রাষ্ট্র ধ্বংসের শামিল ।
চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা উন্মুক্ত করাই উত্তম সিদ্ধান্ত বলে আমি মনে করি৷
আরো বক্তব্য রাখেন, এবি পার্টির সিনিয়র সদস্য সচিব খালেদ হাসান ।
তিনি বলেন, এই দাবি সম্পূর্ণ যৌক্তিক । তাই দাবিটি নিয়ে কোন প্রকার কালক্ষেপণ করা উচিত নয় ।
প্রধান সমন্বয়ক সুরাইয়া ইয়াসমিন সঞ্চালনায় করতে গিয়ে বলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধি করতে হবে এবং শর্ত সাপেক্ষে উন্মুক্ত করতে হবে । না হলে ছাত্রকল্যাণ পরিষদ আরো জোরালো আন্দোলন দিতে বাধ্য হবে ।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ও ছাত্রকল্যাণ পরিষদের মুখপাত্র বলেন, আমরা দীর্ঘদিন এই যৌক্তিক আন্দোলনটি অহিংসভাবে করে আসছি । স্বৈরাচার শেখ হাসিনা আমাদের সাথে প্রতারণা করেছে এবং পতনও হয়েছে ।
এই সরকার আমাদের সরকার । আমরা আশা করি দ্রুত চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা নূন্যতম ৩৫ সহ শর্ত সাপেক্ষ্য উন্মুক্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে । এটা কোটি ছাত্র যুব সমাজের দাবি ।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, ৩৫ আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক — মোঃ হারুন, ইউসুফ জামিল,মোঃ মামুন,মোঃ মুরাদ এবং মোঃ মামুন হোসেন
বক্তব্য রাখেন, ছাত্র জন জোটের সমন্বয়ক মোঃ মাসুম বিল্লাহ্,মোঃ সাকিব ।
বক্তব্য রাখেন, জন জোট পিপলস এলায়েন্স এর কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাহবুব শামিম এবং শ্রমুকি জন জোটের সমন্বয়ক হাসান আলী স্বপন ।
চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধি করার যৌক্তিকতা তুলে ধরেন বিভিন্ন বক্তারা…
আপনার সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, সরকারি/বেসরকারি/আধা সরকারি/রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান/স্বায়ত্তশাসিত সহ দেশে বিদ্যমান সকল ধরনের চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ বছরকে মানদণ্ড হিসেবে অনুসরণ করে। এমতাবস্থায় চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ন্যূনতম ৩৫ বছর করার দাবির বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে আসছে। বর্তমানে চাকরি প্রার্থীদের সাথে একটি বৈষম্য বিদ্যমান রয়েছে। সেটি হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩২ বছর ও সাধারণ চাকরি প্রার্থীদের জন্য ৩০ বছর। এই বৈষম্য দূর করা আবশ্যক।
বর্তমান বাস্তবতায়,
১। বাংলাদেশের সকল পর্যায়ে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা আজ থেকে ৩৩ বছর আগে ১৯৯১ সালে ২৭ বছর থেকে ৩০ বছরে উন্নীত করা হয়, যখন বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ছিলো ৫৭ বছর। বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে ৭৩ বছর বিধায় চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা যৌক্তিক। গড় আয়ু বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ২০১১ইং সালে অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধি করে ৫৭ থেকে ৫৯ বছর করা হয়। কিন্তু চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি না করে সেটি ৩০ বছরেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়। যার কারণে দেশে উচ্চ শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২। কোভিড—১৯ এর কারণে প্রায় আড়াই বছর যাবৎ তেমন কোন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়নি বা নিয়োগ পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হয়নি। উপরন্তু, লকডাউন উঠিয়ে নেওয়ার পর থেকে প্রতি সপ্তাহান্তে ১০—১৫ টি