লিখিত বক্তব্যে নেতৃবৃন্দ বলেন, আগামী জুন মাসের ৯ তারিখ ২০২২—২৩ অর্থ বছরের বাজেট জাতীয় সংসদে ঘোষণা করা হবে। এবারেও হয়তো প্রতি বছরের মত একটি গতানুগতিক বাজেট প্রণয়ণ করা হবে। গতানুগাতিক বাজেটে সব সময়ই কৃষকের অধিকার/দাবিসমূহ উপেক্ষিত থাকে। কৃষকের ন্যয্য হিস্যা কখনই নিশ্চিত করা হয় না।
অথচ কৃষি খাতই বস্তুত আমাদের অর্থনীতির প্রধান খাত। অতিমারী কোভিড ১৯ কালে কৃষির গুরুত্ব নতুন করে আবারও প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ্কে করোনাকালে বাঁচিয়ে রেখেছে কৃষি। সুতরাং জাতীয় বাজেটে কৃষি সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাওয়ার দাবী রাখে।
জাতীয় বাজেটের মূল লক্ষ হওয়া উচিত ধনি গরীবের মধ্যে বৈষম্য হ্রাস করা। এটা করতে হলে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের মধ্যে আয় বৈষম্য কমাতে হবে। কিন্তু আমরা দেখতে পাই প্রতি বছর এমন বাজেট প্রণয়ন করা হয় যা ধনিকে আরও ধনি, গরিবকে আরও গরিব বানায়। এ ধরনের গরিব মারার বাজেট প্রণয়নের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
আমরা আরও দেখতে পাই প্রতি বছর বাজেটে দাতা সংস্থার প্রেসক্রিপশনের ছাপ থাকে। ফলে বাজেটে নয়া উদারীকরণের প্রতিফলন স্বরুপ বেসরকারীকরণ, বানিজ্য উদারীকরণ প্রভৃতি প্রশ্নগুলোকে প্রাধান্য দেয়া হয়। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে আমাদের সরকারী সেবা প্রতিষ্ঠান ও শিল্প প্রতিষ্ঠান বেসরকারীকরণ করা হচ্ছে। এতে করে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক বেকার ও সংশ্লিষ্ট কৃষক পরিবারের উপার্জন চিরতরে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চরম অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। অতিমূল্যস্ফীতির চাপে জনজীবনে নাভিঃশ্বাস উঠেছে। দ্রব্যমূল্যের লাগাতার উর্ধ্বগতি সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। সামনের ভয়ংকর দিনগুলোর কথা ভেবে মানুষ আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা হতে পরিত্রাণের পথ চাই। তাই সরকারের যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
অতিসম্প্রতি সিলেট ও সুনামগঞ্জে পাহাড়ি ঢলে হাওড় অঞ্চলের বিশাল এলাকা প্লাবিত হয়ে কৃষকের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রায় প্রতি বছরই ঢল এতদাঞ্চলে বন্যা সংগঠিত করে। এ ধরনের বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের সুনির্দিষ্ট পলিসি থাকা উচিত।
সংবাদ সম্মেলনে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে কৃষকদের স্বার্থে ২১ দফা দা্বিসমূহ পেশ করা হয়ঃ
১। আসন্ন ২০২২—২৩ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেটের ১৫% কৃষি খাতে বরাদ্দ রাখতে হবে;
২। কৃষি উদ্যোক্তা ও সমবায়ে গুরত্ব আরোপ করে কৃষি শিল্প বিকাশে ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখতে হবে;
৩। কৃষি পণ্য আমাদানী হ্রাস করে দেশীয় উৎপাদনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করতে হবে;
৪। বাজেটে কৃষকের জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখতে হবে;
৫। কৃষি উন্নয়নের স্বার্থে খাল—নদী খনন ও নদী ভাঙ্গন রোধে বাজেটে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখতে হবে;
৬। কৃষি ফসল সংরক্ষণে জেলায় জেলায় পর্যাপ্ত সংরক্ষণাগার , যেমন আধুনিক গুদাম ও সাইলে নির্মাণ করতে হবে;
৭। পাহাড়ি ও সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক পৃথক বাজেট বরাদ্দ রাখতে হবে;
৮। হাওড়, চর, বরেন্দ্রাঞ্চল, লবণাক্তাঞ্চল, জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাব কবলিত অঞ্চল ও বন্যাকবলিত অঞ্চলের জন্য পৃথক পৃথক বাজেট বরাদ্দ রাখতে হবে;
৯। ষাট উর্ধ্ব বয়সের সকল কৃষকদের সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মত পেনশন দিতে বাজেটে বরাদ্দ রাখতে হবে;
১০। কৃষকদের চিকিৎসার জন্য পৃথক হাসপাতাল নির্মাণ করতে হবে;
১১। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে;
১২। পরিবেশ—প্রতিবেশ সম্মত টেকসই চাষাবাদ প্রচলন করতে বাজেটে বরাদ্দ রাখতে হবে;
১৩। যুগোপযোগী সংস্কার করে বন্ধ জুটমিল ও সুগারমিল খুলে দিতে বাজেটে বরাদ্দ রাখতে হবে;
১৪। কৃষি ফসলের লাভজনকমূল্য নিশ্চিত করতে হবে;
১৫। অস্বাভাবিক দ্রব্যমুল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে;
১৬। অতিমাত্রায় মূল্যস্ফীতি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে;
১৭। সিলেট ও সুনামগঞ্জসহ বন্যাকবলিত এলাকায় অতিদ্রুত ত্রাণ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে;
১৮। সর্বস্তরের জনগণের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে;
১৯। কৃষির পাশাপাশি সব্জি, মাছ, পশুসম্পদ ও হাঁসমুরগি উৎপাদনে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ রাখতে হবে;
২০। কৃষি উৎপাদনের স্বার্থে কোনভাবেই বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করা যাবে না;
২১। কৃষি খাতের চলমান ভর্তুকি বাড়িয়ে কৃষকের হাতে সরাসরি প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।