স্টাফ রিপোর্টার:
পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলায় দক্ষিণ পূর্ব পশারীবুনিয়া গ্রামে সরেজমিনে স্কুল নেই, মাসিক বেতন উত্তালনের ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে শিক্ষকের বিরুদ্ধে। জানাগেছে, সরকারী ১৬৫নং দক্ষিণ পূর্ব পশারীবুনিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় নামের সরকারী তালিকায় অন্তর্ভূক্ত রয়েছেন প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু সরেজমিনে এরকমের স্কুলের কোন প্রকার অংশ খুঁজে পাওয়া যায়নি এখন পর্যন্ত। সরেজমিন ঘুরে দেখাগেছে, সরকারী তালিকা ভুক্ত অনুযায়ী যে স্কুলের ঠিকানা বিদ্যমান রয়েছেন। সেই সকল ঠিকানা অনুপাতে স্কুল নেই। আছে নানা প্রকার গাছ-গাছালিতে ভরপুর।
স্থানীয়দের মতে জানাগেছে, ওই গাছ-গাছালির মধ্যে একটি মুরগির খামারের মতো টোং ঘর উঠিয়ে, ৮/১০ বছর আগে তার মধ্যে এলাকার ২/৩ জন ছেলে-মেয়ে পড়াশুনা করাতেন কয়েকটি মেয়ে। সেই সময়ে জানতে পারি এখানে একটি স্কুল রয়েছে। কিন্তু এধরনের সরকারী ১৬৫নং দক্ষিণ পূর্ব পশারীবুনিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় নামের স্কুল এই এলাকায় কোন প্রতিষ্ঠান নেই বলে জানান তাঁরা।
সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রধান শিক্ষক সীমা গোলদার(৪০) স্বামী সুভাষ চন্দ্র হালদার, সহকারী শিক্ষক রীনা রানী (২৯) পিতা নির্মল চন্দ্র হালদার, উভয় সাং পশারী বুনিয়া, সহকারী শিল্পী আক্তার(৩৬) স্বামী তপু পঞ্চায়েত, সাং আতরখালী ও শাহনাজ বেগম(৩৮) পিতা অজ্ঞাত, সাং রাজপাশা এবং প্রতারক জালিয়াতি চক্রের মূলহোতা সুভাষ চন্দ্র হালদার( ৫০) পিতা মৃত ললিত হালদার ও উপজেলার শিক্ষা অফিসার জালাল উদ্দিন খান, থানা ভান্ডারিয়া, জেলা পিরোজপুর। এদের মধ্যে থাকা শিক্ষক কর্মচারীরা স্কুল জালিয়াতি করণে ভুয়া শিক্ষক নিয়োগ হয়ে, এক কালিন মোট ৫২ লক্ষ টাকা সরকারী টাকা উত্তালন করেন । এবং এদের বিরুদ্ধে জেলার বিজ্ঞ আদালতে জালিয়াতি মামলা প্রদান করাতেও, তাঁরা কোন অংশে থেমে নেই । সুতরাং তাঁরা সে ক্ষেত্রে এখনও মাসিক বেতন উত্তালন করে যাচ্ছেন। এবিষয়ে জেলার প্রতিটি দপ্তরে দুর্নীতির অভিযোগ প্রদান করলেও । সরকারী কর্মচারীরা কোন প্রকার আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না। জানাগেছে, মামলার এজাহারে উপজেলার শিক্ষা অফিসার আসামীসহ অনেকে এধরনের দুর্নীতির সাথে যুক্ত রয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, দীর্ঘ বছর ধরে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ আব্দুস্ সালাম মিয়া নামে “ ১৬৫নং দক্ষিণ পূর্ব পশারীবুনিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়” নামের একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে আসছিলেন। এরিমধ্যে যুক্ত হয়ে পার্শ্ববর্তী এলাকার চিহ্নিত জালিয়াতি চক্রের মূলহোতা সুভাষ চন্দ্র , প্রতিষ্ঠতার স্কুলের সম্পূর্ণ কাগজ জালিয়াতি করে। প্রষ্ঠানের নামে যতপ্রকার সরকারী তহবীল রয়েছেন। ততপ্রকার সরকারী তহবীল সরকারী দপ্তরের কর্মচারীদের ম্যানেজ করে। লক্ষ লক্ষ টাকার দুর্নীতি বনে গেছেন সুভাষ চক্রটি। জানাগেছে, এধরনের দুর্নীতি ও অপকর্মের সাথে লিপ্ত থেকে সুভাষ নামের চক্রটি অনেক প্রতারণার সাথে যুক্ত রয়েছেন। সুতরাং ওই স্কুল জালিয়াতির মুখোশ উম্মচন হলে মিডিয়া ও পত্র-পত্রিকায় তাঁর বিরুদ্ধে। তাতে তিনি দৌঁড়ঝাঁপ শুরু করেন। স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। নিজেকে বাঁচার চেষ্টা ও পার পাওয়ার জন্য। তথাপি এখন মূলত বিষয়টি হযবরল অবস্থায় রয়েছেন বলে জানাগেছে।
