মো.মহসিন রেজা,শরীয়তপুর।।
শরীয়তপুরের কিশোররা ভয়ঙ্কর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। ইভটিজিং, মাদক ব্যবসাসহ বড় অপরাধ ঘটছে তাদের দ্বারা। করোনাকালীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠছে কিশোর গ্যাং। যে বয়সে শিশু-কিশোদের লেখাপড়া আর খেলাধুলায় মনোনিবেশ হওয়ার কথা সেই বয়সে তারা ফৌজদারী অপরাধের আসামী হয়ে পালিয়েও বেড়াচ্ছে। এতে করে হুমকির মুখে পড়ছে এই অঞ্চলের কিশোরদের আগামীর সম্ভাবনা। কিন্তু এসবের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহীনির জোরালো কোন পদক্ষেপ না থাকায় তাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এদিকে- সম্প্রতিক কিছু ঘটনা সূত্র ধরে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, শহর থেকে গ্রামের চরাঞ্চল পর্যন্ত বেশির ভাগ এলাকায় বখাটেদের সঙ্গে স্থানীয় তরুণ-যুবকদের যোগাযোগে গড়ে উঠছে একাধিক গ্রুপ। আর এসব কিশোর যুবকদের সেল্টার দিচ্ছে স্থানীয় কিছু কথিত প্রভাবশালী ব্যক্তি। এতে করে তাদের প্রভাব বিস্তারের মাত্রাও বেড়েছে কয়েকগুন। তাদের এই প্রভাব বিস্তারের ফলে আক্রমনের শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ সহ গণমাধ্যম কর্মীরাও। গত ২০ সেপ্টেম্বর জেলা শহরের পালং স্কুল সংলগ্ন এক গৃহবধুকে প্রকাশ্যে শ্লীলতাহানী ও মারধর করে স্থানীয় নাজমুল বাহীনি গ্যাং। এসময় ওই নারী প্রাণে বাঁচতে দৌড়ে পাশের একটি রড সিমেন্টের দোকানে ঢুকে পড়ে। যদিও সেই নারীকে বাঁচাতে গিয়ে বেপোরয়া কিশোর গ্যাং নাজমুল বাহীনির হামলা ও মারধরের শিকার হয় ওই দোকানের মালিক এটিএন বাংলা, এটিএন নিউজ ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের রিপোর্টার সিনিয়র সাংবাদিক রোকনুজ্জামান পারভেজ। এ ঘটনায় পালং মডেল থানায় ওই গ্যাং বাহিনীর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হলেও এজাহার ভুক্ত আসামীদের পাঁচ দিনেও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এ নিয়ে জেলার সংবাদকর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। এছাড়াও অনেক সময় গ্রুপিংয়ে দ্বিধাদ্বন্ধে উভয়পক্ষ এভাবেই জড়িয়ে পড়ছে সংঘর্ষে। যা শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগে প্রতিদিন ৪/৫টি সংঘর্ষ ও মারপিটে আহত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। কিন্তু হাসপাতালের রেজিস্ট্রার খাতায় এ সকল ঘটনায় (পুলিশ কেস) সিল করা থাকলেও সংশ্লিষ্ট থানায় এবিষয়ে বেশিরভাগ তথ্য পাওয়া যায়নি। যদিও পরবর্তীতে এরই সূত্র ধরে বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছে স্থানীয় বাসিন্দারা। অন্যদিকে- বর্তমানে শরীয়তপুর জেলা শহরের অলিতে গলিতে এইসব গ্যাং বাহিনীর মাধ্যমেই মিলছে মাদকের উপস্থিতি। পালং এলাকায় ইতিমধ্যে র্যাব-৮ এর কয়েকটি অভিযানে বিপুল পরিমান ইয়াবা ট্যাবলেট ও মাদকদ্রব্য উদ্ধারের ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা। ফলে ক্রমেই বেড়ে চলছে কিশোর ও যু্বকদের ভয়াবতা। যদিও এসবের জন্য সামাজিক অবক্ষয়, আইনী দুর্বলতা, পরিবারের নজরদারী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা ও স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতাই মূল কারণ হিসেবে মনে করেন সচেতন মহল। শরীয়তপুর প্রেসক্লাব সভাপতি অনল কুমার দে,শরীয়তপুর ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শহীদুজ্জামান খান ও সহ-সভাপতি মাহাবুবুর রহমার’সহ অনেকে জানান, শরীয়তপুরে কিশোর গ্যাং বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এই গ্যাং স্টাররা অলিগলিতে মাদক বিক্রি থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত। এরপরও তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকার বিষয়টি খুবই রহস্যজনক। কয়েকদিন আগে এসকল গ্যাং বাহিনীর হাতে আমাদের একজন সহকর্মী গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। কিন্তু মামলা হলেও পুলিশ আসামী গ্রেফতারে তেমন তৎপরতা লক্ষ করা যায়নি। তাদের এমন আচরণে আমাদের বিস্মিত ও ক্ষুব্দ করেছে। এ সকল গ্যাং বাহিনীকে শরীয়তপুর থেকে নিমূল করতে পুলিশি অভিযান আরও জোরদার করার আহব্বান সকলের। সদরের ‘পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যদি কেউ কোন এলাকায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটায় আমাদের কাছে সংবাদ আসে দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে আইনআনুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়। বর্তমানে গাং স্টারদের নিয়ন্ত্রনের তাদের চেষ্টা চলছে বলেও জানান ওসি। এবিষয়ে জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম বলেন, অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আপরাধীরা যতো শক্তিশালী হোক কাউকে ছাড় দিবে না পুলিশ। যারাই সংঘর্ষে জড়াচ্ছে, মাদকদ্রব্য পাওয়া যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য, শরীয়তপুর জেলা পুলিশের আগস্ট মাসের মাসিক অপরাধ পরিসংখ্যানের তথ্য অনুযায়ী জেলার সাঁতটি থানায় সর্বমোট রুজুকৃত মামলা- ১০২ টি, গ্রেফতারকৃত আসামীর সংখ্যা- ২১৩ জন, যানবাহনের মামলা- ১৮১ টি, যানবাহনের জরিমানা আদায়- ৬ লক্ষ ৩৬ হাজার ৩৫০/- টাকা এবং ৭৩৬ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ১ কেজি ৪৭৫ গ্রাম গাজা এবং ৩৫ পুড়িয়া হেরোইন উদ্ধার করা হয়েছে।