নিজস্ব প্রতিবেদক◊◊
বাংলাদেশ গণমুক্তি পার্টির কেন্দ্রীয় পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত বাংলাদেশের গণতন্ত্রের রূপ ও প্রকৃতি বাস্তবায়নের পন্থা বিষয়ে সর্বজনীন গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত করা হয়।
আজ (৬ অক্টোবর) শুক্রবার সকাল ১০ টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ গণমুক্তি পার্টির উদ্যোগে এ সভার আয়োজন করা হয়েছে।
প্রধান আলোচক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, রাষ্ট্রচিন্তক, রেনেসাঁস সাধক, বাংলাদেশ গণমুক্তি পার্টির তাত্ত্বিক নেতা ও সর্বজনীন গণতন্ত্রের প্রবর্তক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, নিঃরাষ্ট্রবাদ বা এনার্কিজম এর ধারণা প্রাচীনকাল থেকেই কিছু লোকের মধ্যে ছিল। ঐ ধারার চিন্তার মধ্যেও বিবর্তন আছে। এরা সরকারবিহীন ও কর্তৃপক্ষবিহীন সমাজ ব্যবস্থা ও জীবনপদ্ধতি কামনা করেছেন। অপর্দিকে কর্তৃপক্ষ বা সরকার অপরিহার্য- এই মতও প্রাচীনকাল থেকেই আছে। নানারকম হীন-স্বার্থাম্বেষী ও কায়েমি স্বার্থবাদী চিন্তাও এই দুই ধারার মধ্যেই পাওয়া যায়। গত অন্ত দুই শতাব্দী ধরে গ্রীক- রোমান-ইউরো-আমেরিকান ভাবধারা মানবজাতির উপর কর্তৃত্ব করে চলছে। ১৯৮০’র দশক থেকে জীবপ্রযুক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের আরো নানা উপাদানের সুযোগ নিয়ে মানবজাতি বিরাটভাবে উপকৃত হয়েছে। তবে এতে চলমান রাষ্ট্রব্যবস্থা ও রাজনৈতিক ভাবধারা বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে গেছে। মানুষের মনোজগতে কর্তৃত্ব করছে কায়েমি স্বার্থবাদ ও পুরাতন চিন্তা-ভাবনার নানা বিকৃত রূপ। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র এবং জাতীয়তাবাদ ও তার সম্পূরক আন্তর্জাতিকতাবাদ গত প্রায় চার দশক ধরে এখন আর কোনো সুষ্ঠুরূপে নেই। এ অবস্থায় রাষ্ট্রচিন্তা ও রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে হবে। এখন গণতন্ত্রের যে রূপ ও প্রকৃতি দেখা যায় তাকে নব্যউদারবাদ নাম দেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে অর্থনীতি ও সংস্কৃতির ধারণাও আছে। এই নব্যউদারবাদ মূলত সাম্রাজ্যবাদীদের ও দরিদ্রবিশ্বে তাদের অনুসারী ধনিক-বনিকদের ও আমলাদের গণতন্ত্র। এটা সুশৃঙ্খল রূপ নিয়ে নেই। আমাদের ধারণা বাংলাদেশের জনগণের জন্য দরকার সর্বজনীন গণতন্ত্র। সর্বজনীন কল্যাণের বাস্তব সম্মত নীতিমালা মালা এবং দলভিত্তিক আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের সরকার প্রতিষ্ঠা করে সর্বজনীন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যাবে। এটা রাতারাতি করে ফেলা যাবে না, পর্যায়ক্রমে চিন্তা ও কর্মের মধ্যে দিয়ে সাফল্য অর্জন করতে হবে। বুঝতে হবে কোনো ব্যবস্থাই সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত করা যায় না। যে ব্যবস্থা ত্রুটি কম এবং কল্যাণ বেশি সেই ব্যবস্থা নিয়েই এগোতে হবে এবং প্রগতি সাধন করতে হবে পর্যায়ক্রমে। এর জন্য সাধনা ও সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। উন্নত রাজনৈতিক দল গঠন এবং গণপ্রতি সুষ্ঠ নির্বাচন অপরিহার্য বাংলাদেশে এখন যে চরিত্রের রাজনৈতিক দল আছে তার কোনোটি দিয়েই সর্বজনীন গণতন্ত্রের দিকে