আরও জানাগেছে, এ নিয়ে সম্প্রতি পিরোজপুর বিশেষ দায়রা জজ আদালতে, সরকারী কর্মচারীসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে স্পেশাল দুর্নীতি দমন আইনে মামলা দায়ের করেন বাদী আরিফ বিল্লাহ। ১৬৫নং দক্ষিণ পূর্ব পশারিবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সীমা রানী গোলদার তার স্বামী প্রতারক সুভাষ চন্দ্র । বিদ্যালয়ের কাগজ পত্রে প্রতিষ্ঠতা সভাপতি আব্দুস্ ছালাম মিয়া নামের স¦াক্ষর জালিয়াতি করে, বিভিন্ন ফান্ডের সরকারী অর্থ ও স্কুলের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। বিদ্যালয়ের নামে প্রতিষ্ঠতার নামীয় নিজ ভূমিতে স্কুল নির্মাণ করা হয়। কিন্তু নির্মাণাধিন প্রতিষ্ঠানের ভূমির মূল দলিল পত্র এখনো প্রদান করা হয়নি। তথাপি প্রতারক চক্র সুভাষ ভান্ডারিয়া সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয় হতে ১৯৯৯ সালের ৩০ নভেম্বর একটি জাল দলিল তৈরী করে স্কুলের নামে প্রদান করেন। প্রকৃত পক্ষে ওই বিদ্যালয়ের নামে কোন জমি নাই এখন পর্যন্ত। সকল প্রকারই ভূয়ারুপে চলমান রয়েছে। প্রকৃত মালিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুল সালম মিয়া। বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ থেকে শুরু করে বিদ্যালয় জাতীয়করণ পর্যন্ত তাঁদের অনেক অবদান রয়েছে। তাই প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ কাগজ-পত্র জালিয়াতি করেন সুভাষ। এমনকি প্রতিষ্ঠান ছিলো ১৬৫নং এখন লাগিয়েছে ১৬৪নং ব্যানার।
সূত্রমতে, ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সীমা রাণী গোলদার মঠবাড়ীয়া উপজেলার বাসিন্দা এবং মূল প্রতারক চক্র সুভাষ চন্দ্র হালদার(৫৫) পিতা মৃত ললিত হালদার, সাং পশারীবুনিয়া, থানা ভান্ডারিয়া, জেলা পিরোজপুর। প্রতারক সুভাষ ১৯৯৫ সালে ১৮ জুলাই অবৈধভাবে ওই বিদ্যালয়ে নিয়োগ গ্রহণ করেন সহকারী শিক্ষক হিসেবে, পরবর্তী সময়ে তিনি প্রধান শিক্ষক হিসেবে আবেদন করেন। তবে বিদ্যালয়ে রেকর্ড পত্রে দেখা যায় প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ এবং যোগদান একই তারিখে। নিয়োগের ১০ বছর পর ২০০৫ সালে স্থানীয় সুভাষ হালদারের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। পরবর্তীতে ভান্ডারিয়া উপজেলায় ভোটার হয়ে বিদ্যালয়ের কাগজপত্রে পিতার নামের স্থলে স্বামীর নাম ব্যবহার করেন, যা সম্পূর্ন অবৈধ। এমনকি এখন দুর্নীতির মূখশ উম্মচন হওয়াতে, ওই গ্রামের হালিম ডাক্তার নামের তাঁর কিছু অংশ ভুমি ক্রয় করে অন্য স্থানে । সেখানে আজ বুধবার দুপুরে ছদ্মনাম একজন ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা জমি “সয়েল টেষ্ট” করেন বলে জানাযায়।
