ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ
চাঞ্চল্যকর রিসান হত্যাকান্ডের ২দিনের মাথায় দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলায় অভিযান পরিচালনা করে মূলহোতা ‘স্বাধীন’ সহ ৩জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১৩।
সোমবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরে র্যাব-১৩ কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান উপ-অধিনায়ক মেজর সৈয়দ মইদুল ইসলাম। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, উপজেলার রানীগঞ্জ এলাকার বিল্লাল উদ্দিনের ছেলে স্বাধীন উদ্দিন (২৯) এবং অপর দুজন ১৬ ও ১৪ বছর বয়সী দুই কিশোর।
র্যাব-১৩ এর উপ-অধিনায়ক মেজর সৈয়দ মইদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী স্বাধীন উদ্দিন স্বীকার করেছেন যে, প্রায় দশ মাস আগে সে রিসানকে সুদের বিনিময়ে টাকা ধার দেয়। রিসান প্রথম তিন মাস সুদের টাকা পরিশোধ করলেও পরিবর্তীতে সুদের টাকাসহ মূল টাকা দিতে ব্যর্থ হয়। উক্ত টাকাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় রিসানের সঙ্গে স্বাধীনের দ্বন্দ্ব হয়।একপর্যায়ে এরই জের ধরে গত ২৭ জানুয়ারি স্বাধীন উদ্দিন তার দুই কিশোর বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে রিসানকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরদিন ২৮ জানুয়ারি রাত আনুমানিক দশটার দিকে আসামি স্বাধীন তার কিশোর বন্ধুদের মাধ্যমে রিসানকে উপজেলার রাণীগঞ্জ বাজারে তার পানের দোকানে ডেকে নিয়ে আসে। এরপর রানিগঞ্জের কশিগাড়ী গ্রামের পাঁচ মাথা মোড়ের নিকট পরিত্যক্ত হোটেলে যেতে বলেন। রিশান উক্ত স্থানে পৌঁছলে, হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী স্বাধীন তার পানের দোকান বন্ধ করে আনুমানিক সোয়া দশটার দিকে ঘটনাস্থলে যান। সেখানে আসামি স্বাধীন রিশানের নিকট পাওনা টাকা ফেরত চেয়ে না পেয়ে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে রাগান্বিত হয়ে ধারালো ছুরি দিয়ে রিসানের গলায় আঘাত করে। এসময় রিসান চিৎকার করে উঠলে স্বাধীনের এক কিশোর বন্ধু রিশানের মুখের ভেতর বালু দিয়ে চেপে ধরে এবং অপর কিশোর তার হাতে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে তার পায়ের রগ কেটে দেয়। পরে মৃত্যু নিশ্চিত করে পৌনে এগারোটার দিকে রিসানকে রেখে তারা পালিয়ে যায়।
ঘোড়াঘাট-হাকিমপুর সার্কেলের সিনিয়র এএসপি শরিফ আল রাজীব জানান, হত্যাকান্ডটির পর এলাকার লোকে-মুখে প্রচার হতে থাকে এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়, যা চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। এরই ধারাবাহিকতায় পুলিশ, র্যাব সহ বেশ কয়েটি ইউনিট ওই ঘটনার বিষয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘোড়াঘাট উপজেলার রানীগঞ্জ এলাকার ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে চাঞ্চল্যকর রিশান হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনসহ হত্যাকান্ডের মূলহোতা ‘স্বাধীন’ ও তার সহযোগী দুই কিশোর বন্ধুকে গ্রেফতার করে র্যাব-১৩। পরে ৩১ জানুয়ারী রাতে ঘোড়াঘাট থানায় ৩জন আসামিকে হস্তান্তর করেন তারা।
এ বিষয়ে ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু হাসান কবির জানান, ৩১ জানুয়ারী রাতে র্যাব-১৩ আসামীদেরকে থানায় জমা দিয়ে গেছে। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১ টায় অন্য আর এক আসামি ‘আল আমিন’ এর দেখানো মতে, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় রাণীগঞ্জ গোহাটির দক্ষিন পার্শ্বে মোজ্জামেল হক এর পুকুর থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহার করা চাকুটিও উদ্ধার করেছে পুলিশ। পরে দুপুর ৩টার সময় আসামীদেরকে দিনাজপুর কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে বলেও নিশ্চিত করেছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।