আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট এম. এ. হাশেম রাজু বলেন, এবারের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস আমরা ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশে পালন করছি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট পতন ঘটে আওয়ামী দু;শাসনের। গঠিত হয় অন্তবর্তীকালিন সরকার। গত ১৫ বছর আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনামলে দেশে ছিলোনা কোনো আইনের শাসন। মানবাধিকারের চরম অবনতি ঘটে। ফ্যাসিবাদি সরকার নিজেদের স্বার্থে মানবাধিকার পরিপন্থি হেন কাজ নেই যা করেনি। খুন গুম ছিলো নিত্যদিনের ঘটনা। কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি। সর্বশেষ জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘৃণ্যতম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন শেখ হাসিনা। একবিংশ শতাব্দীতে পৃথিবীর কোন রাষ্ট্রে এত বেশি সংখ্যক ছাত্র-জনতা এমন নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হয়নি। রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে একের পর এক লাশ ফেলে আওয়ামী সরকার মানবাধিকারের লংঘনের শেষ পেরেক ঠুকেছে। এর দায়ে খুনি হাসিনাসহ তার দোসরদের আন্তর্জাতিক আদালতে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতে যা যা করা প্রয়োজন আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তা করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ খুনিদের দল। অতীতে তারা লগি বৈঠা দিয়ে দিনে দুপুরে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করেছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত শাসনামলে দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ২ হাজার ৬৯৯ জন। এ সময়ে গুম হন ৬৭৭ জন, কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন ১ হাজার ৪৮ জন। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের তালিকাসহ ২০২৪ সালের ঘটনা যুক্ত করলে নিহতের সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়ে যাবে। এসব বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম-খুনের ঘটনার মধ্যে নির্যাতনে হত্যা, ক্রসফায়ার, হত্যার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের গুলি, ব্যবসায়ীকে আটক করে মালামাল লুট, নাগরিকদের গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের মাধ্যমে এসব ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। গুম হওয়া ব্যক্তিদের অনেকেই এখনো নিখোঁজ। তবে ফেরত আসা ব্যক্তিদের দেয়া বর্ণনা অনুযায়ী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয়ার পর নিজেদের তারা আবিষ্কার করতেন কোনো এক বদ্ধ রুমে। যা ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত। সেই কুঠুরিতে বছরের পর বছর নিরপরাধ মানুষদের আটকে রেখে ভয়ংকর নিষ্ঠুর নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে।
এম. এ. হাশেম রাজু আরো বলেন, দেশের মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের কাছে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব তুলে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা। ভারতের সাথে মিলে ২০০৯ সালে ৫৭ জন সেনা অফিসারকে হত্যা করেন শেখ হাসিনা। একের পর এক দেশ বিরোধী চুক্তি করে তাদের প্রভু ভারতের সব ধরনের সুযোগসুবিধা নিশ্চিত করেছিল আওয়ামী লীগ। পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে ভারত আশ্রয় দিয়ে তার পরামর্শে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার হীন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। আওয়ামী লীগ ও তার বিদেশী প্রভুদের বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র বন্ধের একমাত্র উপায় হলো তাদের মানবতাবিরোধী অপরাধে তাদের বিচার করা।
ডব্লিউএইচডি-ইউএনডব্লিউপিএ’র প্রেসিডেন্ট এড. ড. রতন কুমার দাসের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মোঃ ফিরোজ আলম সুমনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন ইউএনআইপি’র বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট ড. রাজু সাহা, ইউএনডব্লিউপিএ’র সেক্রেটারী এড. মোঃ উজ্জল হোসাইন, আইএইচআরসি’র পরিচালক ড. শফিকুর রহমান, সহকারি পরিচালক প্রফেসর ড. লিপি আক্তার, অফিস সচিব রাশেদুল ইসলাম, ইউএনআইপি’র এসিট্যান্ট সেক্রেটারি রোজি মজুমদার, ইউএনডব্লিউপিএ’র এসিট্যান্ট সেক্রেটারি মোঃ রাসেল হোসেন, অফিস সম্পাদক ড. মির্জা রাকি, ইউএনআইপি’র এসিট্যান্ট সেক্রেটারি সাংবাদিক জামাল উদ্দিন, আইএইচআরসি’র অফিস সহকারি এড. এমদাদ হোসেন রাসেল, এসএল-এর চেয়ারম্যান তুহিন হালদার, ডব্লিউএইচডি’র এসিট্যান্ট সেক্রেটারি দেবজ্যোতি বালা টুটুল প্রমুখ।