নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক বলেন, গোটা নির্বাচনী ব্যাবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। সরকার একে একে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে। মানুষ ভোট দিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যে এত কম ভোট পড়লো, এর কারণ কী? ভোটাররা আমাদের প্রার্থীদের জানিয়েছেন, ভোট দিয়ে লাভ কী? ফলাফল তো আসে না।
শনিবার (৫ ডিসেম্বর) তোপখানার বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে বাংলাদেশ কংগ্রেস আয়োজিত ”সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচনে করণীয়”-শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থাকে সরকার নষ্ট করে দিয়েছে, সরকারি দলের প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করার জন্য নির্বাচনী তামাশার আয়োজন করা হচ্ছে। এই তামাশায় সরকারি দলের সমর্থক আর ভোটারেরাও ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ ও উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে।
সাইফুল হক বলেন, ‘একতরফা এই তৎপরতায় সময় ও রাষ্ট্রীয় অর্থেরও বিপুল অপচয় করা হচ্ছে। এই ধরনের অপচয় নিয়ে জনগণের মধ্যেও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এভাবে চলতে দিলে আগামীতে বাড়ি বাড়ি পুলিশ পাঠিয়েও ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনা যাবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। এই ব্যবস্থার খোল-নলচে পাল্টানো ছাড়া বাংলাদেশের কোনো গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নেই।
বিএলডিপি চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী নাজমউদ্দিন আল আজাদ বলেন, এ দেশের মানুষের এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে, পেঁয়াজ, আদা, লবণ, তেল কিনতে গিয়ে দাম নিয়ে চিন্তা করতে হয়। সরকার টেলিভিশনে পদ্মাসেতুর স্প্যান দেখিয়ে বলে— ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। আমার পেটে খিদের আগুন, আমার জীবন ওষ্ঠাগত।
বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, ভোটারদের ভোটে অনিহা গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়। নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষের আগ্রহ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে-বিষয়টি বার বার প্রমানিত হচ্ছে। ভোটারদের ভোটে অনিহা রাষ্ট্র ও ভবিষ্যত গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়।
তিনি বলেন, ভোট কেন্দ্রে গিয়েও জনগনের রায় প্রতিষ্ঠিত না হওয়ার আশঙ্কা তৈরী হবার কারণেই জনগন ক্রমান্বয়ে ভোট বিমুখ হয়ে পড়ছে, যা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। ভোটাররা ভোট দিতে যাচ্ছে না, ভোট দেয়ার প্রতি তাদের আগ্রহ কমছে। এভাবে যদি ভোটাররা ভোট দিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে তাহলে রাষ্ট্র ও গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়তে পারে।
সভাপতির বক্তব্যে এডভোকেট কাজী নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান এবং তাদের মূল কাজ নির্বাহী বিভাগের সহায়তায় সকল প্রকার নির্বাচন পরিচালনা করা। কিন্তু জেলা প্রশাসকদেরকে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে তারা আত্মঘাতি কাজ করেন যাতে তাদের স্বাধীন স্বত্তা ক্ষুন্ন হয়। জেলা প্রশাসকরা নির্বাচন পরিচালনাকারী হতে পারেন না। কারণ সাংবিধানিক বাধা আছে।
তিনি বলেন, সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সকল নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হইবে”। জেলা প্রশাসকগণ প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী বিভাগে কর্মরত আছেন। তাই তারা নিজেরা সরাসরি নির্বাচন পরিচালক হতে পারবেন না।
সভাপতির বক্তব্যে এডভোকেট কাজী রেজাউল হোসেনের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব এডভোকেট মো. ইয়ারুল ইসলামের সঞ্চালানায় আলোচনায় অংশগ্রহন করেন বিএলডিপি চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী নাজিমউদ্দিন আল আজাদ, বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, জাগপা সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, গণফ্রন্টের মহাসচিব এডভোকেট আহমেদ আলী শেখ, এনডিএম যুগ্ম মহাসচিব মোমিনুল আমিন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট মো. শফিকুল ইসলাম, যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট মো. আবদুল আউয়াল, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল মোর্শেদ, ন্যাশনাল সিনেটের সদস্য এম এ মুঈদ হোসেন প্রমুখ।