আরিফুল ইসলাম জিমন,ঘােড়াঘাট◊◊
দিনাজপুর ঘােড়াঘাট খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিক্রির টাকা ইউনিয়ন প্রশাসনিক কর্মকর্তা (ইউপি সচিব), ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতার মাঝে ভাগ-বাটােয়ারার অভিযােগ উঠেছে। তবে সংশ্লিষ্ট অনেকেই এ অভিযােগ অস্বীকার করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর উপজেলার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ৮ জন ডিলারের মধ্য ৪ জন ডিলার স্বেছায় পদত্যাগ ও ৩ জন ডিলার অনুপস্থিত থাকার কারণে বাকী ১টি ডিলার রেখে সব পুরাতন ডিলার বাতিল করে উপজেলা খাদ্যবান্ধব কমিটি।
এরপর উপকারভােগীদের কথা চিহ্নিত করে গত ১৮ সেপ্টম্বর ২০২৪ উপজেলার সম্মিলিত সভায় চাল বিতরণ করার জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ইউনিয়ন কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে ইউপি সচিবদেরকে ডিলার সাজিয়ে চাল বিতরণের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
তবে খােঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ৪নং ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ-সম্পাদক শহিদুল ইসলামের স্ত্রী’র নাম ডিলারশিপটি শহিদুল ইসলামের প্যারালাইজড জনিত কারণে শয্যাশায়ী হওয়ায় মানবিকদিক বিবেচনা বাতিল করা হয়নি।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঘােড়াঘাট উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মােট সুবিধাভােগীর সংখ্যা রয়েছে ৫ হাজার ৬ শত জন।
এর মধ্য উপজেলার ১নং বুলাকীপুর ইউনিয়নের সুবিধাভােগীর সংখ্যা ১৫৪৭ জন, ২নং পালশা ইউনিয়ন ১৪৭৪ জন, ৩নং সিংড়া ইউনিয়ন ১৬৬৩ জন ও ৪নং ঘােড়াঘাট ইউনিয়নে রয়েছে ৯১৬ জন।
গত ৩ মাসে এসব সুবিধাভােগীদের ১৫ টাকা কেজি দরে ৩০ কজি করে চাল বিক্রি করা হয়। হিসেব করে দেখা গেছে, গত ৩ মাসে ৫ হাজার ৬ শত জন সুবিধাভােগীদের ১৫ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি করে চাল বিক্রি করে ১০ লাখ ৮ হাজার টাকা লাভ থাকে যা ইউপি-সচিবরা ছাড়াও খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও বিএনপির কিছু নেতা ভাগবাটােয়ারা করে নিয়েছেন বলে অভিযােগ উঠেছে।
সরেজমিনে গিয়ে উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ইউপি-সচিবদের সাথে কথা হলে তারা জানান, ১৩ টাকা কেজি দরে চাল উত্তালন করে ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে কেজি প্রতি ২ টাকা করে লাভের প্রথম মাসের টাকা আমাদের নিকট জমা রয়েছে। পরের দু’মাস যে চাল বিতরণ করা হয়েছে। এ টাকার ব্যাপারে আমরা কিছুই জানি না।
অপরদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইউপি সচিব জানান, পরের দু’মাসের লাভের যে টাকা তা বিএনপির নেতারা ভাগবাটােয়ারা করে নিয়েছেন। আপনারা দায়িত্ব থাকার পরেও কিভাবে বিএনপি নেতারা ভাগবাটােয়ারা করে নিতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এ বিষয় আমি কিছু বলতে পারবাে না, যা বলার ইউএনও স্যার বলবে। একই কথা বলেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত আরও ২ ইউপি সচিব। তবে ২নং পালশা ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বে থাকা ইউপি সচিব বিষ্ণু পদ সরকার জানান, ১ম মাসের লাভের টাকা আমাদের নিকট থাকলেও পরের দু’মাসের টাকার বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। তাহলে চাল কে বিতরণ করছে? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, রানীগঞ্জ বাজারের বিএনপি নেতা ও ব্যবসায়ী সাদেকুর রহমান রঞ্জু আমাকে ফােন করে জানিয়েছেন যে, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চালের গাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের, চাল বিতরণ করে টাকাগুলাে হিসাব নিকাশ করে পাঠিয়ে দিবেন। আমি আমার এই পজিশন ও দায়িত্বে থেকে সব বিষয়ে তা বেশি কিছু বলতে পারিনা। আপনারা এ বিষয় উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের সাথে কথা বলতে পারেন।
অভিযােগের বিষয়ে মুঠােফানে কথা হলে উপজেলা বিএনপির উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ও ব্যবসায়ী সাদেকুর রহমান রঞ্জু জানান, এসব কিছুর হ্যান্ডেলিং করছে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ১নং বুলাকিপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মাহফুজার রহমান লাবলু । আমি শুধু ডিও করছি, ডিলারেরা চাল বিক্রির পরে টাকাগুলাে কারেকশন করছি। খরচ-খরচা করে যেতে-সামান্য লাভের টাকা আমাদের কাছে আছে।
অপরদিকে, বিএনপি নেতা মাহফুজার রহমান লাবলুর সাথে মুঠােফানে কথা হলে তিনি জানান, ইউএনও মহােদয়ের পরামর্শে চাল বিতরণ কার্যক্রম আমার সম্পৃক্ততা ছিল। আমি না করলে কেউ না কেউ তা করতেই। এতে কােন সমস্যা? এছাড়াও লাভের টাকার ভাগ-বাটােয়ারার প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, টাকা কে দিলাে কে নিলাে এটা বড় কথা না, বিতরণ কার্যক্রম সুষ্ঠু ভাবে হয়েছে কিনা এটাই বড় কথা!
এ ব্যাপারে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা ইউনুস আলী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারদের অনুপস্থিতিতে আপদকালীন সময় ইউপি সচিবদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিষয়গুলাে নিয়ে ওনারাই ভালাে বলতে পারবেন।এখানে আমার কিছু বলার নেই। আর লাভের টাকা কােথায় কার কাছে জমা থাকবে, না রাজস্ব খাতে জমা হবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কােন বিধান নেই। আমি এর সাথে কােনা ভাবে জড়িত না, ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতাদের মাঝে লাভের টাকা ভাগ-বাটােয়ারার বিষয় কিছু জানিনা। এ বিষয় আমার ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষ বা ইউএনও স্যার ভালাে বলতে পারবেন।
জানত চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রফিকুল ইসলাম জানান, আমি কমিটির সভাপতি মাত্র। আমি সম্মিলিত সভাতেও খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা সহ সংশ্লিষ্টদের স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছিলাম খুব সাবধানতার সাথে যেন উপকারভােগীদের চালগুলাে বন্টন করা হয়। এ বিষয় যেন আমার কাছে কােন রকমের অভিযােগ না আসে। তবে লাভের টাকা কে নিবে, রাজস্বখাতে জমা হবে কি না আমার জানা নেই, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তাই ভালাে বলতে পারবেন।