আমিরুল ইসলাম কবিরঃ
গত ১৬ মার্চ রাতে দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাটের খোদাদাতপুর গ্রামের ভোতরা দিঘীপাড়া এলাকায় স্বামী ইউসুফ আলীর বসতবাড়ীতে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে নববধূ শারমিন আক্তার ওরফে মাফিয়ার হত্যাকারী স্বামী, শ্বশুর,শ্বাশুড়ি ও ননদকে দ্রুত গ্রেফতার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
৩০ মার্চ বুধবার বিকালে ঘোড়াঘাট পৌর শহরের শহীদ মিনার চত্বরে স্থানীয় সচেতন মহল ও শারমিন আক্তার মাফিয়ার আত্মীয় স্বজনের অংশগ্রহনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে শারমিনের হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবী জানিয়ে বক্তব্য রাখেন,নিহত শারমিনের বাবা মাহবুব মিয়া,মা শিউলী বেগম,বড় ভাই সাগর ও ছোট ভাই শাওন,খালা তানজিলা বেগম প্রমুখ।
শারমিনের বাবা মাহাবুব মিয়া কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার মেয়েকে হত্যা করে ফাঁসীতে ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা বলে চালানোর পায়তারা করছে হত্যাকারীরা ৷ রাত ১০টার দিকে মেয়ে ফোন করে আমাকে জানালো বাবা আমার স্বামী আমাকে মারপিট করতেছে এ সময় হত্যাকারী জামাই আমার মেয়ের হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে বলে আপনার মেয়ের সাথে আর কথা বলা যাবে না ৷ পরেরদিন সকাল ১০টায় মেয়ের ননদ ফোন দিয়ে জানালো যে আপনার মেয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে ৷ অথচ পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় পায়নি ৷ এ বিষয়ে থানা পুলিশের ভুমিকা রহস্যজনক বলে দাবী করছেন নিহতের পরিবার ৷
শারমিনের মা বলেন,থানা পুলিশ বিষয়টি নিয়ে বারংবার আপোষ মিমাংসা করার জন্য তাগিদ দিচ্ছেন ৷ কি এমন স্বার্থ জড়িত থানা পুলিশের যে আমরা অশিক্ষিত মানুষ বলে আমাদেরকে বাদী করে হত্যা মামলা না নিয়ে প্রথমে ইউডি মামলা দায়ের করলেন ৷ আর এখন হত্যাকারীদের কোন জিজ্ঞাসাবাদ না করেই তারা নিশ্চিত করে বলছেন যে এটা আত্মহত্যা ছাড়া কিছুই নয় ৷ পক্ষান্তরে আমাদেরকে মিমাংসা করার জন্য প্রস্তাব করেই যাচ্ছেন ৷
শারমিনের ভাই শাওন বলেন, এখন আমাদেরকে বিভিন্ন মারফত জানানো হচ্ছে যে, পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট নাকি তারা টাকা দিয়ে পরিবর্তন করে নিয়েছে ৷ তাই এ বিষয়ে আর কখনো প্রমাণ করা সম্ভব নয় যে এটি আত্মহত্যা ৷ অথচ নিহতের গায়ে অসংখ্য নির্যাতনের দাগ ছিল ৷ যা ভিডিও সহ ছবি তুলে সংরক্ষন করা আছে ৷
এ সময় বক্তারা আরো বলেন, যেহুতু ময়না তদন্তের রিপোর্ট পরিবর্তন করার জন্য হত্যাকারীরা পায়তারা করছে তাই শারীরিক আঘাতের চিহ্ন অনুযায়ী যদি রিপোর্টের সঠিকতা না থাকে তবে লাশটি পুনঃ ময়না তদন্তের জন্যও তারা জোর দাবী জানিয়েছেন ৷ অবশেষে দ্রুত নববধূ শারমিনের হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী জানান তারা ৷
উল্লেখ্য,নিহত নববধূ শারমিন আক্তার মাফিয়া পলাশবাড়ী পৌর শহরের বৈরীহরিণমারী গ্রামের মাহবুব মিয়ার কন্যা। গত ১৪ ফেব্রুয়ারী বিয়ে হওয়ার ১ মাস ১ দিনের মাথায় গত ১৭ মার্চ সকালে স্বামীর বসতঘর হতে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এখানে আরো উল্লেখ্য যে,ধুরন্ধর ইউসুফ আলীর প্রথম স্ত্রীও একইভাবে মৃত্যু হয়েছিল বলে এলাকাবাসীসূত্রে জানা যায়। সচেতন অভিজ্ঞ মহলের দাবী ইউসুফ আলী পরিকল্পিতভাবে তার দু স্ত্রীকে কৌশলে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে বারবার পার পেয়ে যাচ্ছে যা রহস্যজনক। নিহত শারমিনের দরিদ্র অসহায় পরিবার ও সচেতন মহল শারমিন হত্যা রহস্য উদঘাটনে পিবিআই সহ চৌকস পুলিশের তদন্তে বেড়িয়ে আসতে পারে দুটি রহস্যজনক মৃত্যু জট।