অনলাইন ডেস্ক:
গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বাংলাদেশে দিনে দিনে কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে আশঙ্কা করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ শুক্রবার সকালে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের জাতীয় সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা তুলে ধরতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন। গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের চতুর্থ জাতীয় সম্মেলননের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়।
ফখরুল বলেন,‘‘আমরা একটা কঠিন সময় পার হচ্ছি, একটা সংকট মুহুর্ত পার হচ্ছি। আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজকে অন্যায় মামলায় সাজা দিয়ে তাকে আটক করে রাখা হয়েছে। তিনি অসুস্থ। এই দুই-তিনদিন আগে তাকে আরো ৬ মাস তার সাজা স্থগিত করছে বলছে। কোথায় সাজা স্থগিত করছে?”
তিনি বলেন, ‘‘আপনারা তাকে(খালেদা জিয়া) গৃহবন্দি করে রেখেছেন। তার চিকিতসার জন্য বাইরে যেতে চেয়েছেন সেটাও আপনারা দেন নাই। আপনারা তাকে বাংলাদেশে রেখেই চিকিতসা করতে বলছেন। যেখানে তার চিকিতসা অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে দিনে দিনে।”
খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে তিনি বলেন, ‘‘আমরা অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। আমরা এর নিচে কিছু চাই না। মুক্তি দিতে হবে, নিঃশর্তভাবে মুক্তি দিতে হবে।”
পাশাপাশি অন্যান্য নেতাকর্মী ও তারেক রহমানের মামলা প্রত্যাহার দাবি করে তিনি বলেন, ‘‘আমরা আমাদের যেসব সমস্ত নেতা-কর্মী বন্দি আছেন তাদের সকলে মুক্তি দিতে হবে। আমাদের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ৩৫ লক্ষ মামলা আছে সেই প্রত্যাহার করতে হবে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে।”
সকাল ১০টায় মহানগর নাট্যমঞ্চের প্রাঙ্গনে জাতীয় পতাকা ও দলীয় উত্তোলন, রঙিন বেলুন ও সাদা কবুতর উন্মুক্ত করে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব ও আহবায়ক শামসুজ্জামান দুদু। এই সময়ে জাতীয় সঙ্গীত এবং পরে দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। টানা ২২ বছর পর কৃষক দলের এই জাতীয় সম্মেলন হচ্ছে। সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিলো ১৯৯৮ সালের ১৬ মে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আপনারা অন্যায়ভাবে ক্ষমতায় বসে আছেন, দখল করে বসে আছেন। কি তফাত আপনাদের পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সঙ্গে আমাকে বুঝাবেন একটু? আমি পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সাথে আপনাদের কোনো তফাত দেখি না। তারাও জোর করে বন্দুক দিয়ে মানুষকে মেরে ক্ষমতা দখল করে বসেছিলো। আপনারা আজকে সেই একই কায়দায় মানুষকে হত্যা করে, নির্যাতন করে, জোর করে আপনারা ক্ষমতায় বসে আছেন।”
‘‘এই সরকার এখন পর্যন্ত কৃষকদের জন্য এমন কিছু করেনি যা দিয়ে তারা বলতে পারবে আমরা কৃষকদের জন্য এই এই কাজগুলো করেছি। কোবিড-১৯ এর প্রণোদনা দিয়েছে বিভিন্ন সেক্টারে, কৃষি ক্ষেত্রেও দিয়েছে কিন্তু কৃষি ক্ষেত্রের টাকাগুলো তাদের নেতারা (আওয়ামী লীগ) পকেটে ভরে নিয়েছে। আড়াই হাজার টাকা করে অনুদান দেয়ার কথা ছিলো সেটাও তারা পকেটে ভরে নিয়েছে। এই সরকার লুটেরা সরকারে পরিণত হয়েছে।”
ফখরুল বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ এই দেশটাকে পৈত্রিক সম্পত্তি করে নিয়েছে। এই যে আওংয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তিনি খুব সুন্দর সুন্দর কথা বলেন। চমতকার চমতকার আসনে বসে, ফিরোজা রঙের এ্কটা আসনে বসে তিনি প্রতিদিন বিএনপির বিরুদ্ধে বিষোধগার করতে থাকেন, প্রতিদিন তিনি বিএনপিকে ধমক দেন, শিক্ষা দেন। আরে আপনি আগে নিজের ঘরকে শিক্ষা দেন।”
‘‘আপনার ভাই কাদের মির্জা সাহেব যে সমস্ত কথা আপনার সম্পর্কে বলে, আপনাদের নেতাদের সম্পর্কে বলে সেটার পরে তো আপনাদের থাকার কথা না, পদত্যাগ করা উচিত। আপনারা নিজের ঘরে নিজেরা মারামারি করে, দলাদলি করে ইতিমধ্যে দুইজনকে হত্যা করেছেন-একজন সাংবাদিক, একজন রাজনৈতিক কর্মী। কোনো বিচার নাই। এটাই সমগ্র বাংলাদেশের চিত্র। আমরা দেখেছি, কিভাবে আজকে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে, সমগ্র দেশটাকে তাদের দলীয় সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছে এবং দেশটাকে তারা শোষন করছে। হাজার হাজার কোটি টাকা পাঁচার করছে….। এই দেশটাকে তারা লুটেরা স্বর্গ রাজত্ব তৈরি করেছে।”
কৃষক দলের আহবায়ক শামসুজ্জামান দুদুর সভাপতিত্বে ও সদস্য এসকে সাদীর পরিচালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কৃষক দলের সৈয়দ মেহেদি আহমেদ রুমি, একেএম মোয়াজ্জেম হোসেন, নাজিমউদ্দিন, আফতাব উদ্দিন আহমেদ মন্ডল, জামালউদ্দিন মিলন, এমএ হালিম, নাসির হায়দার, জিয়াউল হায়দার পলাশ, লুতফুর রহমান, মাহমুদুল হক সানু, শরীফুল ইসলাম মোল্লা, মহসিন আহমেদ তুষার, আনোয়ারুল হক, এনায়েতুল্লাহ খোকন, রবিউল হাসান পলাশ, সালাহউদ্দিন খান মিলকী, নাসিরউদ্দিন আহমেদ বাচ্চু, রফিকুল আলম রফিক, মাহবুবুর রহমান আউয়াল, আনোয়ারুল ইসলাম বাদশা বক্তব্য রাখেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ করেন কৃষক দলের সদস্য সচিব হাসান জাফির তুহিন এবং শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন তকদির হোসেন জসিম।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শহিদুল ইসলাম বাবুল, অনিন্দ্র্য ইসলাম অমিত, আবদুল খালেক, আমিরুজ্জামান শিমুল, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মতস্যজীবী দলের আবদুর রহিম ও ছাত্র দলের ইকবাল হোসেন শ্যামল উপস্থিত ছিলেন।