নিজস্ব প্রতিবেদক♦♦
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুর পশ্চিম বেহাকৈর এলাকায় রমজান (৪৫) ও মঞ্জু (৪৫) নামের দুই ব্যক্তিকে সন্ত্রাসী মোমেন বাহিনী বেধড়ক মারপিট এবং কুপিয়ে রক্তাক্ত্য জখম অবস্থায় তাঁদের সঙ্গে থাকা মোবাইল-টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়।
গত (২ এপ্রিল) রবিবার রাত ১২টার সময় ব্যান্ডিসমীল পশ্চিম বেহাকৈর এলাকার খান মসজিদ বাবুর দোকানের সংলগ্নে সন্ত্রাসী মোমেন (৩৫) পিতা আমির হোসেন,সাং সোনাপুর সহ ১০/১২ জনের একটি দল সিএনজি যোগে হঠাৎ এসে রমজান ও মঞ্জুকে এলোপাতাড়ি মারপিট করে সঙ্গে থাকা মোবাইল-টাকা পয়সা নিয়ে চক্রটি পালিয়ে যায়।
এমতাবস্থায় এলাকাবাসী সহ পরিবারের লোকজন তাঁদেরকে প্রাথমিক ভাবে কাঁচপুর এ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এসময় হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগীর অবস্থা অত্যন্ত খারাপ দেখে, উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ করেন। সুতরাং পরিবারের লোকজন তাঁদের দুইজনকে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যান বলে জানাগেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, সন্ত্রাসী টাইগার মোমেন এর নেতৃত্বে ১০-১২ জনের একটি দল সল্লু মিয়ার সিএনজি যোগে এসে রমজান (৪৫) স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস, সাং পূর্ব বেহাকৈর ও মঞ্জু (৪৫) পিতা অজ্ঞাত নামের দুই ব্যক্তিকে বেধড়ক মারপিট করে সঙ্গে থাকা মোবাইল-টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়ে চলে যায়। তাঁদের এ সন্ত্রাসী কার্মকান্ডের ঘটনায় সাধারণ মানুষও তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর সাহস পাচ্ছে না। কারণ মোমেন বাহিনী কাঁচপুর এলাকার কূখ্যাত একজন সন্ত্রাস। তিনি এলাকায় প্রকাশ্য ইয়াবা, ফেন্সি, বাংলা মদ, গুলি ও বিদেশি পিস্তলসহ আটক হয়েছে একাধিকবার। তিনি বেশিদিন জেল খানায় থাকেন না। কিছুদিনের মধ্যে বেড়িয়ে। আবারও বেপরোয়া হয়ে পরেন।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, মোমেন মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে মানুষ মেরে ফেলা, ছিনতাই চক্রের টিমের মূলহোতা, দেশি ও বিদেশী অস্ত্র বিক্রি, মাদকের ডিলার এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সংযোগস্থল কাঁচপুর এলাকায় মাদক ব্যবসা, তেলচুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত শতাধিক দুষ্কৃতিকারীদের সমন্বয়ে মোমেনের নেতৃত্বে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে উঠেছে। এধরনের অবৈধভাবে ব্যবসা বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা পাহাড় গড়েছেন তিনি। এমন কার্মকান্ডে জড়িত আছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সহ এলাকার একাধিক আওয়ামী পরিচয়দানকারী নেতাকর্মীরা।
এলাকার মূর্তিমান আতঙ্কের নাম এ ‘মোমেন বাহিনী’। এ বাহিনীর ভয়ে এলাকার কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে এ সন্ত্রাসী বাহিনী গাড়ি থেকে জ্বালানি তেল চুরি, পরিবহনে ছিনতাই ও ডাকাতি এবং মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত।
ভূক্তভোগী রমজান জানান, আমি রাত ১২টার দিকে ছেলের ঔষধের জন্য ফার্মেসীতে গিয়েছিলাম। এমন অবস্থায় আমাকে একা পেয়ে সন্ত্রাসী মোমেন বাহিনী দেশীয় অস্ত্র, রড, সুইসগিয়ার, ধারাল রামদা ও চাপাতি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারপিট করতে থাকে। আমার শরীরের বিভিন্ন অংশ মারপিট করে ক্ষত সৃষ্টি ও রক্তাক্ত্য জখম করেন। এবং সাথে থাকা মোবাইল-টাকা পয়সা নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।
এবিষয়ে আহত রমজানের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস সাংবাদিকদের জানান, আমার স্বামী রমজান ও তাঁর সাথে থাকা মঞ্জু নামের দুইজনকে মারপিট করে গুরুত্বর আহত করে। এমতাবস্থায় স্থানীয় এ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাই। এখন তাঁদের অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। তাঁদের উন্নত চিকিৎসার জন্য এখন মোটা অঙ্কের টাকা প্রয়োজন। কিন্তু এতো টাকা পয়সা কোথায় পাব। এই এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাস মোমেন খুবই একজন খারাপ মানুষ। তাঁর অত্যাচারে আমরা মূখ খুলতে পারি না। গতকালকে আমি নিজে বাদী হয়ে মোমেন গংদের বিরুদ্ধে সোনারগাঁ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করি। এর প্রেক্ষিতে থানার এসআই ওবায়দুল সরেজমিন তদন্ত করে সত্যতা নিশ্চিত করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন প্রকার আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।এর কারণে আমরা আরও আতঙ্কে আছি।
তিনি বলেন, স্থানীয় প্রশাসন একটু সঠিক নজরদারি করলে, আমাদের সমাজে এ অবস্থা হয় না।
জান্নাতুল বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সন্ত্রাসী মোমেনকে আইনের আওতায় এনে ক্রস ফায়ারের ব্যবস্থা করা হউক।
এবিষয়ে এসআই ওবায়দুল জানান, আমি সরেজমিন তদন্ত করে এসেছি এবং সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে। সুতরাং এখন ওসি স্যার মামলা রেকর্ড করলে। আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, আমার সম্পূর্ণ বিষয়টি নলেজে নেই ! যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে অভিযোগদাতাকে সকালে থানায় পাঠিয়ে দেন। মামলা রেকর্ড করে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো জানান তিনি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার জানান, ভাই আমি সোনারগাঁ থানার ওসি সাহেবকে সঠিকভাবে আইনী ব্যবস্থার জন্য বলে দিচ্ছি।