এ বিষয়ে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ হাবিব মুন্সি, শাহিন মুন্সি, ইউসুফ মিয়া, হাফিজ মাতুকবরসহ ১০/১৫ জনে জানান, পশারিয়া বুনিয়ার একমাত্র জালিয়াতি চক্রের মূলহোতা সুভাষ চন্দ্র হালদার। তাঁর দুর্নীতির মূখশ উম্মচন হওয়াতে, তিনি নানা প্রকার প্রক্রিয়া খুঁজে বেড়াচ্ছেন। তাঁরা বলেন, প্রতিষ্ঠান একজনের নামে করা, সে প্রতিষ্ঠান তিনি জালিয়াতি করে, সরকারী অর্থ লুটপাট করেন । তাঁর বিরুদ্ধে সঠিক ভাবে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করে। সুভাষকে অচিরেই গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হউক বলে জানান তাঁরা ।
এবিষয়ে সুভাষ চন্দ্র হালদারকে মুঠফোনে জানার চেষ্টা করলে, তার মোবাইল ফোন অনেকবার ট্রাই করে বন্দ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে আব্দুস্ ছালাম মিয়া জানান, স্কুল জালিয়াতি চক্রের মূলহোতা সুভাষ চন্দ্র হালদার । তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার জন্য, পিরোজপুর বিজ্ঞ আদালতে একটি জালিয়াতি মামলা প্রদান করেন বাদী শাহ আলম নামের এক ব্যক্তি। এবিষয়ে আমিও তৎপর রয়েছি জালিয়াতি চক্রকে আইনের আওতায় আনার জন্য। তিনি বলেন, যারা সরকারী কাজে দুর্নীতি প্রতারণা করেন। তাঁরা এদেশের সঠিক নাগরিক না। তাঁরা মূলত সরকার বিরোধী। এবিষয়ে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটু কড়া নজরধারী থাকলে। অবশ্যই তাঁদেরকে অচিরেই আইনের আওতায় আনবেন বলে জানান তিনি।
বাদী শাহ্ আলম জানান, আমাদের নিজেস্ব ভুমিতে স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করি। এরিমধ্যে সুভাষ নামের একটি চক্র স্কুলের মূল কাগজ পত্রাদি জালিয়াতি করে। আমাদের প্রতিষ্ঠানটি তাঁদের নামে নেওয়ার জন্য অনেক প্রক্রিয়া অবলম্বন করছেন। তাই আমি সঠিক আইনি ব্যবস্থা পাওয়ার জন্য, জেলা বিজ্ঞ আদালতে একটি জালিয়াতি মামলা প্রদান করে থাকি বলে জানান তিনি। এধরনের তাঁদের বিরুদ্ধে প্রতারণা মূলক মামলা দায়ের করাতে, আমাকে তাঁদের অনেক সন্ত্রাসীরা মুঠফোনে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করেন।
থানার (টিও) নাসির উদ্দিন খলিফা বলেন, আমি ১৬৫নং দক্ষিণ পূর্ব পশারীবুনিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেছি। যার সম্পূর্ণ সত্যতা পাওয়া গেছে। আমি স্কুল পরিদর্শন করে হাতে গোনা কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রি পেঁয়েছি। এধরনের রিপোর্ট প্রদান করে, সকল দপ্তরে আমার ফাইলটি উঠিয়ে দিয়েছি। এবং এখন বলছেন সরেজমিনে কোন স্কুল নেই। না থাকলে আমি আবার ৩ অক্টোবর স্কুল খোলার দিন পরিদর্শন করে, আবারও এই রিপোর্ট প্রদান করবো বলে জানান তিনি। আরও বলেন, এবিষয়ে শুনেছি কোর্টে জালিয়াতি মামলা হয়েছে। এবং আমাকে কোর্ট থেকে যে নির্দেশনা দিবে আমি, সে নির্দেশনা অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো বলে জানান তিনি।
উপজেলার নির্বাহী অফিসার মো: নাজমুল আলম বলেন, আমি সরকারী কাজের দেখশোনের জন্য সীমাবদ্ধ রয়েছি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি হউক আর যাই হউক সকল প্রকার দেখার দায়িত্ব আমার। তাকে সরেজমিনে স্কুল নেই ও শিক্ষকের বিল উত্তালনের কথা বললে, তিনি নানা প্রকার অজুহাত দিয়ে মুঠফোনে কথা বলা অনিহা প্রকাশ করেন।