শেরপুর প্রতিনিধি♦♦
শেরপুরে অতি বর্ষন ও উজান থেকে নেমে আসা আকস্মিক ভয়াবহ পাহাড়ি ঢলের পানি কেরে নিলো লক্ষাধিক কৃষকের বেঁচে থাকার স্বপ্ন।
জানা যায়, গত কয়েক দিনের অতি বর্ষন ও সীমান্তের নালিতাবাড়ী উপজেলার ভোগাই- চেল্লাখালি, ঝিনাইগাতী উপজেলার সোমেশ্বরী ও মহারশি নদীর উজান থেকে নেমে আসা আকস্মিক সর্বনাশা পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে লক্ষ্যাধিক কৃষকের স্বপ্ন আমন ফসলের ক্ষতি সাধিত হয়।
বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে ধীরগতিতে। কিন্তু স্বপ্ন হাড়ানো এসব কৃষকও কৃষক পরিবারের সদস্যদের কান্না ও আহাজারিতে শেরপুর জেলাসদরসহ ৫ উপজেলার আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে।
তাদের কান্নাও আহাজারি পৌঁছাচ্ছে না কারো কান পর্যন্ত।
তারা কি দিয়ে ধার দেনা পরিশোধ এবং পরিবারের সদস্যদের জীবিকা নির্বাহ করবেন এ চিন্তায় এখন দিশেহারা লক্ষাধিক কৃষক পরিবার।
জেলার বিভিন্ন স্থানে সরেজমিনে অনুসন্ধানে গিয়ে কৃষকদের সাথে কথা হলে এসব তথ্য জানা গেছে।
শেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের হিসাব মতে জেলায় কৃষক পরিবারের সংখ্যা ২লাখ ৯৪ হাজার ৫৯১ জন।
জানা যায়, খাদ্যে উদ্বৃত্ত শেরপুর জেলায় চলতি আমন মৌসুমে জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর জেলা সদরসহ ৫টি উপজেলায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ৯৩,লাখ ৫৯০ হাজার হেক্টর জমিতে।
তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় কৃষকরা সঠিক সময়ে তাদের ইচ্ছেমত আমন ধানের চারা রোপন করতে সক্ষম হয়। আমন আবাদ ঘরে তুলতে হাজার হাজার কৃষক ধার দেনা করে রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে আমনের চারা রোপন করেন।
আমন ফসল ঘরে তুলতে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর ও সরকারের পক্ষ থেকেও নেয়া হয়েছিল নানামুখী পদক্ষেপ।
রাসায়নিক সার- কিটনাশক ও দেখা দেয়নি শ্রমিক সংকট । দেখা দেয়নি কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ। কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে প্রান্তিক কৃষকদের প্রনোদনা দেয়ার পাশাপাশি ধান গাছের রোগবালাই দমনে কৃষকদের দেয়া হয় উন্নতমানের প্রশিক্ষন।
সঠিক সময়ে চারা রোপন, কৃষি ত্বাত্তিক পরিচর্যা করানোর জন্য পরামর্শ প্রদান, সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হয়। স্বল্প মেয়াদী ধানের আবাদ বৃদ্ধি করা হয়। কৃষি বিভাগের নানামুখী পদক্ষেপে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আবাদ হয় ৯৩ লাখ ৭০৮ হেক্টর জমি।
এরমধ্যে শেরপুর সদর উপজেলায় ২৪ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমি, নালিতাবাড়ী উপজেলায় আবাদ হয় ২৩ হাজার ২৫৩ হেক্টর জমিতে, শ্রীবরদী উপজেলায় ১৭ হাজার ৯ ৫৪ হেক্টর জমিতে, ঝিনাইগাতী উপজেলায় আমন আবাদ হয় ১৪ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমি, নকলা উপজেলায় আমন আবাদ হয় ১৩ হাজার ১১১ হেক্টর জমিতে।
উল্লেখযোগ্য ধানের প্রজাতির মধ্যে হাইব্রীড জাতীয় ধানিগোল্ড, এ -২, ৭০০৬, উইন ২০৭, ব্রীধান ৬১,৬২,৭১,৭২,৭৫,৮৭,১০৩ছাড়াও পাইওনিয়ার ও মুক্তি।
স্থানীয় জাতের মধ্যে , তুলসিমালা ও চিনিশাইল।
উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৪ লাখ ৩৮ হাজার ৯ মেট্রিকটন ধান। তবে এ লক্ষ্য মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার ও আসা ছিলো কৃষক ও কৃষি বিভাগের
