ঘােড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ
দিনাজপুর ঘােড়াঘাট উপজেলার ওসমানপুর বাজার সড়কের দু’পাশে প্রায় পাঁচ ফুট প্রশস্ত ফুটপাত অবৈধভাবে দখল করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চারপাশের ড্রেন মাটি ভরাট করে বসছে অবৈধ এ দােকানপাটগুলাে। ফুটপাত দিয়ে পথচারীরা হাঁটতে নানা বিরম্বনার শিকার হচ্ছে। রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। ভােগান্তি বাড়ছে পথচারীদের। এতে যেকােন সময় বড় ধরণের দূর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেট থেকে শুরু করে বাজার তিন মাথা মােড় হয়ে ওসমানপুর-রানীগঞ্জ রােড থেকে ওসমানপুর দারুল কুরআন কওমি মাদ্রাসা ও এতিমখানা রােড পর্যন্ত সড়কের দু’পাশে পুরা ফুটপাত দখল করে বিভিন্ন খাবার হােটেল, কাঁচামাল-সবজি দােকান সহ নানা ধরনের দােকানপাট বসছে। বিশেষ করে বাজারের গুরুত্বপূর্ণ তিন মাথা মােড় মাছ ব্যবসায়ীরা সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত রাস্তা দখল করে ছােট বড় হাঁড়ি-পাতিল বসিয়ে মাছ বিক্রি করে আসছে। এতে করে আশপাশ সারাদিন ধরে মাছের গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে । ফুটপাতের সামান্য অংশও খালি নেই। সড়কের দু’পাশে কবলেই অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে সারি সারি দাকানপাট। যেন পুরা বাজার নেমে এসেছে রাস্তা ও ফুটপাত। দােকানপাট ছাড়াও অনেক জায়গায় বাঁশ, কাঠ ও টিন দিয়ে ঘিরে দখল করে রাখা হয়েছে ফুটপাত ও রাস্তা গুলাে।
স্থানীয়রা জানান, ফুটপাত দখলে থাকায় সড়কের ওপর সব সময় সিএনজি, ভ্যান, রিক্সা ও ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক সারাক্ষণ পার্কিং করা থাকে। অবৈধভাবে গড়ে উঠা এসব দােকানপাটের কারণে এমনিতেই রাস্তা সংকুচিত হয়ে গেছে, তাঁর ওপর এসব যানবাহনের কারণে এ পথ চলাচল করাই দুঃসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে পথচারী ও চালকদের মধ্য ঝগড়া-বিবাদ হচ্ছে অহরহ। প্রতিনিয়ত ঘটছে ছােট বড় দুর্ঘটনা। অথচ এসব দােকানপাটের জন্য বাজারে রয়েছে নির্দিষ্ট জায়গা।
স্থানীয় বাসিন্দা হালিম মিয়া সহ একাধিক পথচারী জানান, এ রাস্তাদিয়ে তা ইউএনও, এসিল্যান্ড সহ প্রশাসনের অনেকেই যাতায়াত করে। জ্যাম কিন্তু তারাও পড়ে। তাহলে এগুলাে উচ্ছেদের ব্যবস্থা নেওয়া হয় না কেন? এগুলাে দেখার কি কেউ নেই?
মাছহাটিতে না বসে ফুটপাত মাছের দােকান বসিয়ে ভাগান্তি সৃষ্টি করেছেন কেন প্রশ্নে মাছ ব্যবসায়ীরা বলেন, মাছহাটি তা বাজারের ভেতর বেচা-কেনা কম হয়। রাস্তায় সব সময় হরেক রকম মানুষ যাতায়াত করে এ জন্য সবাই এখান দােকান বসিয়েছি। অপরদিকে, হাটে মাছ বিক্রির নির্ধারিত স্থান মাছ ব্যবসায়ীরা না বসার কারণে মাছহাটির যে ব্যবসার ভারসাম্য তা ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে যা হাটের জন্য এটি একটি ক্ষতির কারণও বটে।
অভিযােগ আছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অঙ্গসংগঠনের স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এসব অবৈধ দােকানপাটের সুবিধাভােগী। নিয়ম অনুযায়ী বাজারের একটা নিদির্ষ্ট অংশ তওবাজার বা এসব দােকানপাটের জন্য বরাদ্দ থাকার কথা। যে জায়গাগুলােতে স্থানীয়ভাবে কােন স্থাপনা থাকার নিয়ম নেই। কি বাজারের ইজারাদার ও সুবিধাভােগীরা মিলে এসব দােকানপাটের জন্য নির্দিষ্ট এ জায়গাগুলাে টাকার বিনিময়ে দখলে হস্তান্তর করে থাকেন।
ঘােড়াঘাট পৌরসভার অধিকাংশ ফুটপাত ও রাস্তার জায়গা দখল করে ব্যবসা চালিয় যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বছরর পর বছর এ অবস্থায় চললেও পরে কর্তৃপক্ষ কিংবা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফুটপাত দখলমুক্ত করার কােন উদ্যােগ নিচ্ছে না বলে অভিযােগ রয়েছে এলাকাবাসীর। কিছুদিন পূর্বে সড়ক ও জনপথ বিভাগের রাস্তা নির্মাণের জন্য পরে এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হলেও এর অল্প কিছু দিনের মধ্যই আবারও দখলবাজরা সব জায়গা দখল করে নিয়েছে। এ যেন সব জায়গায়তেই এক প্রকার দখল বাণিজ্যের মহাৎসব চলছে। দিনের পর দিন এ অবস্থা চললেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ফুটপাত দখলমুক্ত করতে কােন ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না।
এ নিয়ে ওসমানপুর হাট বাজারের ইজারাদার বাবুল হােসেনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, বহুবার দােকানদারদের সরে যেতে বলছি, কিন্তু কে কার কথা শুনে! দােকান বসাতে এই জায়গায় কােন টাকা নিয়েছেন কি না প্রশ্নে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
এ ব্যাপারে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও পরে প্রশাসক আব্দুল আল মামুন কাওসার শেখ জানান, আমরা এটা উচ্ছেদ করার উদ্যােগ নিয়েছি। এ উদ্যােগের অংশ হিসেবে বাজারের ভিতর যে পরিত্যক্ত শেড রয়েছে তা মেরামত করা হবে, তারা যেন ওখানে বসে ব্যবসা করতে পারে। ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যবসার একটা পরিবেশ তৈরি ও অবৈধ এ দােকানপাটগুলাে উচ্ছেদ করা হবে।