অনলাইন ডেস্ক:
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণে উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পাশাপাশি দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তাসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আহ্বান জানিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি বলেছেন, তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারের ফলে সাইবার ক্রাইমের মাত্রাও বেড়ে যাচ্ছে। অনেক সময় বিভিন্ন ইস্যুতে সামাজিক অস্থিরতাও দেখা দেয়। তাই, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে উদ্ভাবন ও হার্ডওয়্যার প্রযুক্তি পণ্যের প্রদর্শনী নিয়ে আজ রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ‘ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো ২০২১’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, কিছু সংখ্যক উদ্যোক্তা ই-কমার্সের নামে ক্রেতাদের সাথে প্রতারণা করছে। মুষ্ঠিমেয় কিছু অসাধু লোকের প্রতারণার জন্য যাতে ই-কমার্সের মতো একটি বিপুল সম্ভাবনাময় খাতের প্রসার কোনোভাবেই থেমে না যায় তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিং করতে হবে।
আব্দুল হামিদ বলেন, করোনার কারণে অনলাইনে কেনাকাটা বহুগুণে বেড়ে গেছে। ই-কমার্স এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক খাত। এই মহামারিকালে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করেই দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম সচল রাখা সম্ভব হয়েছে। ই-কমার্সের প্রতি ক্রেতাদের এ আগ্রহকে ধরে রাখতে হলে ক্রেতাদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে হবে।
অনলাইনে এক ধরনের পণ্য প্রদর্শন করে ডেলিভারি দিচ্ছে নিম্নমানের বা অন্য পণ্য। অনেক সময় অর্ডার নিয়ে পেমেন্ট পাওয়ার পর পণ্য ডেলিভারি না দিয়ে ফেসবুক পেজ বা ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়। ফলে, ক্রেতারা প্রতারিত হচ্ছে এবং অনলাইনে কেনাকাটায় আগ্রহ হারাচ্ছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের বাস্তবায়ন আমাদের চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার শক্তি ও সাহস যোগাচ্ছে। বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা এখন তৈরি করছে রোবোটসহ নানাবিধ সামগ্রী। বাংলাদেশের তরুণরা আন্তর্জাতিক রোবোটিকস ও ব্লকচেইন অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়ে সম্মানজনক ফলাফল অর্জন করছে।
তিনি বলেন, এসব মেধাবী তরুণদের কাজে লাগিয়ে স্থানীয় টেকসই প্রযুক্তির উদ্ভাবন, প্রসার এবং ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশকে আমরা পৃথিবীর বুকে একটি উন্নয়নশীল দেশের মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হবো, ইনশাআল্লাহ।
“দেশ এখন ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের চূড়ান্ত পর্যায়ে। এই সময়ে ‘ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো ২০২১’ এর আয়োজন ডিজিটাল ডিভাইস ও ইনোভেশন খাতে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার চিত্রটি সকলের কাছে তুলে ধরবে বলে আমার বিশ্বাস।” বলেন তিনি।
দূরদর্শী চিন্তা থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিপ্লবে শামিল হওয়ার লক্ষ্যে দেশে বিজ্ঞান, গবেষণা ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ভিত্তি রচনা করেছিলেন তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি জানান, ১৯৭২ সালে তিনি ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) সদস্যপদ লাভের উদ্যোগ নেন এবং ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ আইটিইউর সদস্য হয়।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরসুরী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে কম্পিউটার আমদানীতে শুল্কহার হ্রাস করেন। মোবাইল ফোনের মনোপলি ভেঙে তা সাধারণ মানুষের কাছে সহজলভ্য করেন। এ ছাড়া ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে তিনি ঘোষণা করেন রূপকল্প ২০২১। এই রূপকল্প ২০২১ প্রণয়নের সাথে নিবিড়ভাবে যুক্ত থেকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’কে এর মূল উপজীব্য করতে মূখ্য ভুমিকা পালন করেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সজীব ওয়াজেদ জয়।
আবদুল হামিদ বলেন, ২০০৯ সাল থেকে শুরু হয় ডিজিটাল বাংলাদেশের যাত্রা। এই সময়ে দেশে আইসিটি অবকাঠামো ও কানেক্টিভিটি, দক্ষ মানব সম্পদ, ই-গভর্নমেন্ট, ইন্ডাস্ট্রি প্রোমোশনে গৃহীত অধিকাংশ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হওয়ায় দেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।
তিনি জানান, বর্তমানে বাংলাদেশের ৯৯ শতাংশ এলাকা মোবাইল কভারেজের আওতায়। মোবাইল ফোন ব্যবহারকারির সংখ্যা ১৬ কোটি ছাড়িয়েছে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারির সংখ্যা ১১ কোটির উপরে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছে গেছে দেশের প্রত্যন্ত এলাকাসহ ৩,৬০০ ইউনিয়নে।
বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি বিভাগ, বাংলাদেশ হাই-টেক কর্তৃপক্ষ, ইনোভেশন ডিজাইন অ্যান্ড এন্টারপ্রেনারশিপ একাডেমি, এটুআই, স্টার্টআপ বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
এতে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এ কে এম রহমতউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।