বা ততোধিক পরীক্ষা একই দিনে, একই সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে যায় ফলস্বরূপ পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে অজস্র চাকরি প্রত্যাশী। কোভিড—১৯ এর শুরুতে যাদের বয়স ২৭—২৯ বছর ছিল তাদের বয়স এখন ৩০ বা ততোধিক। ফলে চাকরি প্রার্থীগণ বাস্তবিক অর্থে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ৩০ বছরের পরিবর্তে সাড়ে সাতাশ বছর পেয়েছে। কেভিড—১৯ এর কারণে বিগত সরকার কিছু চাকরি প্রত্যাশীদের জন্য ৩৯ মাসের একটি ব্যাকডেট দিয়ে সাধারণ চাকরি প্রত্যাশীদের মাঝে একটি বৈষম্য সৃষ্টি করে। যার ফলে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থ চাকরি প্রত্যাশীরা বৈষম্যের শিকার হয়।
৩। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীন যুব নীতিতে ১৮ থেকে ৩৫ বছর পর্যন্ত অনুসরণ করা হয়। দুঃখের সাথে বলতে হয় যুব নীতিতে ৩৫ বছর পর্যন্ত বিবেচনা করা হলেও বর্তমান উচ্চ শিক্ষিত চাকরি প্রত্যাশীদের ৩০ বছরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে।
৪। বিশ্বের প্রায় ১৬২টি দেশে এবং সার্কভুক্ত সকল দেশে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা কমপক্ষে ৩৫ বছর, তার মধ্যে কিছু কিছু দেশে তা উন্মুক্ত। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের বিভিন্ন রাজ্য ভেদে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা সর্বোচ্চ ৪৫ বছর, মালদ্বীপে ৪৫ বছর, শ্রীলঙ্কায় ৪৫ বছর, নেপালে ৩৫ বছর, আফগানিস্তানে ৩৫ বছর। বেকারত্ব দূরীকরণ করতে ও মেধাভিত্তিক একটি উন্নত বাংলাদেশ গঠন করতে হলে শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক মানের দক্ষ করে গড়ে তোলা এবং সেই সাথে আন্তর্জাতিক চাকরির বাজারে প্রবেশের সুযোগ তৈরি করা খুবই প্রয়োজন। বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক শিক্ষিত যুব সমাজকে মানবসম্পদ হিসেবে কাজে লাগাতে পারলে সেটি হবে যুগোপযোগী ও যুগান্তকারী একটি সিদ্ধান্ত এবং উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে কয়েক ধাপ অগ্রসর হওয়া যাবে। বিশ্বের সকল উন্নত রাষ্ট্র এই নীতি অনুসরণ করেই বেকারত্ব কমিয়েছে এবং মেধা রপ্তানি করে রেমিটেন্স বাড়িয়েছে। চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ বছর করে রাখার কারণে দেশে দক্ষ জনবল, গবেষক গড়ে উঠছে না এবং বাংলাদেশের চাকরি প্রত্যাশীরা আন্তর্জাতিক চাকরির বাজারে প্রবেশ করতে পারছেনা। আমাদের উচিত সফল ও উন্নত বিশ্বকে অনুসরণ করা। পৃথিবীর দ্বিতীয় জনবহুল, এক নাম্বার অর্থনীতি ও উদীয়মান পরাশক্তি রাষ্ট্র চীনেও চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৪০ বছর পর্যন্ত।
৫। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সেশন জটের কারণে সকল সরকারি/ বেসরকারি কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করতে ২৭ থেকে ২৮ বছর লেগে যায়। যা একজন চাকরি প্রার্থীর জন্য চাকরির প্রস্তুতীতে খুব কম সময় পেয়ে থাকে। এছাড়া কোটা নীতি এবং দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কারণে প্রকৃত মেধাবী ও যোগ্য প্রার্থী পিছিয়ে পড়ে।
এমতাবস্থায়, সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও এর অধীন দপ্তর/অধিদপ্তর/পরিদপ্তর এবং সংবিধিবদ্ধ/স্বশাসিত/জাতীয়কৃত/বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহে বিভিন্ন পর্যায়ের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে আবেদনের সর্বোচ্চ বয়সসীমা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুয়ায়ী সর্বনিম্ন ৩৫ বছর করা সহ শর্ত সাপেক্ষ্যে উন্মুক্ত করে দ্রুত প্রজ্ঞাপনের দাবি জানাচ্ছি।