নিজস্ব প্রতিবেদক:
লোকসানের অজুহাতে দেশের ৬টি চিনিকল বন্ধের জনস্বার্থ বিরোধী সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে চিনিকলগুলো খুলে দিয়ে আখমাড়াই শুরু করার জোর দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া।
মঙ্গলবার (৮ ডিসেম্বর) গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় এ দাবী জানান।
তারা বলেন, চিনিকল বন্ধে সরকারের এই আকস্মিক সিদ্ধান্তের ফলে লক্ষ লক্ষ আখচাষি এবং হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মচারী চরম বিপাকে পড়েছে। তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে হতাশা এবং অনিশ্চয়তা। বেকার হতে হবে শ্রমিক কর্মচারীরা। সরকারের এই অমানবিক ও অদূরদর্শী সিদ্ধান্তে আখচাষিসহ চিনি কলে খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে বাজারে চিনির সংকটও সৃষ্টি হবে।
নেতৃদ্বয় সরকারের এখন ৬টি চিনিকল বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণাকে জনস্বার্থ বিরোধী হিসাবে আখ্যায়িত করে বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি চিনিকল বন্ধের কারণে উত্তরাঞ্চলে আখের আবাদ একেবারে উঠে যাবে, যার মারাত্মক প্রতিক্রিয়া পড়বে ওই অঞ্চলের পরিবেশ-প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্রের ওপরও। আখ প্রচন্ড আঘাতসহিষ্ণু উদ্ভিদ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাব মোকাবিলায় এর সক্ষমতা অন্য ফসলের চেয়ে অনেক বেশি। খরা, বন্যা, জলোচ্ছ্বাসেও ফসলটি কৃষককে একেবারে বঞ্চিত করে না। আখ চাষ উঠে গেলে উত্তরাঞ্চলে জ্বালানি কাঠের জন্য প্রচুর পরিমাণে বৃক্ষ নিধন হবে, যা অঞ্চলটির মরুময়তাকেই ত্বরান্বিত করবে।
তারা আরো বলেন, স্বাধীনতার ৪৯ বছরে একটি চিনিকলকেও আধুনিকায়ন করা হয়নি। পণ্য বহুমুখীকরণের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সুগারবিট থেকে চিনি উৎপাদন, কো-জেনারেশনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং র-সুগার থেকে রিফাইন চিনি উৎপাদনের মতো প্রকল্পগুলো এখনো আলোর মুখ দেখেনি। বাংলাদেশে সুগারবিট থেকে চিনি উৎপাদন কোনোকালেই সফল হবে না। তারপরও ঠাকুরগাঁও সুগার মিলে সুগারবিটভিত্তিক প্রকল্প গ্রহণের কোনো অর্থ হয় না। ভারতে দৈনিক ১৫০০ টন মাড়াই ক্ষমতাসম্পন্ন চিনিকল যেখানে চালানো হয় ৩০০ থেকে ৪০০ লোকবল দিয়ে, বাংলাদেশে একই মাড়াই ক্ষমতাসম্পন্ন মিল চালানো হয় হাজার-বারশো কর্মচারী দিয়ে। তাহলে কীভাবে লাভজনক হবে চিনিশিল্প?
নেতৃদ্বয় বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে গরিব কৃষক ও মেহনতি শ্রমিকদের ভূমিকাই ছিল প্রধান। স্বাধীনতাযুদ্ধ ছাড়াও ১৯৫৪ সালের যুক্ত ফ্রন্টের নির্বাচন, ৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ৭০-এর নির্বাচনে দেশের মিল-কারখানার শ্রমিকরাই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তারাই মিছিল-স্লোগানের মাধ্যমে প্রকম্পিত করে রাখে রাজপথ। ছাত্রদের সঙ্গে আন্দোলনে শরিক হয়ে এই শ্রমিক-মজদুররাই জেলের তালা ভেঙে বাঙালির আশা-ভরসার প্রতীক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্ত করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু কৃষক ও শ্রমিকদের মঙ্গলের কথা চিন্তা করেই তিনি ১৯৭২ সালে দেশের সব চিনিকলকে জাতীয়করণ করেন। দুঃখের বিষয়, সেই মহান নেতার জন্মশতবার্ষিকীতেই চিনিকলগুলো বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হলো। কৃষক ও শ্রমিকের স্বার্থ বিঘ্নিত হলো। তাদের জীবনে দেখা দিল চরম অনিশ্চয়তা। এটা জাতির জন্য বড় বেদনার বিষয় হয়েই ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়ে থাকবে।