এগোনো যাবে না। সর্বজনীন কল্যাণে নতুন রাজনৈতিক চিন্তা, পরিকল্পনা ও চিন্তাধারা দরকার। দরকার নতুন নেতৃত্ব। আভিজাত নেতৃত্ব স্বতঃ স্ফুর্তভাবে হবে না, জনগণের দিক থেকে গড়ে তুলতে হবে। ঘুমন্ত জনসাধারণকে জাগাতে হবে চিন্তা ও কর্মের মধ্যে দিয়ে। অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন বাংলাদেশে বর্তমান গণতন্ত্র বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। তিনি এই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার জন্য গুরুত্বারোপ করেন। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সারধারণ সম্পাদক সাইফুল হক অবাধ, নিরপেক্ষ ও তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা বলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠ ও গ্রহণযোগ্য হবে না। আরো বক্তব্য দেন বাংলাদেশ গণমুক্তি পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা ডা. এনামুল হক এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। সভা সঞ্চালনা করেন ইঞ্জিনিয়ার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান।
বাংলাদেশ গণমুক্তি পার্টির আহ্বায়ক এম আলীম সরকার সভাপতির বক্তব্যে বলেন, দেশে নিত্যপণ্যের মূল্য যেভাবে গত দুই বছর হলো অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে সেভাবে কৃষক-শ্রমিক মেহনতি সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়েনি। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারনে কৃষক-শ্রমিক মেহনতি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। দেশে এক তৃতীয়াংশ মানুষ খেতে পাচ্ছে না। ৭০ ভাগেরও বেশি মানুষ পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। কৃষক-শ্রমিক মেহনতি সাধারণ মানুষ বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে কথা বলতে পারছে না। অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট তৈরী করে মেহনতি সাধারণ মানুষের পকেট থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে নিচ্ছে। জাতি ও রাষ্ট্র এদের নিকট জিম্মি হয়ে পড়েছে। সরকার এই সিন্ডিকেটদের লালন পালন করছে। তা না হলে সরকার এই সিন্ডিকেটদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না। তাহলে কি সরকারের চেয়ে সিন্ডিকেটদের হাত অনেক শক্তিশালী। জাতি এই সিন্ডিকেটদের হাত থেকে পরিত্রাণ চায়। সভাপতি এম এ আলীম সরকার আরো বলেন সর্বজনীন গণতন্ত্র হলো কৃষক, শ্রমিক, নিম্ন-মধ্যবিত্ত, উচ্চ-মধ্যবিত্ত ও জাতীয় ধনিকদের অধিকার, মর্যাদা ও ন্যায় স্বার্থ প্রতিষ্ঠার এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ, প্রগতিশীল অগ্রযাত্রার গণতন্ত্র। সর্বজনীন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে স্বর্গীয় সমাজ, স্বর্গীয় রাষ্ট্র ও স্বর্গীয় বিশ্বায়ণ কায়েম হবে। আমরা মস্কো, পিকিং ও দিল্লিপন্থি নই, আমরা ঢাকাপন্থি। ঢাকা থেকে বিশ্বে সর্বজনীন গণতন্ত্রের কার্যক্রম চলবে। আমরা বাংলাদেশ গণমুক্তি পার্টির কাজ মাত্র আরাম্ভ করেছি। আমারা নতুন বাংলাদেশ, নতুন বিশ্ব গড়ে তুলতে চাই । জয় হোক কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষের ! জয় হোক বাংলাদেশ গণমুক্তি পার্টির।
Tags: সর্বজনীন