আসায় বুক বেধেছিল কৃষকরা। ইতিমধ্যেই কৃষকদের স্বপ্ন ধান গাছে থোড় হয়। কোন কোন স্থানে ধান বের হয়। আবার আগাম জাতের ধান কাটাও শুরু হয়। কৃষকরা চলতি মৌসুমে আমনের বাম্পার ফলনের আসায় বুক বেধে মাঠে কাজ করে আসছিলেন।
সবুজে ছেয়ে যায় ফসলের মাঠ। চার দিকে তাকালে চোখে পরতো সবুজের সমাহার। যতদুর দু’চোখ যেতো শুধু ছিল সবুজের হাতছানি। আমন ফসলের মাঠের দিকে তাকালে যে কেউ সবুজের মায়ায় পড়ে যেতো।
আমন ফসলের বাম্পার ফলনের আসা করছিলেন কৃষক ও কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর।
কিন্তু ৩ অক্টোবর শুক্রবার জেলার সর্বত্র নদনদী গুলোতে উজান থেকে নেমে আসা আকস্মিক সর্বনাশা পাহাড়ি ঢলের পানি কেরে নেয় লক্ষাধিক কৃষকদের স্বপ্ন আমন আবাদ।
পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে নদ-নদীগুলোর বন্যানিয়ন্ত্রন বাঁধ ভেঙ্গে শতশত একর ফসলি জমিতে বালুর স্তর পড়েছে।
ঢলের পানিতে নিমজ্জিত হয়ে ৫ উপজেলার ৫০ হাজার হেক্টর জমির আমন আবাদ ও ৩ হাজার হেক্টর জমির শাকসবজি বাগানের ক্ষতি সাধিত হয়।
কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের হিসাব মতে লক্ষাধিক কৃষকের ৫০০ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি সাধিত হয়েছে। তবে বেসরকারিভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো বেশি হতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
ক্ষতিগ্রস্ত লক্ষাধিক কৃষক ও কৃষক পরিবার তাদের বেঁচে থাকার স্বপ্ন আমন ফসলের ক্ষতি সাধিত হওয়ায় তারা এখন দিশেহারা।
ডাকাবর গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন ধার দেনা করে এক একর জমিতে আমন ধান রোপন করেছিলাম। কিন্তু পাহাড়ি ঢলের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সে এখন দিশেহারা,ডেফলাই গ্রামের ইউসুফ আলী, মাটিয়াপাড়া গ্রামে আবেদ আলী, দীঘিরপাড় গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম, নওকুচি গ্রামের রমজান আলী,জবেদ আলীসহ আরো অনেকেই জানান পাহাড়ি ঢলের পানিতে তাদের আমন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তারা এখন দিশেহারা। তাদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সহজ স্বর্থে ব্যাংক ঋনের পাশাপাশি সরকারি সাহায্য সহযোগিতার দাবি জানিয়েছেন।
শেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর খামারবাড়ির অতিরিক্ত উপপরিচালক কৃষিবিদ হুমায়ুন কবির বলেন অতি বর্ষন ও জেলার সীমান্তের নদীগুলো দিয়ে উজান থেকে নেমে আসা আকস্মিক পাহাড়ি ঢলের পানিতে নিমজ্জিত হয়ে লক্ষাধিক কৃষকের আমন ফসল ও শাকসবজি বাগানের ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
এতে ৫০০ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সংখ্যা ও ক্ষতির পরিমান জানিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়কে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান । তিনি বলেন নিচু এলাকাগুলো থেকে ঢলের পানি নামছে ধীরগতিতে এতে ক্ষতির পরিমান আরো বাড়তে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পূনর্বাসনের ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণসহ তালিকা সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে সরকারী বরাদ্দ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। শেরপুরের প্রশাসক তরফদার মাহবুবুর রহমান বলেন গত দুদিন থেকে বৃষ্টির না হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির আরো উন্নতি হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন দ্রুতই পানি নেমে যাবে দুর্ভোগ রাঘব হবে জনগণের। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি সাহায্য সহযোগিতার ও আশ্বাস দেন তিনি।
Tags: ভয়াবহ